নীড় পাতা / জনদুর্ভোগ / স্বজনপোষণের অভিযোগ! সাড়ে ছয় মাস বন্ধ ছিল জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম

স্বজনপোষণের অভিযোগ! সাড়ে ছয় মাস বন্ধ ছিল জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম

বিশেষ প্রতিবেদক:
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ৪নং পিপরুল ইউনিয়নে ছয় মাসের অধিক সময় বন্ধ ছিল জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের কাজ। সম্প্রতি শুরু হলেও দেখা দিয়েছে অনিশ্চতার। নারদ বার্তার অনুসন্ধানে বেশ কিছু অসংগতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠে এসেছে।

মূলতঃ ইউনিয়ন পরিষদ সচিব রকিব উল্লাহ গতবছরে চাকুরি থেকে অবসরে যান। এরপর থেকেই জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম নিয়ে শুরু হয় টানা হ্যাঁচড়া। এক পর্যায়ে ২০১৯ এর ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বন্ধ হয়ে যায় এই কার্যক্রম। সেবা গ্রহিতারা পড়ে যান বিপদে। সব থেকে বড় সমস্যায় পড়ে পিপরুল ইউনিয়নের প্রায় ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা যারা ২০২০ সালে নতুন ভর্তি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সকলকে সাময়িক প্রত্যয়ন পত্র ধরিয়ে দিয়ে দায় সেরেছে ইউনিয়ন পরিষদ। যা শুধু মাত্র অত্র ইউনিয়নে কার্যকর।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সচিব রকিব উল্লাহ অবসরে যাওয়ার পর জন্মনিবন্ধন কার্যক্রমের আইডি-পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে চান বর্তমান সচিব সাইফুল। এ মর্মে উচ্চ মহলে আবেদনও করেন। নতুন আইডি-পাসওয়ার্ড পেলেও কোন একটি ত্রুটির কারণে কাজ করতে পারেন না সাইফুল। এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা ফারুক হোসেনের বাড়ি নাটোর জেলার বাইরে। সম্পর্কে তিনি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিনের জামাতা। অথচ উদ্যোক্তা হতে হলে স্ব স্ব ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার নিয়ম রয়েছে। স্বজনপোষণের সুযোগ নিয়ে জন্ম-মৃত্যু সনদে বড় ধরনের টাকা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা হয় বলে সূত্র নিশ্চিত করে। স্বজনপোষণ বা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বাইরেও রয়েছে জনদুর্ভোগের বিষয়টি। নিজেদের স্বার্থের জন্য প্রয়োজনীয় একটি সেবা থেকে দীর্ঘ দিন বঞ্চিত রয়েছে সাধারণ মানুষ, যা আবারও যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এ ব্যাপারে পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদ সচিব সাইফুলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নারদ বার্তাকে জানান, ‘সারাদেশে সচিবদের নতুন করে আইডি পাসওয়ার্ড দিবে সরকার। বর্তমানে আমি আগের সচিবের আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে কাজ করছি। তবে এটি বন্ধও হয়ে যেতে পারে। নতুন আইডি পাসওয়র্ড পেলে আর কোন সমস্যা হবে না। একটা সময় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের কাজ সচিবদেরই দায়িত্বে ছিল যা পরবর্তীতে উদ্যোক্তাদের দেয়া হয়, এরপর আবার এ দায়িত্ব সচিবদের দেয় সরকার। প্রায় সাড়ে ছয় মাস এ কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর আমি ডিসি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলতি মাসের এক তারিখ থেকে আবার তা চালু করেছি।’

প্রতিটি মানুষের জরুরী এ সেবাগুলো কেন নিশ্চিত করতে পারল না পিপরুলের স্থানীয় সরকার সে ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে দানা বেঁধেছে নানা রকম প্রশ্ন। ব্যক্তিস্বার্থ নাকি স্বজনপোষণ! তা সে যা-ই হোক না কেন, সব কিছুর ঊর্দ্ধে তো জনসেবা!

পিপরুল ইউনিয়নের একজন ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখে তার মেয়ের জন্ম সনদপত্রের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে যান তিনি। সেখানকার উদ্যোক্তা বলেন পনের দিন পরে কার্যক্রম শুরু হবে। পরবর্তী সময় ইউনিয়ন পরিষদে গেলে আবারো ভুক্তভোগীকে বলে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। এভাবেই কেটে যায় সাড়ে ছয়টি মাস।

পিপরুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিনের সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে নারদ বার্তাকে জানান, ‘বিষয়টি আজ এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে সচিব পরিবর্তনের কারণে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সমস্যা সমাধানের। আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম চালু হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।‘

এদিকে নারদ বার্তাকে সচিব সাইফুল জানান, দীর্ঘ ছয় মাসের বেশি সময় কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর চলতি মাসের এক তারিখ থেকে আবার কাজ শুরু হয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদের উদ্দ্যোক্তা ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন, ‘সচিব পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সার্ভারের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন হয়। নতুন করে আবেদন করা হয়েছে খুব দ্রুত আমরা জন্ম সনদের কাজ করতে সক্ষম হবো।’

এতো গেলো জন্ম-মৃত্যু সনদ পাওয়ার জটিলতা। অপরদিকে জন্মনিবন্ধন সংশোধনের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে চেয়ারম্যান ও সচিবের দেয়া তথ্যের গরমিল থেকে সাধারণ মানুষের শংকা আবার কি বন্ধ হবে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম! যেখানে জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রতিটি মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন নারদ বার্তাকে এ ব্যাপারে জানান, ‘আমি যদিও নতুন যোগদান করেছি তারপরও বিষয়টি জানার পরই সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি যেন খুব দ্রুতই কার্যক্রমটি পুনরায় চালু হয়। সেই মোতাবেক চলতি মাসের এক তারিখ থেকে কাজ শুরু হয়েছে।’

পিপরুল ইউনিয়নের সেবাগ্রহিতাদের ধারণা, পিপরুল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান কলিমউদ্দিন এবং সচিবের সাথে অর্থ আদান প্রদানের কোনো একটি ঝামেলার কারণে দীর্ঘদিন হলো ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম-মত্যু নিবন্ধন সনদপত্রের কার্যক্রম বন্ধ আছে। বর্তমানে জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া সত্বেও ব্যক্তি স্বার্থ কিংবা স্বজনপোষণের দায়ভার কেন সাধারণ জনগণের ওপর বর্তাবে সে প্রশ্ন আজ সকলের। সাধারণ মানুষের দাবি বিষয়টি অত্যন্ত গভীরভাবে তদন্ত করা হোক।

আরও দেখুন

অবশেষে উচ্চ আদালতের আদেশে প্রতীক পেলেন ফরিদা!

নিজস্ব প্রতিবেদক:উচ্চ আদালতের আদেশে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে প্রতীক বরাদ্দ পেলেন …