বৃহস্পতিবার , মে ৯ ২০২৪
নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / নাটোর সদর / নাটোরে মুক্তিযোদ্ধার নিজ জমিতে ভবণ নির্মাণে বাধা দেবার অভিযোগ!

নাটোরে মুক্তিযোদ্ধার নিজ জমিতে ভবণ নির্মাণে বাধা দেবার অভিযোগ!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নিজ নামে দলিল থাকার পাশাপাশি রেকর্ডেও নাম ও জমির পরিমান উল্লেখ থাকায় আপন চাচা আব্দুল খালেকের কাছ থেকে ১৯৭৩ সালে ১২ শতক জমি কেনেন মা কর্পূননেছা। ঐ জমির মধ্যে ১৯৮৬ সালে পুলিশ লাইন্স ৫ শতক জমি অধিগ্রহণ করে টাকা পরিশোধ করে। ৪ ছেলে আর ৬ মেয়ে রেখে ১৯৯০ সালে বাবা আব্দুর রাজ্জাক মারা যান। এরপর ১৯৯৭ সালে মারা যান মা। মায়ের অবশিষ্ট ৭ শতক জমির ওয়ারিশ হিসাবে ভাই আওলাদ হোসেন অপর এক ব্যাক্তির কাছে ২শতক ৮০ লিংক জায়গা বিক্রি করলেও অন্যান্য ভাই বোনদের জায়গা কিনে নেন মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন। এতে নিজ ওয়ারিশান অংশ ও ভাইবোনদের কাছ থেকে কেনা মিলিয়ে ওই আরএস ১২৪৬ দাগে তার জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ শতক ২০ লিংক। স¤প্রতি তিনি ওই জমিতে ভবন নির্মাণ করতে গেলে বাধা দেয় জেঠাতো ভাতিজা। তাদের দাবী, ওই জমিতে ভবণ নির্মাণে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ তার কোন প্রমাণ বা আদেশ কপি দেখাতে পারেননি। ওই জমিতে তাদের পিতার অংশ রয়েছে দাবী করলেও তার জন্য বিক্রেতা আব্দুল খালেক বা তার কোন ওয়ারিশদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা আইনগত ব্যবস্থা নেননি। করেননি কোন রেকর্ড সংশোধনীর মামলাও। ক্ষতিগ্রস্থ মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের দাবী, তার কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করলে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। আর এতেই প্রভাব খাটিয়ে আদালতের মিথ্যা দোহাই দিয়ে তার ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়েছে।

সরেজমিনে শহরের বড়হরিশপুর গিয়ে দেখা যায়, নিজ বাড়ির সামনেই ওই নির্মাণাধীন ভবন। ভুক্তভোগী আমজাদ হোসেন জানালেন, তার চাচা আব্দুল খালেকের কাছ থেকে মায়ের কেনা সম্পত্তির অধিগ্রহণ করা ৫ শতক জমি রয়েছে পুলিশ লাইন্সের মধ্যে। মায়ের উত্তরাধিকার হিসাবে তার ভাই যে ২ শতক ৮০ লিংক জায়গা বিক্রি করেছেন, সেই জায়গায় জমি কেনা এনামুল হকরা মার্কেট তৈরী করে ভাড়া দিয়েছেন। ওই দুই জায়গায় কোন বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়নি। তার অংশের ৪ শতক ২০ লিংক জায়গায় তিনি ২০১০ সালে আধাপাকা মার্কেট আর গ্যারেজ করে ভাড়া দিলে তাতেও কোন প্রতিবন্ধকতা বা বাধা দেয়া হয়নি। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ওই আধাপাকা মার্কেট ভেঙ্গে তিনি চারতলা ভবন নির্মাণ শুরু করার পর তাতে বাধা দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে জেঠাতো ভাইয়ের ছেলে এমদাদুল হক ও আকরাম হোসেনরা।

এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন জানান, চাঁদা দাবী করা ওই ব্যক্তিরা তার বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মিথ্যা মামলা দেয়। এর মধ্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের দায়ের করা ৪টি মামলা এবং সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে নির্মাণ কাজে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মামলা খারিজ হয়েছে।

বর্তমানে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষদের জেলা জজ আদালতে মিস আপীল মামলা এবং অপর একটি মামলা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চলমান থাকলেও ভবন নির্মাণে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। অথচ ওই কথা বলে তার ভবণ নির্মাণ বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিপক্ষ চাঁদা দাবী কারী এমদাদুল হকরা। এতে তিনি অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হয়েছেন দাবী করে অনতিবিলম্বে ওই চাঁদাদাবী করা এমদাদুল হকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান। একই সাথে যাতে তিনি কোন বাধা ছাড়াই ভবন নির্মাণ করতে পারেন এজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি জোর দাবী জানান।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযুক্ত এমদাদুল হক ও আকরাম হোসেন ভবন নির্মাণে বাধা দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করলেও চাঁদা দাবীর অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তাদের বাবা দলিলে সম্পত্তি পেলেও মাপজোখ করে তা বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা ওই ভবণ নির্মাণে বাধা দিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞাপত্র দেখতে চাইলে আদালতের ইনজাঙ্কশন জারীর আদেশ কপি দেখাতে পারেননি তারা। তবে ওই জমিতে যাতে কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা না হয় সে ব্যাপারে তাদের ১৪৪ ধারা চাওয়ার আবেদনপত্র দেখিয়ে ওই কাগজকেই জমির ভবন নির্মাণের নিষেধাজ্ঞা দাবী করেন তারা।

এক প্রশ্নের জবাবে এমদাদুল ও আকরাম জানান, ওই জমি বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আব্দুল খালেকদের হলেও তারা মারা গেছেন৷ আমজাদ হোসেন ওই জমি তার মায়ের কেনা হিসাবে উত্তরাধিকারের পাশাপাশি ভাই-বোনদের কাছ থেকে কেনা হলেও ওই জমি তার দখলে আছে এই কারণে তারা ভবণ নির্মাণে বাধা দিয়েছেন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাটোর সদর থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ জানান, তার জানামতে ওই জমির ওপর আদালতের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে ১৪৪ ধারায় আবেদনপত্রটি পাওয়ার পর তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলেন যাতে ওই জমিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলার কোন অবনতি না হয়। তিনি আরও জানান, বিবাদমান উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে কাগজপত্র দেখে বিবাদমান বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন তিনি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওসমাণ গণি ভুঁইয়া জানান, ওই জমিটি দীর্ঘদিন থেকেই আমজাদ হোসেনরা ভোগ দখল করছেন। স¤প্রতি নিজের কেনা জমিতে মার্কেট নির্মাণ করতে গেলে ওই মুক্তিযোদ্ধার কাজ বন্ধ করার বিষয়টি জেনে তিনি মিমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে তার নিজ দখলীয় খাজনা-খারিজ করা জমিতে এভাবে ভবন নির্মাণে বাধা দেয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।

আরও দেখুন

অবশেষে উচ্চ আদালতের আদেশে প্রতীক পেলেন ফরিদা!

নিজস্ব প্রতিবেদক:উচ্চ আদালতের আদেশে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে প্রতীক বরাদ্দ পেলেন …