নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / ঝুটের কাপড়ে ভাগ্য বদল

ঝুটের কাপড়ে ভাগ্য বদল



নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বীরকুৎসা রেলস্টেশন সংলগ্ন গ্রাম দুর্লভপুর। গ্রামের ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে একটি করে কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি হচ্ছে গার্মেন্টসের ঝুট কাপড়ের লেপের কভার। এ যেন একটি বাড়ি নয় একটি কারখানা। এসব কারখানায় কাজ করছে ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষসহ নানা বয়সী মানুষ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে এ কাজ করে ভালো আয়-রোজগার করছে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এ শিল্পের সাথে জড়িত গ্রামের প্রতিটি সংসারে লেগেছে সচ্ছলতার ছোঁয়া। প্রায় সবাই এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। শুধু তাই নয়, প্রতি শীত মৌসুমে দুর্লভপুর গ্রাম ঘিরে চলে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকার ব্যবসা। ফলে ঝুটের কাপড়ে ভাগ্য বদলে যাচ্ছে শতশত নারী-পুুরুষের ।

সরজমিনে এই গ্রামটি ঘুরে দেখা যায়, ঘরে ঘরে দিন-রাত চলছে সেলাই মেশিনের খট খট শব্দ। এক টুকরো ঝুট কাপড়ের সঙ্গে আরেক টুকরোর জোড়া লাগিয়ে তৈরি হয়ে যাচ্ছে একএকটি লেপ কভার। গ্রামের অনেকেই জানালেন, এখানকার তৈরি ঝুট কাপড়ের লেপের কভারের চাহিদা রয়েছে সারাদেশেই। প্রতি শীত মৌসুমে রাজধানী ঢাকা, কুমিল­া, পাবনা, শরীয়তপুর, যশোর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে ঝুটের লেপের কভার কিনে নিয়ে যান।

দুর্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা মোবারক আলী জানান, তিনি আগে রিকশাভ্যান চালাতেন। উদয়াস্ত পরিশ্রম করে যে আয় হতো, তা দিয়ে সংসার ভালোভাবে চলত না। গ্রামে ঝুট কাপড়ের ব্যবসা শুরু হওয়ার পর ভাগ্য ফিরেছে তার। এখন স্বামী-স্ত্রী দু’জনই কাপড় সেলাই করেন। একবেলা রিকশা চালান। বাঁকিটা সময় ঝুটের কাপড় মেশিনে জোড়া লাগানেরা কাজ করে। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে। সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। এই গ্রামে এখন আর কারও অভাব নেই।

ওই গ্রামের কলেজ ছাত্র হামিদ সরকার জানান, তিনি নাটোরের নলডাঙ্গা শহীদ নাজমুল হক কলেজে পড়েন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি সেলাই মেশিনে ঝুটের লেপের কভার বানিয়ে যা আয় করেন, তা দিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি বাবা-মাকে সংসারে সাহায্য করা হয়।

স্কুলছাত্রী রুমা এবং কোহেলী খাতুন জানান, স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে সেলাই করে নিজের প্রাইভেট পড়ার খরচ জোগান। প্রতিদিন দেড়’শ থেকে দুই’শ টাকার কাজ করেন তারা

দুর্লভপুর গ্রামের গৃহবধূ রশিদা বেগম ও পুতুল রানী জানান, গোটা গ্রামের অধিকাংশ নারী এখন সেলাইয়ের কাজ করে। কারও সংসারে অভাব-অনটন নেই। সুখেই কাটছে গ্রামের মানুষের দিন।

সেলাই শ্রমিক (দর্জি) আমজাদ হোসেন জানান, এই গ্রামে এখন কোনো বেকার নেই। কেউ কারখানায় সেলাই করছে। কেউ বা স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নেমে পড়েছে। কেউ সেলাই মেশিন কিনে শ্রমিক খাটাচ্ছে।

খাজুরা ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভুট্টো জানান, দুর্লভপুর গ্রামের প্রায় চারশ’ ঘরে এখন সেলাই মেশিন রয়েছে। বাড়ির নারী-পুরুষ সবাই মিলে সেলাই কাজ করে। নিন্ম আয়ের মানুষ ছাড়াও মধ্যবিত্ত পরিবারের সবাই সেলাই করে বাড়তি আয় করছে। এলাকায় ঝুট কাপড়ের ব্যবসা শুরু হওয়ার পর ঘরে ঘরে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে উঠেছে। তবে মূলধন সংকট ও অনুন্নত রাস্তাঘাটের কারণে ব্যবসা তেমন প্রসার পাচ্ছে না।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন মন্টু জানান, গত কয়েক বছরে এখানে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বীরকুৎসা রেলস্টেশনের চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে এই ঝুট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে মৌসুমে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকার কাপড় বেচাকেনা হয়।

ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন জানান, সারাদেশে এখানকার ঝুট কাপড়ের তৈরি পণ্যের চাহিদা থাকলেও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও মূলধনের অভাবে তা প্রসার পাচ্ছে না। তিনি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সহ ঋন সহায়তার দাবী জানান।

গ্রামটিতে লেপ কভার কিনতে এসেছেন ও দিনাজপুরের ফারুক মিয়া , বগুড়ার সুশান্ত কুমার ও চাঁপাই নবাবগঞ্জের কানসাটের বাবর আলী। তারা জানান, দামে কম আর টেকসই হওয়ার কারণে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রতি শীতের সময় তারা এখান থেকে লেপের কভার কিনে নিয়ে যান।

আরও দেখুন

অবশেষে উচ্চ আদালতের আদেশে প্রতীক পেলেন ফরিদা!

নিজস্ব প্রতিবেদক:উচ্চ আদালতের আদেশে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে প্রতীক বরাদ্দ পেলেন …