বৃহস্পতিবার , মে ৯ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / এক ঘণ্টার রাস্তা ১৭ মিনিটে পাড়ি

এক ঘণ্টার রাস্তা ১৭ মিনিটে পাড়ি

নিউজ ডেস্ক:

ভোগান্তির আরেক নাম ছিল মিরপুরের ইসিবি চত্বর আর কালশী মোড়। পাঁচ মিনিট দূরত্বের দুটি মোড় পাড়ি দিতে সময় লাগত কমপক্ষে আধা ঘণ্টা। কখনো তা ঘণ্টায় গিয়ে ঠেকত।

ইসিবি চত্বর থেকে কালশী মোড়, সাগুফতা ও মিরপুর ডিওএইচএস পর্যন্ত প্রশস্ত সড়ক আর ফ্লাইওভারের বদৌলতে বদলে গেছে মিরপুরের উত্তর-পূর্বের চিত্র। এখন সেখানে এক ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগছে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট।

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে নির্মিত ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ফ্লাইওভারের উদ্বোধন হলেও মিরপুরবাসী নিচের প্রশস্ত সড়কের সুফল ভোগ করছিলেন কয়েক মাস আগে থেকেই।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রশস্ত সড়ক ও নির্মিত ফ্লাইওভারে বদলে যাবে মিরপুরের ওই অংশের আগের চিত্র। বাড়বে যানবাহনের গতি। রেহাই মিলবে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি থেকে।

কালশী মোড়ে কথা হয় মোটরসাইকেল আরোহী আসাদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফ্লাইওভারে উঠে মাত্র দুই মিনিটেই ইসিবি চত্বর থেকে কালশী মোড়ে নেমেছি। আগে ইসিবি চত্বর থেকে কালশী মোড়ে আসতে সময় লাগত অন্তত আধা ঘণ্টা। রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে, ফ্লাইওভারও চালু হলো। এর ভালো সুফল পাবে মিরপুরবাসী।

dhakapost

পিকআপ চালক ইদ্রিস আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে রাস্তাটা ভাঙা ছিল। এখন রাস্তা অনেক বড় হয়েছে। আলাদা আলাদা লেন হয়েছে, লোকাল গাড়িও চলতে পারবে। তারমধ্যে ফ্লাইওভারও চালু হলো আজ। কালশীতে আগে যানজট লেগে থাকত। এখন সব ক্লিয়ার। যানজট থাকবে না। সড়কে গতি আসবে। দূরের পথ যেতে সময়ও লাগবে কম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা।

প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৩৩৫ কিলোমিটার, যা শুরু হয়েছে বাউনিয়া বাঁধ এলাকায়। কালশী মোড়ে এসে ফ্লাইওভারের একটি অংশ বাম দিকে মোড় নিয়ে পল্লবীর দিকে গেছে। অন্য অংশটি চলে গেছে মিরপুর ডিওএইচএসের দিকে। মূল উড়ালসড়ক চার লেনের। ওঠানামার জন্য এই ফ্লাইওভারে পাঁচটি র‌্যাম্প রয়েছে।

dhakapost

ফ্লাইওভারের নিচে প্রশস্ত করা রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার, যা মাটিকাটা এলাকার ইসিবি চত্বর থেকে শুরু হয়ে কালশী মোড় হয়ে মিরপুর ডিওএইচএসে চলে গেছে। সড়কের মোট প্রস্থ ১২২ ফুট। এর মধ্যে যানবাহন চলাচলের মূল রাস্তাটি ৩৬ ফুটের। ১২২ ফুটের গোটা সড়কে মোট ছয়টি লেন রয়েছে। উভয় পাশে অযান্ত্রিক যানের (সাইকেল) জন্য আছে ১০ ফুটের পৃথক লেন। সড়কের পাশে আছে ছয় ফুটের ফুটপাত। আর রাস্তার মাঝে চার লেনের ফ্লাইওভার।

ইসিবি থেকে এ সড়কপথে রাজধানীর মিরপুরের কালশী, মাটিকাটা, সাগুফতা ও মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় চলাচলকারী মানুষ বেশি সুবিধা ভোগ করবেন। মিরপুর থেকে বিমানবন্দর, উত্তরা, গুলশান, বনানী ও রামপুরা যাতায়াতে সময় বাঁচবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

মিরপুর পল্লবী এলাকার বাসিন্দা তানজিমুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যবসার কারণে প্রতিদিন মতিঝিল যেতে হয়। মিরপুর-১০, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও ও বিজয় সরণীতে যানজট কিংবা গাড়ির চাপ বেশি থাকে। বনানী হয়ে যেতে মোড়ে মোড়ে যানজটে পড়তে হয়। বিশেষ করে বাসায় ফেরার পথে দুর্বিসহ যানজটের কারণে শুধু কালশী মোড়েই ২০ থেকে ৩০ মিনিট বসে থাকতে হতো। নিত্যদিনের এ চিত্র এখন বদলে গেছে। ভাবতে ভালো লাগছে, এখন আর কালশী মোড়ে দাঁড়াতেই হবে না।

উত্তরা হজ্ব ক্যাম্পের পাশে ফাস্টফুডের ব্যবসা করেন মিরপুর-১১ এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুপুরে পারিবারিক কারণে উত্তরা থেকে বাসায় ফিরেছি। ফেরার পথটা ছিল অবিশ্বাস্য। বিমানবন্দর মোড় থেকে মোটরসাইকেলে ইসিবি চত্বর হয়ে কালশী ফ্লাইওভারে উঠে মাত্র ১৭ মিনিটে নামলাম পল্লবীর বাসার সামনে।

dhakapost

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই এলাকায় প্রচুর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। আজ দেখলাম একটি রিকশা উল্টো পথে ফ্লাইওভারে চলছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। না হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

অটোরিকশা চালক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। অযান্ত্রিক বা রিকশাভ্যানসহ লোকাল যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা লেন রাখা হয়েছে।

ডিএমপির ট্রাফিক মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাস্তা প্রশস্ত করার কারণে সড়কে গতি ফিরেছে। যানজট কমে গেছে। কালশী মোড়ে ঝামেলা হতো অফিস টাইমে। আজ ফ্লাইওভার চালুর মধ্য দিয়ে সেটা থাকছে না। তবে আরও কিছুদিন আমরা অবজার্ভ করব। ২২তলা গার্মেন্টস মোড়ের দিকে সড়কটা যেখানে মিলেছে সেখানে ৪ রাস্তার মোড় রয়েছে। সেখানে চাপ তৈরি হলে কিছু রাস্তার ডিভাইডার ক্লোজ করতে হতে পারে।

dhakapost

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মিরপুর সেনানিবাস, চিড়িয়াখানা, সেনাবাহিনীর আবাসন, আশপাশের শিক্ষা ও চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান, জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে এই এলাকায়। মিরপুরের যাতায়াত সহজ করতে আগেই নতুন সড়ক ও সেনানিবাস এলাকায় উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। এতে মিরপুরে যাতায়াতে সড়কটির ব্যবহার বেড়ে যায়। কালশী মোড়ে সরু রাস্তা থাকায় সেখানে প্রায়ই যানজট হতো। এখন ফ্লাইওভার আর সড়ক মিলে ওই পথ প্রতিদিন এক লাখ যানবাহনের চাপ সামলাতে পারবে।

আরও দেখুন

অবশেষে উচ্চ আদালতের আদেশে প্রতীক পেলেন ফরিদা!

নিজস্ব প্রতিবেদক:উচ্চ আদালতের আদেশে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে প্রতীক বরাদ্দ পেলেন …