নীড় পাতা / সাহিত্য ও সংস্কৃতি / ইতিহাস ও ঐতিহ্য / ১৮১৭ সালের ১৫ মে জন্মেছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৮১৭ সালের ১৫ মে জন্মেছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর

নারদ বার্তা ডেস্ক:
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক ও দার্শনিক। ১৮১৭ সালের ১৫ মে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং মাতা দিগম্বরী দেবী। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কনিষ্ঠ পুত্র।

ঠাকুর পরিবারের আদি পদবী কুশারী এবং আদিনিবাস অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কুশ নামক গ্রামে ৷ এঁরা হলেন রাঢ়ী গোত্রীয় ব্রাহ্মণ৷ রবীন্দ্রজীবনীকার শ্রী প্রভাত মুখোপাধ্যায় তার “রবীন্দ্রজীবনী ও রবীন্দ্র সাহিত্য প্রবেশিকা” গ্রন্থের প্রথম খন্ডের ২ নং পৃষ্ঠায় ঠাকুর পরিবারের বংশপরিচয় দিতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন, “কুশারীরা হলেন ভট্টনারায়ণের পুত্র দীন কুশারীর বংশজাত; দীন মহারাজ ক্ষিতিশূরের নিকট “কুশ” নামক গ্রাম (বর্ধমান জেলা) পাইয়া গ্রামীণ হন এবং কুশারী নামে খ্যাত হন৷ দীন কুশারীর অষ্টম কি দশম পুরুষ পরে জগন্নাথ ৷”

দেবেন্দ্রনাথ ১৮২৩-২৫ সাল পর্যন্ত বাড়িতেই পড়াশোনা করেন। ১৮২৭ সালে তিনি রাজা রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত অ্যাংলো হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে কিছুকাল পড়াশোনার পর তিনি পিতার বিষয়সম্পত্তি ও ব্যবসা দেখাশোনার পাশাপাশি দর্শন ও ধর্মচর্চা শুরু করেন। ১৮৩৮ সালে পিতামহীর মৃত্যুকালে তাঁর মানসিক পরিবর্তন ঘটে। তিনি ধর্মবিষয়ে আগ্রহী হয়ে মহাভারত, উপনিষদ ও প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয় অধ্যয়ন শুরু করেন। এর ফলে পার্থিব বিষয়ের প্রতি তাঁর বীতস্কৃহা জন্মে এবং তাঁর মধ্যে ঈশ্বরলাভের আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়। ১৮৩৯ সালে তত্ত্বালোচনার উদ্দেশ্যে তিনি ‘তত্ত্বরঞ্জনী সভা’ স্থাপন করেন, পরে যার নাম হয় তত্ত্ববোধিনী সভা। ১৮৪০ সালে তিনি কঠোপনিষদের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন।

১৮৪২ সালে দেবেন্দ্রনাথ তত্ত্ববোধিনী সভা ও ব্রাহ্মসমাজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরের বছর তাঁরই অর্থে এবং অক্ষয়কুমার দত্তের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা। এই পত্রিকায় দেবেন্দ্রনাথকৃত বৃত্তি ও বঙ্গানুবাদসহ উপনিষদ প্রকাশিত হতে থাকে। দেবেন্দ্রনাথের প্রচেষ্টায় প্রকাশ্য সভায় বেদপাঠও শুরু হয়। ১৮৪৪ সালে দেবেন্দ্রনাথ প্রথম ব্রহ্মোপাসনা পদ্ধতি প্রণয়ন করেন এবং পরের বছর থেকে তা ব্রাহ্মসমাজে ব্যবহূত হতে থাকে। দীর্ঘ শাস্ত্রচর্চার ফলে তিনি উপলব্ধি করেন যে, শুধু উপনিষদের ওপর ব্রাহ্মধর্মের ভিত্তি স্থাপন সম্ভব নয়। তাই ১৮৪৮ সাল থেকে তিনি ক্রমাম্বয়ে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ঋগ্‌বেদের অনুবাদ প্রকাশ করতে শুরু করেন, যা ব্রাহ্মধর্ম নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ১৮৫০ সালে তাঁর অপর গ্রন্থ আত্মতত্ত্ববিদ্যা প্রকাশিত হয়। ১৮৫৩ সালে তিনি তত্ত্ববোধিনী সভার সম্পাদক নিযুক্ত হন এবং ১৮৫৯ সালে ব্রাহ্মবিদ্যালয় স্থাপন করেন।

দেবেন্দ্রনাথ পূজা-পার্বণাদি বন্ধ করে ‘মাঘ উৎসব’, ‘নববর্ষ’, ‘দীক্ষা দিন’ ইত্যাদি উৎসব প্রবর্তন করেন। ১৮৬৭ সালে তিনি বীরভূমের ভুবনডাঙ্গা নামে একটি বিশাল ভূখণ্ড ক্রয় করে আশ্রম স্থাপন করেন। এই আশ্রমই আজকের বিখ্যাত শান্তিনিকেতন । এছাড়াও তিনি হিন্দু চ্যারিট্যাবল ইনস্টিটিউশনের বেথুন সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

দেবেন্দ্রনাথ কিছুদিন রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৮৫১ সালের ৩১ অক্টোবর ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন স্থাপিত হলে তিনি তার সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি দরিদ্র গ্রামবাসীদের চৌকিদারি কর মওকুফের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং ভারতের স্বায়ত্তশাসনের দাবি সম্বলিত একটি পত্র ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রেরণ করেন। দেবেন্দ্রনাথ বিধবাবিবাহ প্রচলনে উৎসাহী ছিলেন, তবে বাল্য ও বহু বিবাহের বিরোধী ছিলেন। শিক্ষাবিস্তারেও তাঁর বিশেষ অবদান ছিল। খ্রিষ্টধর্মের প্রভাব থেকে ভারতীয় যুবকদের রক্ষার জন্য ১৮৬৭ সালে রাধাকান্ত দেব তাঁকে ‘জাতীয় ধর্মের পরিরক্ষক’ ও ব্রাহ্ম সমাজ ‘মহর্ষি’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি কলকাতায় তার জীবনাবসান ঘটে।

আরও দেখুন

নাটোরে ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে জখম

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনৈতিক পূর্ব শত্রুতার জেরে নাটোরে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। …