নীড় পাতা / জাতীয় / হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শহীদুন্নবী

হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শহীদুন্নবী

নিউজ ডেস্ক:
শহীদুন্নবীর স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত, কোরআন-হাদিস পড়ত। প্রত্যেক বছরেই তিন-চারবার করে কোরআন খতম দিত। করোনাভাইরাসের সময়েও কয়েকবার কোরআন খতম দিয়েছে। আগামী বছর আমাকে নিয়ে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।’

লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পিটিয়ে হত্যার পর পেট্রল ঢেলে দেহ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে যার, সেই শহীদুন্নবী জুয়েল (৫০) ব্যক্তিজীবনে ছিলেন ধর্মপ্রাণ ও সহজ-সরল একজন মানুষ। স্ত্রীকে নিয়ে আগামী বছর হজ পালনে সৌদি আরবে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।

রংপুর নগরীর শালবনে তার বাসায় গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিবেদক। কথা হয়েছে এলাকাবাসী ও যে মসজিদে শহীদুন্নবী নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন সেখানকার ইমামের সঙ্গে।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তর্কাতর্কির জেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় শহীদুন্নবীকে। পরে তার দেহে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়া হয়।

নৃশংস এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

শহীদুন্নবী রংপুর শহরের শালবন রোকেয়া সরণি এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তার বাসার নাম নবী ভিলা।

রংপুর শালবান
রংপুরের শালবন এলাকায় নিহত শহীদুন্নবীর বাড়ি

রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক ছিলেন শহীদুন্নবী। তার বড় মেয়ে জেবা তাসনিম এবার এইসএসসি পাস করেছে। ছেলে তাশিকুল ইসলাম ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

শুক্রবার সকালে শহীদুন্নবীর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, স্বজনের কান্না ও আহাজারিতে ভারী হয়ে আছে পরিবেশ।

স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এক বছর আগে শহীদুন্নবীর চাকরি চলে যাওয়ায় একমাত্র উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায়।

এতে মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের এই শিক্ষার্থী। চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ খেতেন।

শহীদুন্নবীর বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ঘরে পবিত্র কোরআন শরিফ, হাদিসসহ ইসলামিক বিভিন্ন বই সাজানো। ঘরের আলমারি ও দেয়ালে ঝুলছে ইসলামিক বিভিন্ন নিদর্শন ও দোয়ার ছবি।

স্ত্রী জেসমিন আক্তার মুক্তা হাতে তসবিহ নিয়েই আহাজারি করছিলেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্বামী অনেক সহজ-সরল ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত, কোরআন-হাদিস পড়ত। প্রত্যেক বছরেই তিন-চারবার করে কোরআন খতম দিত। করোনা ভাইরাসের সময়েও কয়েকবার কোরআন খতম দিয়েছে। আগামী বছর আমাকে নিয়ে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমি বিশ্বাস করি না সে কোনোভাবেই কোরআন অবমাননা করতে পারে। ’

গুজব ছড়িয়ে নৃশংস হত্যায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন মুক্তা।

বাসার পাশের শালবন জালালিয়া জামে মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন শহীদুন্নবী। মসজিদের ইমাম মঞ্জুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার মতো ঘটনাকে কোনোভাবেই ইসলাম সমর্থন করে না। শহীদুন্নবীকে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

জুয়েলের বন্ধু রংপুরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে তাকে (শহীদুন্নবী) চিনি। সে আমাকে সবসময় তার বিষয়গুলো জানাত। নামাজের সময় হলে মসজিদে ছুটে যেত। আশপাশের লোকজনকেও নামাজের জন্য ডাকত। ষড়যন্ত্রের কারণে চাকরি চলে যাওয়ার পর সে অনেকটা ভেঙে পড়েছিল। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধর্মের দিকে মনোনিবেশ করেছিল।’

শহীদুন্নবী হত্যার বিচার দাবিতে শুক্রবার বিকেলে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।

সূত্র: নিউজবাংলা

আরও দেখুন

নাটোরে ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে জখম

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনৈতিক পূর্ব শত্রুতার জেরে নাটোরে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। …