নীড় পাতা / জাতীয় / সেবা রপ্তানির পালেও হাওয়া

সেবা রপ্তানির পালেও হাওয়া

নিউজ ডেস্ক:
পণ্য রপ্তানির মতো সেবা রপ্তানির পালেও হাওয়া লেগেছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সেবা রপ্তানি থেকে ৬৩ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময়হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৬৫ পয়সা) টাকার অংকে এই অর্থের পরিমাণ পাঁচ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।

এই রপ্তানি গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ১০ শতাংশ।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে সেবা খাত থেকে এত বিদেশি মুদ্রা দেশে আসেনি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পণ্য রপ্তানির তথ্য চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশ করলেও সেবা খাতের এক মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে মঙ্গলবার।

ইপিবি অবশ্য বরাবরই সেবা খাতের রপ্তানির তথ্য পরে প্রকাশ করে থাকে।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা রপ্তানি থেকে মোট চার হাজার ৫৩৬ কোটি ৭২ লাখ (৪৫.৩৭ বিলিয়ন) আয় করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয় ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ।

সেবা খাত থেকে আসে ৬৬০ কোটি ৮৯ লাখ (৬.৬ বিলিয়ন) ডলার; বেড়েছিল ২৫ শতাংশের মতো।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সেবা খাত থেকে ৭৫০ কোটি (৭.৫ বিলিয়ন) ডলার বিদেশি মুদ্রা আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।

এরমধ্যে প্রথম মাস জুলাইয়ে আয়ের লক্ষ্য ছিল ৫৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ৬৩ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে আয় হয়েছিল ৪৫ কোটি ২৪ লাখ ডলার।

এ হিসাবেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পণ্য রপ্তানির ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সেবা খাতের রপ্তানিতে। পণ্য রপ্তানি বাড়লে সেবা খাতের রপ্তানি বাড়বে-এটাই স্বাভাবিক। কেননা, এক খাত অন্য খাতের সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্কিত এবং নির্ভরশীল।’

আগামী দিনগুলোতেও পণ্য রপ্তানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেবা খাতের রপ্তানি বাড়বে বলে আশার কথা শোনান ফারুক হাসান।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই মাসে সেবা খাতের মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৬২ কোটি ২৭ লাখ ডলারই এসেছে সরাসরি সেবা খাত থেকে। অর্থাৎ মোট রপ্তানির ৯৮ দশমিক ৫৬ শতাংশই এসেছে সরাসরি সেবা খাত থেকে।

বাকিটা দেশের বন্দরগুলোতে পণ্যবাহী জাহাজগুলোর কেনা পণ্য ও সেবা এবং মার্চেন্টিংয়ের অধীনে পণ্য বিক্রির আয়।

কোনো অনাবাসীর কাছ থেকে পণ্য কিনে একই পণ্য কোনো অনাবাসীর কাছে বিক্রি করাকে মার্চেন্টিং বলে। এই প্রক্রিয়ায় মোট বিক্রি থেকে মোট ক্রয় বাদ দিয়ে নিট মার্চেন্টিং রপ্তানি আয় হিসাব করা হয়।

দেশের স্থল, সমুদ্র বা বিমান বন্দরে বিদেশি পরিবহনগুলো সেসব পণ্য ও সেবা- যেমন জ্বালানি তেল ও মেরামত সেবা- কিনে থাকে সেগুলোকে সেবা খাতের আওতায় ধরা হয়েছে।

জুলাই মাসে সেবা খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে সরকারি পণ্য ও সেবা রপ্তানি থেকে। এ উপখাত থেকে এসেছে ১৮ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।

অন্য উপখাতগুলোর মধ্যে ‘অন্যান্য ব্যবসায় সেবা’থেকে এসেছে ৮ কোটি ৯১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি থেকে আয় হয়েছে ৯ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ডলার।

বিভিন্ন ধরনের পরিবহন সেবা (সমুদ্র, বিমান, রেল এবং সড়ক) থেকে ৯ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় হয়েছে।

আর্থিক সেবা খাত থেকে ৭৮ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং ভ্রমণ সেবা উপখাত থেকে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদেশে বিভিন্ন সেবা বিক্রি করে ৬১৩ কোটি ১৯ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাত থেকে ৬৩৫ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এসেছিল ৪৩৪ কোটি ডলার।

সেবা রপ্তানি আয় দেশে আনা আরও সহজ হয়েছে

সেবা রপ্তানি ও ফ্রিল্যান্সারদের আয় দেশে আনা আরও সহজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে সেবা রপ্তানিকারকরা আন্তর্জাতিক মার্কেট প্লাটফর্মের সঙ্গে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। আবার অন্য দেশের লাইসেন্সপ্রাপ্ত পেমেন্ট গেটওয়েতে অনানুষ্ঠানিক হিসাব (নোশনাল অ্যাকাউন্ট) খোলার সুযোগ পাবেন।

গত সোমবার এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সার্কুলারে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মার্কেট প্লাটফর্ম কিংবা বিদেশি পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে পাওয়া আয় প্রথমে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের ‘নস্ট্রো’হিসাবে জমা হবে। এরপর ব্যাংক সেবা প্রদানকারী গ্রাহকের হিসাবে তা জমা করবে। গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি স্থানীয় ডিজিটাল ওয়ালেটেও অর্থ জমা করা যাবে।

গ্রাহক চাইলে প্রযোজ্য অংশ ইআরকিউ হিসাবে জমা করতে পারবেন। সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কর পরিশোধের বিধান মেনে চলতে হবে। আর সেবা রপ্তানির চার মাসের মধ্যে আয় দেশে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

সার্কুলারে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক মার্কেট প্লাটফর্ম বা পেমেন্ট গেটওয়েতে খোলা হিসাবের অর্থ আনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে কিছু শর্ত পরিপালন করতে হবে। বিশেষ করে সেবা প্রদানকারীর আন্তর্জাতিক মার্কেট প্লাটফর্মের সঙ্গে পরিচালিত মার্চেন্ট হিসাব পরিচালনা এবং বিদেশস্থ লাইসেন্সপ্রাপ্ত পেমেন্ট সেবা প্রদানকারীর সঙ্গে তার নোশনাল হিসাব সম্পর্কে তথ্য নিতে হবে।

সেবা কার্যক্রম বিষয়ে তথ্য সংগ্রহসহ ঘোষণাপত্র নিতে হবে। সেবার বিপরীতে পাওয়া আয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক মার্কেট প্লাটফর্মের মাধ্যমে প্রত্যাবাসন কিংবা অনানুষ্ঠানিক হিসাবে জমার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে তা দেশে আনার বিষয়ে গ্রাহক থেকে অঙ্গীকার নামা নিতে হবে।

ক্ষুদ্র পরিসরে সেবা খাতের আয় প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালে এডি ব্যাংকগুলোকে বিদেশস্থ ওপিজিএসপির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ দেয়। এখন তা আরও সহজ করা হলো।

আরও দেখুন

প্রেমের সম্পর্কের ফাঁদে ফেলে তরুনীকে ধর্ষণ,থানায় মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোরের নলডাঙ্গায় বিয়ের প্রলোভনে প্রেমিকাকে ধর্ষণ করেছে রুবেল নামের প্রেমিক ও তার দুই …