নীড় পাতা / জাতীয় / সেপ্টেম্বরে কমবে বিদ্যুৎ সংকট, ২ মাসের মধ্যে জ্বালানির দামও

সেপ্টেম্বরে কমবে বিদ্যুৎ সংকট, ২ মাসের মধ্যে জ্বালানির দামও

নিউজ ডেস্ক:
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বিশ^বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকলে আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে। বিশ^বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে এলে দেশের বাজারে কমার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, বিশ^ পরিস্থিতি যদি আর খারাপ না হয়, তা হলে আমরা ভালোর দিকে যাব। আর বিশ^বাজারে যদি তেলের দাম কমে আসে, তা হলে দেশে দাম সমন্বয় করব। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কয়েকবারই এ

তিনি বলেন, বিশে^ সংকট চলার কারণে আমরাও সংকটে আছি। এই সময়ে অনেকে দীর্ঘমেয়াদি বিষয় নিয়ে নানা আলোচনা শুরু করেছে। আমি বলব- চলমান সংকট কী করে সমাধান করা যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। চ্যালেঞ্জের সময় দীর্ঘমেয়াদি আলোচনা করে কোনো লাভ নেই।

গতকাল রবিবার ‘বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি’ নিয়ে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অব বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। এফইআরবির নির্বাহী পরিচালক রিশান নসরুল্লাহর সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক এবং এফইআরবির সাবেক চেয়ারম্যান মোল্লা আমজাদ হোসেন। সেমিনারে সহযোগী হিসাবে যুক্ত ছিল মার্কিন কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংকট মোকাবিলায় আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। আমরা তো কয়েক মাস আগেও ভালো ছিলাম। আগে জ্বালানি তেল সস্তা ছিল, এখন বেড়েছে। আমরা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে আসছি। এদের ক্যাপাসিটি চার্জ নেই। জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে। এ ধরনের কেন্দ্র আগামীতে ১০-১৬ ভাগ থাকবে।

তিনি বলেন, আমাদের একটার পর একটা বেইজলোড বিদ্যুৎকেন্দ্র চলে আসছে। আমরা খুব আশাবাদী। পরিস্থিতি যখন খারাপ, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। বিশে^র বহুদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করেছে। বিশে^র পরিস্থিতি ভালো না। আমরা এখনো আউট অব হ্যান্ড চলছি না। আমরা যেসব উদ্যোগ নিচ্ছি তা আগেই নেওয়া হয়েছে। এটি খুব সাময়িক সমস্যা।

মূল প্রবন্ধে মোল্লা আমজাদ বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই কেন্দ্র ঠিক সময়ে উৎপাদনে আসতে পারলেও সঞ্চালন লাইনের কারণে বসে থাকার শঙ্কা কিন্তু রয়েই গেছে। এদিকে তিনি বলেন, পেট্রল ও অকটেনের সর্বোচ্চ দাম বেড়েছে এবার। এর প্রভাবে বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। পুরো ইউরোপ এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফেরত যাচ্ছে। আমাদেরও এখন কয়লায় যাওয়া দরকার। ফুলবাড়ি ও খালাসপীর কয়লাখনি থেকে কয়লা উঠানোর দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া উচিত। কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ২০২৫ সালের মধ্যেই এই কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে আগামীতে সংকট আরও বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ বিইআরসি মাধ্যমে করা উচিত। পাশাপাশি ভারতের মতো নিয়মিত দাম সমন্বয় করা উচিত। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নেওয়া বন্ধ করতে হবে। এমন অনেক প্রকল্প করা হয়েছে, যেগুলো কোনো কাজেই আসেনি, পড়ে আছে। সার উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিকল্প চিন্তা করা উচিত।

পেট্রো-বাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, আজকে গ্যাসের উৎপাদন ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমেছে, বাপেক্স কাজ করছে, গ্যাজপ্রম কাজ করছে। পিএসসি সংশোধন পরামর্শক কোম্পানি জমা দেবে চলতি মাসের মধ্যে। চলতি বছরের শেষ দিকে দরপত্র আহ্বানের চিন্তা করা হচ্ছে। কয়লার বিষয়ে তিনি বলেন, বড়পুকুরিয়া থেকে আর ছয় বছর উঠানো যাবে। এর পর অন্য জায়গায় যাওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।

অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করবে বিইআরসি। কমিশন গণশুনানির মাধ্যমে এ দাম সমন্বয় করবে। বিপিসি লাইসেন্সি হিসেবে আবেদন করবে। ভর্তুকি দিয়ে আসছেই সরকার। বিপিসির বিরুদ্ধে অস্বচ্ছতার অভিযোগ আছে। সেটি পরিষ্কার করা দরকার। তিতাস মিটার ভাড়া কাউকে না জানিয়ে বাড়িয়ে দেয়।

অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময়ে কিনে নেওয়া ৫টি গ্যাস ক্ষেত্রের মধ্যে দুটা ছিল বেশ বড় ক্ষেত্র। খুব অল্প দামে ক্ষেত্রগুলো কিনে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, মূল সমস্যা জ্বালানি। জ্বালানি জোগান দিতে পারিনি, নিজস্ব জ্বালানির প্রতি অবহেলার কারণে। ভূতত্ত্ববিদরা মনে করছেন দেশীয় গ্যাস এখনো আছে এটি নিশ্চিত। এটিকে যদি উত্তোলন করা হতো, তা হলে আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এখনো দেশের বহু এলাকায় গ্যাসের মজুদ থাকার সম্ভাবনা আছে। এসব জায়গায় এখন উত্তোলন করা জরুরি। এ জন্য দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।

অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি নিয়ে যে ভালো অবস্থান ছিল তা আগামী কয়েক মাসে আর ভালো থাকবে না। কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ, শিল্প খাতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। জ্বালানি খাতের দাম খুব অস্থিতিশীল সব সময়ই। নবায়নযোগ্য জ্বালানি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো জায়গায়। এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা দরকার।

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট রাত ১২টার পর থেকে ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা মূল্য ডিজেল প্রতিলিটার ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪, অকটেন ১৩৫ ও পেট্রল ১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আগে ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা মূল্য ছিল প্রতিলিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০, অকটেন ৮৯ ও পেট্রল ৮৬ টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর থেকেই দেশের বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

আরও দেখুন

বাগাতিপাড়ায় সেরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী নির্বাচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোরের বাগাতিপাড়ায় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪ উপলক্ষে উপজেলা পর্যায়ে সেরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত …