নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / সিংড়ায় বিলদহর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ

সিংড়ায় বিলদহর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোরের সিংড়ায় বিলদহর উচ্চ বিদ্যালয়ে করোনার সংক্রমনের সময়ে গোপনে শিক্ষক নিয়োগসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। যখন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে সেই সময়ে এই বিদ্যালয়ে গোপনে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। তাছাড়াও ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। এর আগে ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ৫ জুন পর‌্যন্ত। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। সম্প্রতি বন্ধের সময় সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময়ে ৩০মার্চ নাটোরে আসেনা এমন একটি জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। বাইরের কেউ জানতে না পারায় ৩১ মে মাত্র সাজানো চারজন প্রতিদ্বন্দ্বী এই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। মহিষমারি উচ্চ বিদ্যালয় এর নিয়োগপ্রাপ্ত সাইফুল ইসলাম এবং তার সহকর্মী আব্দুল ওয়াহেদ,দুর্গাপুর স্কুল এন্ড কলেজের  সহকারী শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত সাইফুল এর বন্ধু সাইফুল ইসলাম এবং খুবজিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মনসুর রহমান ।তারা একে অপরের বন্ধু এবং আত্মীয় বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সভাপতির এক আত্মীয় সাইফুল ইসলাম সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপত্র পান এবং ৩ জুন তিনি তার পদে যোগদান করেন। প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ অসুস্থ থাকায় যোগদানের সাথে সাথে তিনি বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্ব পান।এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করেন এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ১৩ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে। তারা আরো অভিযোগ করেন অন্তত শিক্ষক-কর্মচারী মিলিয়ে ১০ জনকে নিয়োগ দিয়ে তিনি কোটি টাকা কামিয়েছেন। বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি সাহাদত হোসেন টানা ২৭ বছর ধরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন। এই সময়ে তিনি স্কুলটাকে আত্মীয়করণ করেছেন। বর্তমান প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ তার আপন ভাগ্নে বলে জানা গেছে। বিদ্যালয়ে বর্মানে আট শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।এছাড়াও বিদ্যালয়ের সাথে ১৫ টি দোকানঘর আছে যা মাসিক ভাড়ায় দেয়া আছে। এ খাত থেকে বছরে লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। এছাড়াও বিদ্যালয়ের নামে বিলে ১৫ বিঘা ধানি জমি রয়েছে। সেখান থেকেও বাৎসরিক ১লাখ টাকার বেশি আয় হয়। কিন্ত সরকারি দুটি ভবন ছাড়া বিদ্যালয়ের আর ভবনগুলো জরাজীর্ণ।

স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোমিন মন্ডল জানান, দীর্ঘদিন সভাপতি থাকায় সাহাদত সাহেব  দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি এবং পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন তিনি। স্কুল ফান্ডের টাকা নয়-ছয় করা সহ অনেক অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে এই বিদ্যালয়। তার প্রভাবে বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক প্রতিবাদ করতে সাহস পাননা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক জানান, তাকে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও অজানা কারণে সভাপতি সাহেব তার আত্মীয়কে নিয়োগ দিয়েছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক প্রথমে এই প্রতিবেদকের সাথে কথাই বলতে রাজি হননি। পরে বিশেষে অনুরোধে এবং তার মামা সাহাদত হোসেনর অনুমতি সাপেক্ষে তিনি জানান, নিয়েগে কোন লেনদেন হয়নি। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার সাথেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

অপরিচিত একটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদানের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এটাও তো জাতীয় পত্রিকা।

আয়-ব্যয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক জানান, আপনারা সভাপতি সাহেবের সাথে কথা বলুন্।

এসকল ব্যাপারে সদ্য সাবেক সভাপতি ও চামারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়াম্যান সাহাদত হোসেন সকল দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমি শিক্ষানুরাগী বলেই আমাকে দীর্ঘদিন সভাপতি করে রাখা হয়েছে। আর স্বজন প্রীতির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সরকারি সকল বিধি মেনেই এই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। টাকা-পয়সার কোন লেনদেন হয়নি। আমি বর্তমানে চামারী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি। আমার প্রতিপক্ষ বর্তমানে চামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান রশিদুল ইসলাম মৃধা আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে। তাই নানা জনকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগ আনা হচ্ছে। এইসব বিষয়ে আমি প্রতিমন্ত্রী পলকের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।

নিয়োগ প্রক্রিয়া সংম্পর্কে জেরা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন রকম অনিয়ম পেলে নিয়োগ বাতিল সহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্সক নিয়োগে দুর্নীতিকে সহ্য করা হবে না।

অনিয়ম দুর্নীতি দূর করে বিলদহর উচ্চ বিদ্যালয় তার স্বাভাবিক গতিতে চলুক এবং শিক্ষা বান্ধব পরিচালনা কমিটি কর্তৃক বিদ্যালয়টি দুর্নীতি স্বজনপ্রীতির উর্দ্ধে থেকে পরিচালিত হোক এটাই সবার প্রত্যাশা। এব্যাপারে স্থানীয়রা প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

আরও দেখুন

গুরুদাসপুর খাদ্য গুদামে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বোরো মওসুমে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা খাদ্য গুদামে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ধান-চাল সংগ্রহের উদ্বোধন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *