নীড় পাতা / কৃষি / সিংড়ায় খরসতি গ্রামে করলার বাম্পার ফলন কিন্তু ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষকেরা

সিংড়ায় খরসতি গ্রামে করলার বাম্পার ফলন কিন্তু ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষকেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিংড়াঃ
নাটোরের সিংড়া উপজেলার ০৯ নং তাজপুর ইউনিয়নের সবজি গ্রাম খ্যাত খরসতি গ্রামে এখন নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ সবার মাঝে বইছে সবুজের আনন্দ। গ্রাম জুড়ে করলার সমারোহ। ইতিমধ্যে করলার গ্রাম হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন ভোরের সূর্য উঠার পর পরই ক্ষেতের করলা তোলার মহা উৎসব চলে এ গ্রামের মাঠ জুড়ে। ক্ষেত থেকে করলা তোলার পর সারি সারি ডালি নিয়ে কৃষকরা স্থানীয় খরসতি ঈদগাহ মাঠে হাজির হয়। আর সেখানেই বিশাল হাট বসে। বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা এখানে এসে করলা পাইকারী কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মন করলা এখান থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। অথচ বাম্পার ফলন হলেও উৎপাদিত করলার ন্যায মূল্য থেকে বঞ্চিত করলা চাষীরা।

উপজেলা কৃষি অধিদফতরের দেয়া তথ্যানুযায়ী, উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় ৭০ হেক্টর জমিতে করলার আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে খরসতি গ্রামেই ২৫ হেক্টর জমিতে করলার আবাদ হয়েছে। এ বছর করলা আবাদে উৎপাদিত ফসলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৮৪০ মেট্টিক টন। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অধিদপ্ততর।

সরেজমিনে খরসতি গ্রামে গেলে করলা চাষী সুমন আলী, বাবু সরদার, শফিকুল জানান, এ গ্রামের শতভাগ মানুষ সবজি চাষ করে। এরমধ্যে শতকরা ৯৫ জন মানুষ করলা চাষ করে। এছাড়া কুমড়া, মরিচ, লাউ, ভূট্টা সহ নানা সবজি চাষ করে থাকে। পরিচর্যা ও কীটনাশক সহ এক বিঘা জমিতে করলা আবাদ করতে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। ভালো মানের করলা হলে ৪৫থেকে ৫০হাজার টাকা বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকার কারনে অর্ধেক দামে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে করলা বিক্রি করতে হয় । অনেক সময় পাইকারী ব্যবসায়ীরা না আসায় ক্ষেতের করলা ক্ষেতেই পঁচে নষ্ট হয়ে যায়।

স্থানীয় গ্রামের সবজি পাইকারী ব্যবসায়ী মোতালেব জানায়, খরসতি মাঠে প্রতি বছর ভালো মানের করলা চাষ হয়ে থাকে। এবারও মাঠে করলার বাম্পার ফলন হয়েছে। এখানকার কৃষকদের বাজার ব্যবস্থাপনা বলতে একমাত্র স্থানীয় ঈদগাহ। সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠেই চলে বেচা-কেনা। বগুড়া থেকে আগত পাইকারী ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান এবং নওগাঁর মজিবর রহমান মনজু বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ার কারনে অনেক পাইকারী ব্যবসায়ীরা এখানে আসতে চায় না। যাতায়াত খরচ বেড়ে যাওয়ার কারনে মন প্রতি দেড় থেকে দুইশত টাকা কম দামে কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে হয়। মাত্র তিন কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ হলে এখানেও অত্যাধুনিক বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠবে। এতে করে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের নায্য মূল্য পাবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বলেন, গ্রামের প্রায় সবাই সবজির আবাদের সাথে জড়িত। কিন্তু সিংড়া উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিঃমিঃ অদূরে এ গ্রামে আসতে যানবহন ভয় পায়। রাস্তার বেহাল দশার কারনে কৃষকরাও নায্য মূল্য পাচ্ছে না। দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করা হবে বলে তিনি মনে করেন।

সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর উপজেলায় তুলনামূলক বেশি করলার চাষ হয়েছে। কৃষকরা যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের নায্য মূল পায় সেই লক্ষ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।

আরও দেখুন

নন্দীগ্রামে চড়কপূজার চড়কির গাছ ভেঙে চারজন আহত 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ার নন্দীগ্রামে চড়কপূজার চড়কির গাছ ভেঙে চারজন আহত হয়েছে। শুক্রবার (১০ মে) ঘটনাটি …