নীড় পাতা / জাতীয় / রাণীনগরে কৃষকের কাছ থেকে ইচ্ছেমত টাকা আদায়ের অভিযোগ নলকূপ মালিকদের বিরুদ্ধে

রাণীনগরে কৃষকের কাছ থেকে ইচ্ছেমত টাকা আদায়ের অভিযোগ নলকূপ মালিকদের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাণীনগর:
নওগাঁর রাণীনগরে চলতি বোরো মৌসুমে ইতি মধ্যেই ৮৫%ধান রোপন শেষ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারীভাবে নির্ধারণ হয়নি জমিতে পানি সেচ মূল্য। এতে করে কৃষকদের নিকট থেকে ইচ্ছে মত পানি সেচের টাকা আদায়ের অভিযোগ ওঠেছে নলকূপ মালিকদের বিরুদ্ধে। ফলে ধান আবাদের শুরুতেই ক্ষতির মূখে পরছেন কৃষকরা।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে চলতি বোরো মৌসুমে ১৮ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে ধান রোপন করছেন কৃষকরা। ইতি মধ্যেই প্রায় ৮৫% জমিতে ধান রোপন শেষ হয়েছে। এসব জমিতে পানি সেচ দিতে বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ রয়েছে ৩৪৬টি এবং ডিজেল চালিত গভীর নলকূপ রয়েছে ৮টি। এছাড়া বিদ্যুৎ চালিত অগভীর নলকূপ রয়েছে ২৮০টি ও ডিজেল চালিত অগভীর নলকূপ রয়েছে এক হাজার ৭৫০টি এবং বিদ্যুৎ চালিত এলএলপি নলকূপ রয়েছে ২০ টি। এর মধ্যে বরেন্দ্র বহুমূখী প্রকল্পের আওতায় গভীর নলকূপ রয়েছে ২৫৬টি। এছাড়া প্রায় সবগুলোই ব্যক্তিমালিকানা আওতায় পরিচালিত হচ্ছে নলকূপগুলো । 

সংশ্লিষ্ঠ সুত্র মতে, গত দুই বছর আগে ২০২০/২১ইং সালের জন্য মাটির প্রকার ভেদে ধানের জমিতে পানি সেচে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন ভিত্তিক সরকারী মূল্য নির্ধারণ করা হয়।এর পর ২০২২ সালে নতুন করে আর কোন মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। কৃষকরা বলছেন,অনেক নলকূপ মালিকরা গত বছরের মূল্য তালিকা অনুযায়ী টাকা আদায় করছেন আবার কোথাও কোথাও বেশি দরে পানি সেচের টাকা আদায় করছেন । উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নে বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপের সেচ মূল্য নিধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ এক হাজার ৪০০ টাকা বিঘা এবং ডিজেল চালিত গভীর নলকূপে সেচ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ এক হাজার ৮০০টাকা বিঘা।

কিন্তু ওই ইউনিয়নের অলংকার দিঘী গ্রামের কৃষক ফজলুল হক, খোরশেদ আলমসহ আরো কৃষকরা জানান, ডিজেল চালিত গভীর নলকূপের মালিক সিরাজুল ইসলাম গত বছরই সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে দুই হাজার ৫০০টাকা বিঘা সেচের দাম নিয়েছেন। ধান রোপন শুরু করেছি,শেষ হলেই এবার দুই হাজার ৭০০ টাকা বিঘা পানি সেচের দাম নিবে এমনটায় ঘোষনা দিয়েছে। ওই নলকূপের মালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন,তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা দুই হাজার ২০০ থেকে ৫০০ টাকা নিয়েছি। এবার এখন পর্যন্ত দর নির্ধারণ করা হয়নি।

বড়গাছা ইউনিয়নের শলিয়া গ্রামের কৃষক মজনুর রহমান বলেন, এবার দুই হাজার টাকা বিঘা পানি সেচের টাকা দিয়েছি। মিরাট ইউনিয়নের বড়খোল গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দীন বলেন, গত বছর এই মাঠে বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপে এক হাজার ৫০০ টাকা বিঘা সরকারী দর থাকলেও সেখানে দুই হাজার ৬০০ টাকা বিঘা নিয়েছে। এবছর অতিরিক্ত দুইশত টাকা ধরে দুই হাজার ৮০০ টাকা নিচ্ছে। এছাড়া অধিকাংশ নলকূপ মালিকরা গত বছরের চাইতে এমৌসুমে পানি সেচের দাম বেশি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

কৃষকরা বলছেন, শুরুতেই যদি আমরা লোকসানে পরি তাহলে ধানের আবাদ করে লোকসান ছাড়া লাভ করতে পারবোনা। তাই কৃষকের সার্থে সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে নলকূপ মালিকরা বলছেন,ডিজেলের দাম, বিদ্যুতের দাম বেরেছে,শ্রমীকের মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে পানি সেচের দাম বেশি নিতে হচ্ছে। চলতি মৌসুমে পানি সেচের মূল্য এখনো নির্ধারণ হয়নি জানিয়ে রাণীনগর উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য সচিব বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী (অতিরিক্তি দায়িত্বপ্রাপ্ত) আলী হোসেন বলেন,চলতি মৌসুমে পানি সেচের মূল্য নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি হয়েছিল এমনটাই শুনেছিলাম। কিন্তু এর পর কি হয়েছে সেটা ইউএনও বলতে পারবেন।

এব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন,নতুন দর নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত আগের দরেই টাকা নিবে নলকূপ মালিকরা। তার পরেও পানি সেচের দাম সরকার নির্ধারিত দরের চাইতে যদি কেউ বেশি নেয় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও দেখুন

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে বিক্ষোভ মিছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের চলমান মৌসুমি জনবল থেকে স্থায়ীকরণ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার এবং সরকার …