নীড় পাতা / উত্তরবঙ্গ / রাজশাহী / রাজশাহীতে ইজারা নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমানার ভেতর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ক্ষতির মুখে বৈধ ইজারাদাররা

রাজশাহীতে ইজারা নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমানার ভেতর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ক্ষতির মুখে বৈধ ইজারাদাররা


নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

রাজশাহী সীমান্তে বালুমহল ইজারা নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমানার ভেতর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বৈধভাবে নেয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালুমহল ইজারাদাররা। এতে সীমানা অতিক্রম করে বালুমহল আইন’র শর্ত লংঘন এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় আগামীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের বালুমহল ইজারা বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার আশংঙ্কাও করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, জেলার রাজস্ব রক্ষার্থে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইজারাদাররা।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালুমহল ব্যবসায়ী মনির হোসেন বকুল নাকি অবৈধভাবে এবং নদীর কিনারা থেকে বালু উত্তোলন করছে মর্মে অভিযোগ এনে রাজশাহীর বালুমহল ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম সম্প্রতি রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারকে একটি চিঠি দেন। প্রেক্ষিতে বিভাগীয় কমিশনার এ বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরেকটি পত্র দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসককে।

প্রাপ্ত চিঠির প্রেক্ষিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এ ব্যাপারে সহকারি কমিশনার (ভূমি) চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরকে তদন্তের আদেশ দিলে সদর উপজেলার শাহাজাহানপুর ইউনিয়নের ভূমি অফিসের তহশিলদার ময়েজ উদ্দিন সরেজমিন তদন্ত করে গত ৮ নভেম্বর ২০২০ প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আতাতুলী ইউনিয়নের রানীনগর/১৬৯ মৌজার ৬৪০১ দাগে ২২.০০০০ একর এবং দূর্লভপুর/১৭০ মৌজার ৪১৬ দাগে ১৩.১১০০ একর বালুমহল ১৪২৭ সনের জন্য মের্সাস ইতি ট্রেডার্স এর স্বত্বাধীকারী হিসেবে মনির হোনের বকুল ইজারাপ্রাপ্ত হয়েছেন।

জনাব বকুল ইজারাপ্রাপ্ত রানীনগর ও দূর্লভপুর বালুমহলের চিহ্নিত স্থান থেকে নদীর পাড় হতে ২-৩ হাজার মিটার দূরে থেকে বৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগটি মিথ্যে, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

আর সরেজমিন তদন্তে সংশ্লিষ্ট ১নং ওয়ার্ড কমিশনার রহমান এবং বগচর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার রানীনগর ও দূর্লভপুর বালুমহলের চিহ্নিত স্থান থেকে বালু উত্তোলনে নদীর পাড় ভাঙ্গনের কোন আশংকা নেই মর্মেও তারা মতামত দিয়েছে। তারা এও জানান, ইজারাদার বকুল নির্দিষ্ট স্থান ব্যতিত অবৈধভাবে নদীর পাড় থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এদিকে, এই প্রতিবেদক সরেজমিনে গেলে দেখতে পান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আতাতুলী ইউনিয়নের অর্থাৎ-গোদাগাড়ীর রেলবাজার ঘাটের সামনে চরআলাতুলী মৌজার নক্সার ২নং সীটে; উল্টো রাজশাহীর বালুমহল ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমানার ভেতরে এসে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। যা বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০’র শর্তের পরিপন্থি।

অথচ রাজশাহীর ইজারাদাররা গোদাগাড়ীর ফুলতলা এলাকায় বালুর ব্যবসা করে আসলেও; ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাহাঙ্গীর আলম গং অবৈধভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরআলাতুলী ইউনিয়নের অর্থাৎ-গোদাগাড়ি রেলবাজার ঘাটের সামনে চরআলাতুলী মৌজা থেকে বালু উত্তোলন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইজারাদারদের জোতগোসাই দাস এলাকায় মজুতকৃত বালুর পাশেই, বালু মজুত করে বাজারদরের চেয়ে কম মূল্যে বালু বিক্রি করছে। এতে ব্যবসায়িকভাবে এবং আর্থিকভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইজারাদারদের ক্ষতিগ্রস্থ করছে রাজশাহীর ইজারাদাররা।

শুধু তাই নয় সরেজমিন আরও জানাগেছে, জাহাঙ্গীর আলম অবৈধভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরআলাতুলী মৌজা থেকে বালু উত্তোলন করলেও; এসব বালু আবার বেচা-কেনা হচ্ছে ‘আমিন ট্রের্ডাসের’ সত্ত্বাধিকারী আজিজুল আলম বেল্টুর নামে। অথচ এই বেল্টুই গত ১৪২৫ ও ১৪২৬ বঙ্গাব্দে ইজারাদার মনির হোসেন বকুলের সাথে যৌথ অংশীদারিত্বে ব্যবসা করেছে।’

এ বিষয়ে ইজারাদার মনির হোনের বকুল জানান, ‘রাজশাহীতে ইজারা নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমানার ভেতর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে আগামীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালুমহলের রাজস্ব আদায়ে বিরাট প্রভাব পড়বে।’ তিনি আর জানান,‘ সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য এবং রাজস্ব রক্ষার্থে অবৈধভাবে বালুউত্তোলন বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।’

গোদাগাড়ীর রেলবাজার এলাকার মোহাম্মদ আবু জানান, ‘সীমানা অতিক্রম করে প্রকাশ্য রেলবাজার ঘাটের সামনে চরআলাতুলী মৌজা থেকে ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম গং অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। অবৈধভাবে এই বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে এমনটাই দাবি জানান তিনি।’
এ বিষয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনকারী রাজশাহীর ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম অস্বীকার করে জানান, ‘আমরা কেল্লা বড়ই পাড়া এলাকায় আমাদের নিজেদের বিট থেকে বালু উত্তোলন করছি। চরআলাতুলী মৌজা থেকে অবৈধভাবে কোন বালু উত্তোলন করা হচ্ছেনা।

কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে, কেল্লা বড়ই পাড়া বালু মহরল থাকলেও; সেটি ডাঙ্গা থাকায় চরআলাতুলী মৌজাকেই কেল্লাবড়ই পাড়া হিসেবে অবৈধভাবে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোর করেই চর আলাতুলী মৌজা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

অপরদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নাজমুল ইসলাম সরকার জানান, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলননের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আরও দেখুন

পুঠিয়ায় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে রাতের আঁধারে চলছে পুকুর খনন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর পুঠিয়ায় রাতের আঁধারে ফসলি জমিতে পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, পুকুর …