নীড় পাতা / জাতীয় / যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানো অগ্রহণযোগ্য

যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানো অগ্রহণযোগ্য

নিউজ ডেস্ক:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, আমরা লক্ষ্য করেছি কিছু আন্তর্জাতিক প্লেয়াররা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট দলের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে- যেটি সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক আচরণ ও অগ্রহণযোগ্য।

গতকাল রাতে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ঢাকায় এসে পৌঁছান।

সংবাদ সম্মেলনে ল্যাভরভ বলেন, রাশিয়া ও বাংলাদেশ একসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের বন্ধুদের চাপের ভিতরও বাংলাদেশ তাদের জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো চমৎকারভাবে পরিচালনা করছে। এগুলো ছাড়া আরও অনেক ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশি বন্ধুদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমরা একসঙ্গে এগুলো অর্জনের জন্য কাজ চালিয়ে যাব।

বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার ৫০ বছরের বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করে ল্যাভরভ বলেন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ভারতের পর রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক বন্ধু বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের বাণিজ্যিক টার্নওভার ২ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং ২০২২ সালে এটি প্রায় ৩ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অক্টোবরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ফেজের জ্বালানি বাংলাদেশে আসবে। এটি ছাড়াও আমাদের মধ্যে কিছু সম্ভাবনাময় প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেমন রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম বাংলাদেশে ২০টি গ্যাসকূপ খনন করেছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশে এলএনজি (লিকুয়িফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) সাপ্লাইয়ের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও কাজ চলছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে তা সঠিক পথেই আছে। এ বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। রাশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তির বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ড. এ কে আবদুল মোমেন জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ফেজের জ্বালানি রাশিয়া থেকে আগামী অক্টোবরে দেশে আসবে। এ ছাড়া দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা, ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছি। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সন্ধ্যা ৬টা ১৭ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। মোমেন সন্ধ্যায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। আজ সকাল ৯টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশ সফর শেষ করে ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি২০ সম্মেলনে যোগ দেবেন।

এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দিপক্ষীয় বৈঠক প্রসঙ্গে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন রাশিয়াকে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু উল্লেখ করে বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্বের সূচনা হয়েছিল ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অনন্য ভূমিকার মাধ্যমে। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক মস্কো সফর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মূল ভিত্তি স্থাপন করে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধের পর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাইন অপসারণের মাধ্যমে বন্দরটিকে জাহাজ চলাচলের উপযোগী করতে সহায়তা করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। ২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়ায় সরকারি সফরের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা এবং পরবর্তীতে দেশ গঠনে অবদান রাখতে পেরে সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরি দেশ হিসেবে রাশিয়া গর্ববোধ করে। তিনি দুই দেশের বর্তমান সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প যথাসময়ে সম্পন্ন করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার উল্লেখ করে বলেন, ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে তার সরকার অত্যন্ত আগ্রহী। রাশিয়া বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থায় জ্বালানি, খাদ্য ও সার সরবরাহের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। দুই দেশ শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা করে।

আরও দেখুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলায় সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত নির্বাচনে পরাজিত প্যানেলের কতিপয় সদস্য নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য দু’জন পরিচালকের নেতৃত্বে …