শুক্রবার , এপ্রিল ২৬ ২০২৪
নীড় পাতা / মুক্ত মত / মোহাম্মদ আখলাকুজ্জামান এর লেখা ‘তরুণদের ঘুমন্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করা প্রবীণদের দায়িত্ব’

মোহাম্মদ আখলাকুজ্জামান এর লেখা ‘তরুণদের ঘুমন্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করা প্রবীণদের দায়িত্ব’

মোহাম্মদ আখলাকুজ্জামান

‘তরুণদের ঘুমন্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করা প্রবীণদের দায়িত্ব’

সমাজের আমি একজন তরুণ যুবক। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক ও অনলাইন পত্রিকার রিপোর্টারও বটে। দেশে আমার মত তরুণ যুবক বা তরুণ সাংবাদিকের অভাব নেই। তবুও তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে প্রবীণদের দায়িত্ব কতটুকু, তা কোনো তরুণ সমাজের ভাই-বোন আমার মত করে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করে তুলে ধরতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ আছে। তাই তরুণ যুবসমাজের পক্ষ থেকে তাদের ইতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে এখনই লিখতে শুরু করেছি।

আমরা সবাই জানি এবং বুঝি যে, প্রবীণরাই তরুণদের সম্ভাবনাময় পথ দেখাবে। তাদের আবেগকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়ে দেশকে বদলে দেবে। কিন্তু তেমনটা ঘটছে না। প্রজন্মের এই দায় প্রবীণদের এড়ানোর কোনো সুযোগ দেখছি না। প্রবীণদের নেতিবাচক প্রভাব এখন নবীনদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার একটা মনোভাব দেখা যাচ্ছে। তরুণরা তাদের আবেগ দিয়ে কাজ করে আর প্রবীণরা অনেক চিন্তাভাবনা করে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়। আবেগতাড়িত স্বপ্নবাজ তরুণরা কখনো পিছপা হয় না। কিন্তু প্রবীণদের রক্ষণশীল ভাবনায় এক ধরনের পিছুটান থাকে।

আমরা প্রায় বলি, মানুষ স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। সমাজের সবারটা না ভেবে মানুষ নিজেরটা নিয়ে বেশি ভাবছে। আমরা তো স্বার্থপর তরুণ হতে চাই না। আমরা চাই উদার মনোভাবের হার না মানা কালজয়ী তরুণের অহংকার। যারা নিজেকে নিয়ে নয়, সবাইকে নিয়ে ভাববে। সমাজ আর দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কথা ভাববে। দেশপ্রেম তাদের দেশের কাজে অনুপ্রাণিত করবে। কিন্তু সে জায়গাটাতেই প্রবীণদের নেতিবাচক আচরণ ও মনোভাব আমার মত তরুণদের আবেগকে যেন গ্রাস করছে।

আমি বলতে চাই, বেশিরভাগ প্রবীণ এখন স্বার্থপর। নিজেদের এই আচরণ দিয়ে তারা আমাদের স্বার্থপর বানাতে চায়। কিন্তু এমনটা তো আমি আশা করিনি। আমি দেখতে চাই মুক্ত, উদার ও সহানুভূতিশীল তরুণদের। আমার ভাবনা দিয়ে মানুষের মন জয় করব। অসাধ্যকে সাধন করাব। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি রুখে দাঁড়াবো। মাদক আর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো। আত্মত্যাগই হবে আমার ধর্ম। সেখান থেকেই তরুণ প্রজন্মের মাঝে সাদামনের সৃষ্টি হবে।

অনুুসরণ বা অনুকরণ, যাদের শুভ পদচারণায় দেশ পাবে নতুন নতুন ভাবনার দিকনির্দেশনা। তরুণদের মধ্যে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, জয়নুল আবেদিন, পাবলো পিকাসোকে দেখতে চাই। যাদের জাদুকরী জলরঙের তুলির আঁচড়ে বিস্মিত হবে পৃথিবী। পাবলো পিকাসোর দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব তরুণদের মধ্যে থাকা উচিত। অনুুসরণ বা অনুকরণ করে নয়, বরং তরুণদের নিজের মনে ভালো লাগার মতো করে আলাদা একটা চিন্তা ভাবনা করা দরকার।

খুব মজার বিষয় হলো, মত-পথ ভিন্ন হলেও লক্ষ্য যে, এক হতে পারে, এই দর্শনগত ধারণা দিয়ে আমরা তরুণদের ইতিবাচক ভাবনায় অনুপ্রাণিত করতে পারি। মানুষের মধ্যে দুটি সত্তা থাকে। একটি বাইরের আর অন্যটি ভেতরের। তবে এই দুই সত্তার মেলবন্ধন তৈরি হবে এই দর্শনার্থীর মাধ্যমে। তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হতেই পারে, কিন্তু তা কখনো নেতিবাচক উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হবে না। সুতরায় বলা যায় যে, তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে প্রবীণদের এগিয়ে আসতে হবে।

আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, লেনসন ম্যান্ডেলা, এপিজে আবদুল কালাম আজাদ, গান্ধীজি, মার্টিন লুথার কিংয়ের মতো তরুণদের বহুমাত্রিক নেতৃত্বের গুণাবলি দেখতে চাই। যে নেতৃত্বের মূল কথাই থাকবে আত্মত্যাগ, বিশ্বাস আর আত্মজয়ের মাধ্যমে মানুষ ও সমাজকে পরিবর্তন করা। আমারা আমাদের তরুণদের বিশ্বমানের শিক্ষাবিদ, মনোবিদ, বিজ্ঞানী ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে দেখতে চাই, যারা পৃথিবীকে তাদের মেধা ও জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে জানিয়ে দেবে বাংলাদেশের তরুণরাই হচ্ছে বিশ্বের সেরাদের সেরা। যেখানে তরুণরা পথ হারাবে না, বরং নতুন নতুন পথ সৃষ্টি করবে। আমাদের তরুণদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা আছে।

তরুণরা হলো দেশের প্রতিভা। যা সঞ্চিত হয়ে আছে, কিন্তু সেই সঞ্চিত অসীম সম্ভাবনার শক্তিকে ব্যবহার করার মতো দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের নেই। সবখানেই মানবিক আচরণের দৈন্যতা। সে দৈন্যতার অচলায়তন ভেঙে তরুণদের ঘুমন্ত প্রতিভাকে বের করে আনার দায়িত্ব প্রবীণদেরই। জয়তু তরুণ, জয়তু আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ।

লেখকঃ সাংগঠনিক সম্পাদক (চলনবিল প্রেসক্লাব) ও বার্তা সম্পাদক (দৈনিক দিবারাত্রী), গুরুদাসপুর, নাটোর।

আরও দেখুন

বর্ষাকালে চলনবিলের প্রকৃতি

আবু জাফর সিদ্দিকী:বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিলের নাম চলনবিল। ৩টি জেলাজুড়ে এর বিস্তৃতি। নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও …