নীড় পাতা / ফিচার / ভুলে ত্রাণ পায়নি বৃদ্ধা রহিমা বেওয়া !

ভুলে ত্রাণ পায়নি বৃদ্ধা রহিমা বেওয়া !

নূর ইসলাম

গত ২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার নাটোরে ৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হওয়া দুই দিন পর ৩০ এপ্রিল জেলা প্রসাশকের পরিপত্রের মাধ্যমে বিকাল ৩টা থেকে জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হলেও এখনও গ্রামান্তর ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরতে বাধ্য হচ্ছেন বৃদ্ধা রহিমা বেওয়া। বৃদ্ধার বাড়ি নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ভূষণগাছা গ্রামের মৎসজীবী পাড়ায়। সহায়-সম্বল ও স্বামী-সন্তানহীন বৃদ্ধার পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। বছর বিশেক আগে স্বামী শবদুল মারা গেলে বৃদ্ধা রহিমা বেগম চলে আসেন বাবা সৌরভ প্রামাণিকের বাড়ি। ভিক্ষুক রহিমার স্বামী মারা যাবার আগে তার বাবা মারা যান। তারপর পেটের দায়ে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরে বেড়ান এ গ্রাম থেকে সে গ্রামে। মানুষের মানবিক সহায়তায় কোনরকম চলে যাচ্ছিলো তার দিনকাল।

কথায় আছে অভাগা যেদিকে যায় সাগর মহাসাগর শুকিয়ে যায়। করোনার ছোবলে তার খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার ভিক্ষাবৃত্তিও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি তাঁর ভাই সৈয়দ আলীর বড় ছেলের ঘরে আশ্রিত। ভয়াল করোনা যখন পৃথিবী কাঁপিয়ে বাংলাদেশে তখন ক্ষুদার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে লকডাউন মেনে নিরাপদে ঘরে থাকা হলোনা ভিক্ষুক রহিমা বেওয়ার। এতদিন তিনি বয়স্ক ভাতা’র মাসিক ৫০০ টাকায় বাজার এবং ভিক্ষার চাউলে চলেছেন। কিন্তু বয়স্ক ভাতার ১৫০০ টাকাও সবশেষ পেয়েছেন প্রায় চার মাস আগে।

ত্রাণের তালিকায় তার নাম সংযুক্ত না করায় কোনরকম খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন না স্বীকৃত ভিক্ষুক রহিমা বেওয়া। পিপরুল ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ দেওয়া হলেও সেই ত্রাণ সহায়তাও পাননি বৃদ্ধা রহিমা। তার নামটি রাখা হয়নি সরকারী ত্রাণের তালিকাতেও। বৃদ্ধা যখন লকডাউনের সময়ে ঘরে থেকেও কোন ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না, তখন ক্ষুধার যন্ত্রণায় বেঁচে থাকার তাগিদে বাধ্য হয়েই আবার নেমেছেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। তিনি অশ্রু মিশ্রিত চোখে বুঝাচ্ছিলেন তার অসহায় দিন যাপনের কথা।

বিধবা-ভিক্ষুক এই বৃদ্ধা সরকারী/বেসরকারী কোন ত্রাণ না পেয়ে বাধ্য হয়েই লকডাউন অমান্য করে ভিক্ষা করছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। ত্রাণ না পেয়ে বয়সের অঙ্কে ৮০ পার করা এই বৃদ্ধাকে ভিক্ষা করতে দেখলে সমাজের মানবিকতাকে কেবল বিকলাঙ্গ বলেই মনে হয়।

বৃদ্ধা অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন তার ভিটা-মাটি নাই, স্বামী-সন্তানও নাই। স্বামী মারা যাবার পর মধ্যবয়সে বাবার বাড়ি চলে আসেন, তারপর আর বিয়ে করেননি। বাবা মারা যাওয়ায় উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় পেটের দায়ে ভিক্ষা করে জীবন চালাতে শুরু করেন। করোনা ভাইরাস আসার পর লোকের বাড়ি বাড়ি যাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে তার, ঘরে খাবার নাই। সরকার খাবার দ্রব্য দিচ্ছে কিন্তু তার নামটা দেয়নি। বয়স্ক ভাতায় নাম আছে জন্য এবারে সরকারী ত্রাণের তালিকায় তার নাম দেওয়া নেই কিন্তু বয়স্ক ভাতার ১৫০০ টাকা পেয়েছেন সবশেষ চার মাস আগে ওগুলো শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই, তারপর লোকের বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করেই চলছিলেন তিনি। বয়স্ক ভাতায় নাম থাকায় তিনি সেই সুবিধা পেয়েছিলেন সত্য কিন্তু চার মাস আগে। ভিক্ষার উপর যার জীবন চলে তাকে ঐ চার মাস আগে দেওয়া সুবিধার জন্য তিনি করোনার ত্রাণ পাবেন না,তিনি লকডাউনে ভিক্ষাও করতে পারবেন না। তবে তিনি চলবেন কি করে? খাবেন কি?

লকডাউনে দুঃস্থ রহিমার ভিক্ষাবৃত্তির কথা শুনে ইউপি সদস্য শাহজাহান তাৎক্ষণিকভাবে বৃদ্ধাকে নিজ অর্থায়নে সাত দিনের চাউলের টাকা দান করেন এবং ভাসমান তালিকার ত্রাণ না আসা পর্যন্ত বৃদ্ধাকে প্রয়োজনে সহায়তা দিবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। এই দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ভিক্ষাবৃত্তির উপর নির্ভরশীল মানুষেরা।কারণ ভিক্ষা না পেলে এদের উনুনে পাতিল চলে না। টিকে থাকুক সহায়তা আর আশ্বস্ততায় মানবতা।

আরও দেখুন

অতিরিক্ত ভালোবাসা ঠিক নয়

নজরুল ইসলাম তোফা: আমরা জীবনে চলার পথে বহু মানুষকে “ভালোবাসা” দিয়ে দিয়ে থাকি। হয়তো আমরা …