নীড় পাতা / জাতীয় / ভিক্ষুক পুনর্বাসনে বরাদ্দ পাঁচ গুণ করা হচ্ছে

ভিক্ষুক পুনর্বাসনে বরাদ্দ পাঁচ গুণ করা হচ্ছে

নিউজ ডেস্ক:
করোনার প্রভাবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আয় কমেছে। দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হয়েছেন। কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় অনেকে অন্যের সহায়তা নিয়ে দিন পার করছেন। এ অবস্থায় ভিক্ষুকের সংখ্যা বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান’ কর্মসূচিতে বরাদ্দ পাঁচ গুণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে চলতি অর্থবছরের মাঝপথে এসে সরকার এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৩ হাজার ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেয় সরকার। এ জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৬ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে এ বরাদ্দ ২৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ৩০ কোটি টাকা করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে কমপক্ষে ১৫ হাজার ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১৮টি বিশেষ কার্যক্রম খাতে চলতি অর্থবছরে ৭ হাজার ৪৬৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ঋণ কার্যক্রম থেকে ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। আর ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও আইন) সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, করোনার কারণে অনেক মানুষের পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ভিক্ষুক বা ছিন্নমূল মানুষদের সহায়তায় নতুন করে একটি কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সব ভিক্ষুককে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা হবে। এ জন্য সংশোধিত বাজেটে এ সংক্রান্ত বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ১২ জানুয়ারি অর্থ বিভাগের সঙ্গে সংশোধিত বাজেট সংক্রান্ত বৈঠকে এ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, ভিক্ষুকসহ সব ধরনের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্নিষ্ট অন্যান্য দপ্তর একমত। ফলে এ খাতে বরাদ্দ আরও বেশি হতে পারে।

দেশে দারিদ্র্য নিরসন এবং ভিক্ষাবৃত্তির মতো অমর্যাদাকর পেশা থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে সরকার ‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’ শীর্ষক কর্মসূচি হাতে নেয়। ২০১০ সালের আগস্টে কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু হয়। শুরুর দিকে এটি ব্যাপকতা পায়নি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো দেশের ৫৮টি জেলায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য টাকা ছাড় করা হয়। ওই বছর বরাদ্দ দেওয়া হয় তিন কোটি টাকা। পরের দুই অর্থবছরেও একই পরিমাণ বরাদ্দ ছিল। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার এ খাতে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।

প্রাচীনকাল থেকেই মানবসমাজে ভিক্ষাবৃত্তি চলে আসছে। উপমহাদেশেও এর ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের শোষণ, বঞ্চনা এবং নদীভাঙন, দারিদ্র্য, রোগ-ব্যাধি, অশিক্ষা ইত্যাদি কারণে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। বর্তমান সময়ে কিছু মানুষের কর্মবিমুখতা, কর্মে অক্ষম হয়ে যাওয়া এবং এক দল স্বার্থান্বেষী মহলের অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। গত দুই বছর করোনার ফলে অনেকে নতুন করে ভিক্ষাবৃত্তিতে এসেছেন। বর্তমানে দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে। স্বল্পোন্নত দেশের অবস্থান থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণ ঘটছে। ভিক্ষাবৃত্তির লজ্জা থেকে দেশকে মুক্ত করতে সরকার সামাজিক এ ব্যাধি দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর কিছু এলাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এলাকাগুলো হচ্ছে- বিমানবন্দরে প্রবেশপথের পূর্ব পাশের চৌরাস্তা, বিমানবন্দর পুলিশ ফাঁড়ি ও এর আশপাশ এলাকা, হোটেল র‌্যাডিসন সংলগ্ন এলাকা, ভিআইপি রোড, বেইলি রোড, হোটেল সোনারগাঁও ও হোটেল রূপসী বাংলা সংলগ্ন এলাকা ও কূটনৈতিক জোন। এসব এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হলেও তা বাস্তবায়ন বেশ কঠিন। ভিক্ষুকরা এসব এলাকাতেও যান। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ঢাকা শহরের ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষিত এলাকায় ১৮টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এতে ১৮০ জন পেশাদার ভিক্ষুককে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ৭২ জনকে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১০৮ জনকে তাদের পরিবারে পুনর্বাসন করা হয়।

আরও দেখুন

প্রেমের সম্পর্কের ফাঁদে ফেলে তরুনীকে ধর্ষণ,থানায় মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোরের নলডাঙ্গায় বিয়ের প্রলোভনে প্রেমিকাকে ধর্ষণ করেছে রুবেল নামের প্রেমিক ও তার দুই …