নীড় পাতা / অর্থনীতি / বড় অঙ্কের অর্থ মিলবে ॥ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে পাশে থাকার

বড় অঙ্কের অর্থ মিলবে ॥ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে পাশে থাকার

  • চলতি মাসে বিশ্বব্যাংক দিচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা
  • ৪৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ চুক্তি প্রক্রিয়াধীন
  • সহযোগিতা করবে এডিবি, জাইকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন

এম শাহজাহান ॥ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে দাতাদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে। প্রথম ঢেউ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলার কারণে দ্বিতীয় দফায় দাতাদের আশ্বাস মিলেছে খুব সহজে। চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া যাবে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা), ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। করোনার টিকা আমদানি, চিকিৎসার সরঞ্জামাদি কেনা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বাজেট ব্যয় মেটাতে দাতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করা হবে। দাতা সংস্থার সঙ্গে আরও ৫০৮ কোটি ডলার ঋণচুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪৩ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। জানা গেছে, করোনার প্রথম ধাক্কা সামলাতে দাতাদের কাছ থেকে প্রায় ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বড় অংশ ইতোমধ্যে ছাড় হয়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা। এই ধকল সামাল দিতে আবার নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় করোনার টিকা আমদানি। দেশের প্রতিটি মানুষকে করোনার টিকা নিশ্চিত করতে হলে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে, নাগরিকদের এই টিকা দেয়া হবে বিনামূল্যে। চলতি বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি থোক বরাদ্দ রাখা হলেও বাজেট ঘাটতি বেশি থাকায় দাতাদের সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি জরুরী হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রণোদনার আওতায় ২১ প্যাকেজে ১ লাখ ২০ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে হলে প্যাকেজের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এ কারণে প্যাকেজ ২১ থেকে বাড়িয়ে ২৫ করা হতে পারে। প্যাকেজ বাড়লে টাকার পরিমাণও বাড়াতে হবে। এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, করোনার টিকা আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে তা কেনার প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের। প্রত্যেক ব্যক্তিকে দুই ডোজ টিকা দিতে হবে। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য খরচ হতে পারে ১০ থেকে ১২ ডলার। সবমিলিয়ে দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষকে টিকা দিতে ২০০ কোটি ডলার বা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে। বিপুল পরিমাণ এই অর্থ জোগানে সম্প্রতি দাতা সংস্থাগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছে সরকার। ওই চিঠিতে প্রথম দফার প্রতিশ্রুত অর্থ দ্রুত পাওয়াসহ নতুন করে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, করোনার টিকা কেনার জন্য চলতি মাসের শুরুতে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে ঋণ চেয়ে চিঠি দিয়েছে। টিকা আবিষ্কারের পর দ্রুত তা কিনতে যাতে অর্থ সঙ্কটে পড়তে না হয়, সে জন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে ঋণ চাওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, করোনার টিকা কেনার জন্য ইতোপূর্বে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে মোট ২৫০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হয়। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি ডলার, এডিবির কাছে ৫০ কোটি ডলার, জাইকার কাছে ৫০ কোটি ডলার, এআইআইবির কাছে ৫০ কোটি ডলার, জার্মানির কাছে ২৫ কোটি এবং ফ্রান্সের কাছে ২৫ কোটি ডলার ঋণ চায় ইআরডি। এসব অর্থেও একটি বড় অংশ দেশে এসে গেছে। কিছু অর্থ আসার প্রক্রিয়ায় আছে। গত এপ্রিলে এডিবি বাংলাদেশকে ১০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ছিল ৮৫০ কোটি টাকা। এবার করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলা, বাজেট বাস্তবায়ন এবং অবকাঠামো উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ঋণ চাওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণপ্রাপ্তির ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। বিশ্বব্যাংক এরই মধ্যে ইআরডিকে জানিয়েছে, করোনার টিকা কেনার জন্য তারা ৬০০ কোটি ডলারের যে তহবিল গঠন করেছে, সেখান থেকে ঋণ পেতে আবেদন করা ১০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আজিজুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, করোনা মোকাবেলায় এবং বাজেট সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে দ্বিতীয় দফায় আরও ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চাওয়া হয়েছে। সংস্থাটির কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ঋণ মঞ্জুর করবে। তিনি বলেন, প্রথম দফায় করোনা যেভাবে সামাল দেয়া হয়েছে ঠিক একইভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করা হবে। এজন্য বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দাতাসংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। ঋণ প্রাপ্তির এই অর্থ করোনা মোকাবেলায় ব্যয় করবে সরকার।

জানা গেছে, গত বছরের মার্চ মাস থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে কত টাকা ঋণ পেয়েছে এবং কত টাকা ঋণ পাবে, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, এআইআইবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে ১৫৬ কোটি ডলার ঋণচুক্তি সই করেছে সরকার। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটেও কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বিশেষ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর আওতায় করোনার টিকা আমদানি, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন এবং বাজেট ঘাটতি মেটানো হবে। চলতি বাজেটে বিদেশী সহায়তা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা যা, গত অর্থবছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। এই অর্থ সংগ্রহে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ও আইএমএফের সহায়তার ওপর। এ প্রসঙ্গে অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, করোনা মোকাবেলায় ও বাজেট সহায়তার জন্য দাতাদের কাছে ঋণ চাওয়া হচ্ছে। প্রণোদনা প্যাকেজ সংক্রান্ত বৈঠকে এবার তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। কোভিড মোকাবেলার বিষয়টি তারা ভালভাবে অবগত আছেন। দাতা সংস্থাগুলো ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর কথা বলেছে। এদিকে করোনা মোকাবেলায় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিরিজ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর, এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং জাপানের রাষ্ট্রদূত। বৈঠকে প্রতিনিধিরা করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।

আরও দেখুন

পুঠিয়ায় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে রাতের আঁধারে চলছে পুকুর খনন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর পুঠিয়ায় রাতের আঁধারে ফসলি জমিতে পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, পুকুর …