শুক্রবার , এপ্রিল ২৬ ২০২৪
নীড় পাতা / আইন-আদালত / বৃদ্ধা রেহেনাকে যেভাবে খুন করে সিরিয়াল কিলার বাবু শেখ ও তার দুই সহযোগী

বৃদ্ধা রেহেনাকে যেভাবে খুন করে সিরিয়াল কিলার বাবু শেখ ও তার দুই সহযোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগাতিপাড়াঃ
বৃদ্ধা রেহেনা বেগমকে খুন করে ১৫ হাজার টাকা চুরি করেন বাবু শেখ ও তার দুই সহযোগি। গত শুক্রবার তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া বাবু শেখকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এমন তথ্য দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাজ্জাদ। শুক্রবার রেহানা বেগমকে খুনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাবু শেখের জবানবন্দী রেকর্ড করতে তাকে নাটোর আদালতে নেয়া হয়। একই মামলায় বাবু শেখের দুই সহযোগির মধ্যে আসাদুলকে তিন দিনের এবং রুবেলকেও একদিনের রিমান্ডে আনা হয়।

তদন্তকারী কর্মকর্তা বাগাতিপাড়া মডেল থানার এসআই সাজ্জাদ জানান, গত বুধবার বাবু শেখকে তিনদিনের রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বাবু শেখ বৃদ্ধা রেহেনা বেগমকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। ঘটনার দিন (৯ অক্টোবর) রাতে পার্শ্ববর্তী নাটোরের লালপুর উপজেলার আনসার সদস্য সাহেরা বেগম নামের এক নারীকে হত্যার পর এক কিলোমিটার যাওয়ার পরই বাবু শেখ, তাঁর সহযোগী আসাদুল ও রুবেলের দ্বিতীয় খুন করার ইচ্ছে জাগে।

এরপরই বাগাতিপাড়া উপজেলার জয়ন্তীপুর গ্রামে রাস্তার পাশের এক বাড়িতে জানালা দিয়ে রেহেনা বেগম (৬০) কে ঘুমাতে দেখেন। ছাদের ওপর দিয়ে তার সহযোগি রুবেল প্রথমে ঘরে ঢোকেন। এরপর ভেতর থেকে রুবেল গেট খুলে দিলে বাবু শেখ ও আসাদুল ঘরে ঢুকে পড়েন। এরপর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘুমন্ত বৃদ্ধাকে হত্যা করেন। পরে ড্রয়ের থেকে পনের হাজার টাকা চুরি করেন। এরপর শোকেসের কাঁচ ভাঙতে গিয়ে জোরে শব্দ হওয়ায় লোকজন ছুটে এলে তারা পালিয়ে যান। খুনের পর তারা মালঞ্চি রেল স্টেশনে এসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করেন। পরে সকালে ট্রেনযোগে তারা নাটোর রেলস্টেশনে যান।

এসআই সাজ্জাদ বলেন, গত ৯ অক্টোবর সকালে শয়ন ঘর বিছানা থেকে গলায় ওড়না পেঁচানো রেহেনা বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনায় নিহতের বড় ছেলে গোলাম কবির নান্নু বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। রেহেনা বেগম উপজেলার জয়ন্তিপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক মৃত ইউনুস আলীর মেয়ে এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুর এলাকার সাফাতুল্লাহর স্ত্রী।

এদিকে কিলার বাবু শেখ সম্পর্কে জানা যায়, চুরি করতে বিভিন্ন বাড়িতে ঢুঁকতেন দল বেঁধে। সেখানে কোনো নারীকে একা পেলেই ধর্ষন করতেন। এরপর খুন করে সটকে পড়তেন। গত ছয় বছরে এমন ১০ জনকে খুন করেছেন বাবু শেখ। কয়েক দফায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি সাতটি খুনের দায় স্বীকার করেছেন। বাঁকিগুলোর ব্যপারে রিমান্ডে তথ্য দিয়েছেন। সবশেষ শুক্রবার তিনদিনের নেয়া রিমান্ডে বাগাতিপাড়া উপজেলার বৃদ্ধা রেহেনা বেগমকে খুনের তথ্য দিয়েছেন।

পুলিশ বলছে, বাবু শেখকে গত ২০ অক্টোবর নাটোর রেলস্টেশন থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর তাঁকে কয়েক দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়। ২১ অক্টোবর থেকে তিনি পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ এবং কয়েক দফায় আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে নয়জন নারী ও এক জন শিশুকে খুনের কথা স্বীকার করেন। এর মধ্যে অন্তত ৫ জন নারীকে খুনের আগে ধর্ষনও করেছেন। বাবু শেখ আরও কয়েকটি নামে পরিচিতি রয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে বাবু শেখ ওরফে আনোয়ার হোসেন ওরফে আনার ওরফে কালু। নওগাঁর রানীনগর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের জাহের আলীর ছেলে বাবু শেখ। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই খুনি নাটোর জেলা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এরপর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে একে একে সব খুনের কথা স্বীকার করেন তিনি। এসব খুনের দায় স্বীকার করে স¤প্রতি কয়েক দফায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বাবু শেখ।

নাটোরের পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মৎস্যশিকারির বেশে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন বাবু শেখ। আর সুযোগ পেলেই খুন করতেন। কখনো একা, কখনো দু-চারজন সহযোগীকে সঙ্গে নিতেন। তার দেয়া তথ্যে ভিত্তিতে তার সঙ্গে খুনে অংশ নিয়েছেন এমন অন্তত সাতজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ তালিকায় তাঁর ছেলে ও জামাতা রয়েছে। একের পর এক খুন করলেও বাবু শেখ কখনো ধরা পড়েননি। বাবু শেখ এ জবানবন্দিতে জানিয়েছেন ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি এসব খুন গুলো করেছেন।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেছেন, বাবু শেখ ছোটখাটো চুরি করতে গিয়ে নারীদের হত্যা করেছেন। তিনি কোন প্রমাণ রাখতে চাননি। এ যেন আরেক রসু খাঁ।

আরও দেখুন

বৈশাখের খরতাপে চলনবিলে শ্রমিকের মাঝে স্যালাইন-পানি বিতরণ অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশাখের তীব্র তাপদাহে মানুষ ও প্রাণীকুলের জীবন-যাপন হাঁসফাঁস অবস্থা। বিশেষ করে চলনবিলের কৃষি …