নীড় পাতা / টপ স্টোরিজ / বিভাবরী সূর্যটা উঠবেই—

বিভাবরী সূর্যটা উঠবেই—

সুমনা আহমেদ

আমাকে বন্ধুরা সবাই জিজ্ঞেস করছে গৃহবন্দি বা home quarantine অবস্থায় আমার দিন কিভাবে কাটছে? কারন, আমার ঘনিষ্টজনেরা জানেন যে আমি একজন ‘workaholic’. আমি কাজ পাগল একজন মানুষ। সেটা অফিসের কাজ হোক বা আমার ব্যাবসার কাজ হোক কিম্বা সংসারের কাজ হোক। I’m always on the go. আমি বিশ্বাস করি কাজেই মুক্তি…কাজেই বেঁচে থাকা! আমার বিশ্বাস এই পৃথিবীতে আমাদের একটা purpose আছে। স্রষ্টার আমাদের সবাইকে নিয়ে কোন না কোন পরিকল্পনা আছে। কোন না কোন প্রয়োজনে আমি/আমরা এখানে এসেছি/আছি আর যতক্ষন আমার/আমাদের প্রয়োজন আছে ততোক্ষন আমি/আমরা থাকবো। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে আমি/আমরা বিদায় নেব।

যাইহোক, home quarantine এর দিনগুলো কেমন যাচ্ছে? খারাপ যাচ্ছেনা। নিজের সাথে পরিবারের সাথে অনেক সময় দিতে পারছি। আমার হারিয়ে যাওয়া ‘আমি’কে আবার খুঁজে পাচ্ছি। আমার যে ‘আমি’টা হারিয়ে গিয়েছিল বা যেতে বসেছিল প্রতিদিনের ‘ইঁদুর দৌড়ে’, করোনার গৃহবন্দি অবস্থা আবার সেই ‘আমি’ টাকে ফিরে পেতে সাহায্য করছে। সত্যি কথা বলতে কি, খুব খারাপ যাচ্ছেনা, আমার সময়গুলো। কারণ, এইরকম নিরবচ্ছিন্ন অবসর এই জন্মে আমি পাইনি কখনো। সেই ছেলেবেলা থেকেই চলছে সেই দৌড়, সেই প্রতিযোগিতা। সেই শৈশবে কখনো স্কুলে প্রথম হওয়ার প্রতিযোগিতা, কখনোবা গান গেয়ে বা ছবি এঁকে প্রথম হওয়ার প্রতিযোগিতা। আজও চলছে সেটা… এখন চলছে কর্পোরেটের সিঁড়ি বেয়ে উপরের থেকে উপরে উঠার প্রতিযোগিতা। জানিনা এর শেষ কোথায়!

করোনা ভাইরাস একটা ভাল কাজ করেছে—আমাদেরকে থামিয়ে দিয়েছে। সারা বিশ্বকে একসাথে থামিয়ে দিয়েছে। আমরা সবাই ঘরে আছি। নিজের পরিবারের সাথে সময় কাটাচ্ছি। নিজে প্রতিদিন ফ্রেশ হোম কুক মিল রান্না করছি। ভর দুপুরে অফিসের মিটিং এ সময় ব্যায় না করে নিজের ঘরে শুয়ে বসে একটু বই পড়তে বা বিশ্রাম নিতে পারছি… নিজের ব্যাকইয়ার্ডের ফুলগাছগুলোর পরিচর্যা করতে পারছি… Finally we have the time to stop and smell the roses! কিন্তু, এত কিছুর পরেও আমি বা আমরা ভালো নেই।আমার জন্ম বাংলাদেশে এবং শৈশব/ কৈশোর কেটেছে সেখানে… আমার হৃদয়ের বিশাল একটা অংশ জুড়ে আছে বাংলাদেশ—দেশের অসহায় মানুষগুলো…কি নিদারুন অসহায় তারা! তাই বার বার মন ফিরে যায় সেখানে—আমার সোনার বাংলায়। ‘মা তোর বদনখানি মলিন হলে, আমি নয়ন জলে ভাসি’—সত্যিই আমার নয়ন ভেসে যায় জলে। সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই…’আমারে তুমি অশেষ করেছ’— যেভাবে রেখেছেন অনেক ভাল রেখেছেন কিন্তু বার বার মনে চলে যায় আমার সেই চির চেনা বাংলায়…মনে পড়ে সেই সব অসহায় নিরন্ন মুখগুলো…এই দূ:সময়ে তারা কেমন আছে…

আমাদের সামান্য সাহায্য পারে তাদের মুখে একটু হাসি ফুটাতে। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করি। আমরা সবাই যদি আমাদের সামর্থ্য অনুসারে এগিয়ে আসি-তাহলে এই দূর্যোগ পাড়ি দিতে অবশ্যই পারবো। আসুন না এই দূ:সময়ে একটু সহযোগীতার হাত বাড়াই ওই অসহায় মানুষদের জন্যে…আমরা সবাই সীমাবদ্ধ মানুষ। আমাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেই আমরা কি পারিনা একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে…আমরা কি পারিনা একটা বা দুটো পরিবারকে সাহায্য করতে। দায়িত্ব নিতে। শুধু সরকার বা বিত্তবানদের দিকে না তাকিয়ে থেকে, কিম্বা শুধু নিজেদের কথা না ভেবে আমরা কি একটু ভাবতে পারিনা ওদের কথা? আমাদের এইটুকু সহানুভূতি কি ওরা পেতে পারেনা? সবাই ভালো থাকবেন। নিরাপদে থাকবেন। নিশ্চয়ই আবার আমাদের বিভাবরী সূর্যটা উঠবেই। একদিন না হয় একদিন…

#coronavirus 04/04/2020 Las Vegas, Nevada, USA

আরও দেখুন

লালপুরে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, লালপুর: আসন্ন উপজেলা পরিষদের ২য় ধাপ নির্বাচনে নাটোরের লালপুরে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ …