রবিবার , এপ্রিল ২৮ ২০২৪
নীড় পাতা / জনদুর্ভোগ / বনপাড়া-হাটিকুমরুল-ঢাকা মহাসড়কে উপচে পড়া ভীড় গণপরিবহণ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

বনপাড়া-হাটিকুমরুল-ঢাকা মহাসড়কে উপচে পড়া ভীড় গণপরিবহণ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়াইগ্রাম:
গার্মেন্টস শিল্প-কারখানা খোলার নির্দেশনা জারির পর থেকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল-ঢাকা মহাসড়কে ঢাকাগামী যাত্রীদের চাপ আকস্মিক ব্যাপক বেড়ে গেছে। শুক্রবার রাত থেকেই বড়াইগ্রাম থানার মোড় ও বনপাড়া বাইপাস মোড়ে যাত্রীদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। কর্মস্থলে ফিরতে শিশু সন্তানসহ হাজার হাজার নারী-পুরুষের ভীড় থাকলেও মহাসড়কে গণপরিবহণ চালু না থাকায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। বাধ্য হয়ে রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে চেপে ঢাকায় ফিরছেন তারা। এদিকে, দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি ভাড়া গুণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় ফেরা লোকজনের মধ্যে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধির বালাই চোখে পড়েনি।

করোনা পরিস্থিতিতে যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধের ফলে যাত্রীবাহী গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু রোববার থেকে গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণায় চাকরীজীবি ও গার্মেন্টস কর্মীরা ছুটছেন ঢাকাসহ পাশ্বর্বর্তী জেলার শিল্পাঞ্চলগুলোতে। শনিবার দুপুরে বনপাড়া বাইপাস মোড়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে যেভাবে পারছেন কর্মস্থলে ফেরার চেষ্টা করছেন। শিশু, নারীসহ বিভিন্ন বয়সী যাত্রীরা দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে চড়ে বসছেন ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, সিএনজি, ভুটভুটি, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার এমনকি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে। ট্রাকে বসার জায়গা না থাকায় গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েই যাচ্ছেন তারা। কোন প্রকার ত্রিপল বা ছাউনী না থাকায় রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ফিরছেন।

এ সময় অনেক মহিলা ও পুরুষকে জীবনের মায়া ত্যাগ করে ট্রাক বোঝাই পণ্যের উপরে বসেও যেতে দেখা গেছে। এসব যাত্রীদের মধ্যে অনেক মহিলার সঙ্গে দুগ্ধপোষ্য শিশুও রয়েছে। যানবাহন ভেদে বনপাড়া থেকে গাজীপুর বাইপাইল ও চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত জনপ্রতি ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। লকডাউনের মধ্যেও সরকারী এই সিদ্ধান্তের ফলে কর্মস্থলে ফিরতে ভোগান্তি পোহানোর পাশাপাশি চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও পড়ছেন তারা।

এদিকে, বনপাড়া বাইপাসসহ মহাসড়কে সীমিত সংখ্যক পুলিশ দেখা গেলেও ট্রাকে যাত্রী পরিবহন, মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এতে মধ্যস্বত্তভোগী ও পরিবহন শ্রমিকরা লাভবান হলেও বাড়তি ভাড়া গুণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন যাত্রীরা।

কুষ্টিয়া লালনশাহ সেতু এলাকার মমতা বেগমের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, স্বামী, কিশোর সন্তানসহ তারা তিনজনই গাজীপুরে একটি স্পিনিং মিলে কাজ করেন। মোবাইলে ম্যাসেজ এসেছে যে, রোববার সকালে কাজে যোগদান করতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে বাস না থাকলেও যেতে হচ্ছে।

পাবনার দাশুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা মমতাজ খাতুন বলেন, ৫ আগষ্ট পর্যন্ত ছুটি দেয়ায় বাড়ি এসেছিলাম। এখন রাস্তায় বাস না ছেড়ে গার্মেন্টস খুলে দিয়েছে। আমার কোলে আড়াই মাসের শিশু বাচ্চা। এখন সন্তানের ও নিজের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে কখনও ভ্যানে, কখনও ট্রাকে কাজে ফিরছি। এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গার্মেন্টসে চাকরী করলেও আমরাও তো মানুষ। একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত দিয়ে আমাদেরকে এমন বিপদে ফেলার কি দরকার।

জেলার লালপুরের দুড়দুড়িয়া এলাকার আব্দুর রহিম বলেন, নির্দেশনা মেনে কাজে যোগ না দিলে চাকরী থেকে বাদ দেবে। তাই ছেলে-মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে কর্মস্থলে ফিরছি। গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত জনপ্রতি ৮০০ টাকা ভাড়া দিয়ে ট্রাকে উঠেছি। ট্রাকে কমপক্ষে ৬৫-৭০ জন যাত্রী রয়েছে। বসার সুযোগ নেই সারা পথ দাঁড়িয়ে যেতে হবে। সরকার গার্মেন্টস খুলে দেয়ার আগে স্বাস্থ্য বিধি মেনে গণপরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করলে আমাদেরকে অতিরিক্ত টাকা গুণে এমন ভোগান্তি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হতো না।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মোজাফ্ফর হোসাইন বলেন, ঢাকাগামী বিপুল সংখ্যক মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি যেন স্বাস্থ্যবিধিটা মানে এবং ভাড়া বেশি নিতে না পারে। ইতিমধ্যে কয়েকটি মামলা দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

আরও দেখুন

নন্দীগ্রামে পুরোদমে চলছে বোরো ধান কাটা-মাড়াই

নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়া জেলার শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত নন্দীগ্রাম উপজেলা। এখন এই উপজেলায় পুরোদমে চলছে …