নিজস্ব প্রতিবেদক, সিংড়া:
প্রেমে বাধা দেওয়ার ঘটনায় আরজু (২৭) নামের এক নৌকার মাঝিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া বাইজিদ বোস্তামী (১৮) ওই হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বাঁকি দুইজনকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এ নিয়ে সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানায় জেলা পুলিশ। নিহত আরজু মাঝি সিংড়া উপজেলার চামারি ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামের কদম আলীর ছেলে। অভিযুক্ত বাইজিদ গুরুদাসপুর উপজেলার বিলহরিবাড়ি গ্রামের নাছির বোস্তামীর ছেলে।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, আরজু মাঝির প্রতিবেশি এক স্কুলছাত্রীর সাথে বাইজিদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সেই সূত্র ধরে বাইজিদ ওই গ্রামে ঘন ঘন যাতায়াত শুরু করে। সম্প্রতি মেয়ে ঘটিত ওই বিষয় নিয়ে আনন্দনগর গ্রামে বাইজিদ ও তার তিন বন্ধুর সাথে আরজু মাঝির বাকবিতন্ডা হয়। এর এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
স্বীকারোক্তিতে অভিযুক্ত বাইজিদ জানিয়েছে, মূলত প্রেমে বাধা দিয়ে তাদের লাঞ্চিত করার প্রতিশোধ হিসাবেই আরজু মাঝিকে তিন বন্ধু মিলে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
পুলিশ সুপার আরো জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চলনবিল ভ্রমনের জন্য কৌশলে ৭’শ টাকায় আরজু মাঝির নৌকা ভাড়ায় নেয় অভিযুক্ত বাইজিদ ও তার বন্ধুরা। সন্ধার পর আরজু মাঝি তার নৌকায় বাইজিদদের নিয়ে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ঘটনার রাতে নৌকাটি গুরুদাসপুর উপজেলার হরদমা বিলে পৌঁছালে নৌকা থামিয়ে বাইজিদ ও তার বন্ধুরা মিলে গাঁজা সেবন করে। এক পর্যায়ে বাইজিদের দুই বন্ধুর একজন আরজু মাঝির পা ও গলা ধরে রশি দিয়ে নৌকার সাথে বেধে ফেলে। এ সময় বাইজিদ আরজু মাঝিকে প্রেমে বাধা দেওয়ার কথা বলে। প্রতিশোধ হিসাবে আরজু মাঝিকে খুন করার কথা জানায়। এ সময় আরজু মাপ চেয়ে বাঁচার আকুতি জানান। তাতেও মন গলেনি অভিযুক্তদের। এ সময় ১০ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবি করে তারা। টাকা আসতে দেরি হওয়ায় বাইজিদের এক বন্ধু চাইনিজ কুরাল দিয়ে আরজু মাঝির মাথার পিছনে কোপাতে থাকে। এতে আরজু নিস্তেজ হয়ে পড়লে বাঁধন খুলে বিলের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়।
এর আগে শনিবার গুরুদাসপুর উপজেলার বিলশা বিল থেকে সকাল ৯টার দিকে পুলিশ আরজু মাঝির ভাসমান মরহেদ উদ্ধার করা হয় ( সিংড়া থেকে নিখোঁজ নৌকার মাঝির মরদেহ উদ্ধার)।
পুলিশ আরো জানায়, সিংড়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার জামিল আকতার এর নেতৃত্বে হত্যার রহস্য উদঘাটন করে তিনজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে অভিযুক্ত বাইজিদকে গুরুদাসপুর উপজেলার বেড়গঙ্গারামপুর গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার অপর দুই বন্ধু পলাতক রয়েছে।
এ বিষয়ে সিনিয়র এএসপি জামিল আকতার বলেন, আরজু মিয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করি। মৃত দেহের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখে আমরা নিশ্চিত হই এটা হত্যাকান্ড। নিহত আরজু মিয়ার পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কোন তথ্য দিতে পারেন না। এজন্য আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা আসামি বাইজিদ বোস্তামীকে সনাক্ত করি। এরপর রাতভর অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের বিষয় স্বীকার করেছে। পলাতক দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।