নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / পিপরুল ইউনিয়নের পাট বীজ ও সার কোথায় গেল!

পিপরুল ইউনিয়নের পাট বীজ ও সার কোথায় গেল!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চলতি মৌসুমে “উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাট বীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পাট উৎপাদনকারী চাষীদের মাঝে ৯৮৯৭ এবং বিএডিসি পাট- ১৮ জাতের পাট বীজ বিতরণ ও সার বিতরণে নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলতি মৌসুমে পাট বীজ ও সার বিতরণে নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়নের চেয়াম্যান কলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পাওয়া যায় এবং তার সত্যতাও মিলেছে।

চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিন সাক্ষরিত একটি মাষ্টার রোল নারদ বার্তার হাতে আসলে সেটি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে টিম নারদ বার্তা। অনুসন্ধানে জানা যায় পিপরুল ইউনিয়নে ১০০ জন কৃষকের মধ্যে এক কেজি করে সার বীজ দেয়ার কথা থাকলেও অন্যান্য ইউনিয়নে কৃষকের পাট বীজের চাহিদা কম থাকায় পিপরুল ইউনিয়নে ১৫০ জন কৃষককের জন্য এক কেজি পাট বীজ বরাদ্ধ করা হয়। তবে এখানেও স্বজনপোষণ করা হয় পাট বীজ কাউকে কাউকে ২ কেজি করে দেয়া হয়। প্রতি কৃষককে ইউরিয়া ৬ কেজি, টিএসপি ৩ কেজি, এ্যামোনিয়া ৩ কেজি সার বরাদ্দ থাকলেও অধিকাংশ কৃষক কোন সার পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। এমনও অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যান সার নিয়ে তার মাছের পুকুরের দিয়েছেন।

মাষ্টাররোল তালিকা ধরে অনুসন্ধানে দেখা যায় তালিকাতে যাদের নাম রয়েছে তারা বীজ ও সার কোনটিই পাননি। এক জনের নাম অন্য জনের মুঠোফোন নাম্বার। তালিকাতে এমন একজনের নাম রয়েছে যিনি নাটোর জেলার বাসিন্দা নন তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায় তার বাড়ি শরিয়তপুর জেলাতে। ৫০ জনের তালিকাতে ১১ জনের যোগাযোগের জন্য কোন নাম্বার নেই। কৃষকদের বলা হয়েছে তোমাদের নাম তালিকায় রয়েছে টিপ সই দাও। পরে জানানো হয় এবার না আগামীবার পাবে। এভাবেই চলে আসছে। আর এ সুযোগে এক শ্রেণীর মানুষের আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ। যারা সঠিক ভাবে পাট বীজ ও সার পেয়েছেন তারা স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত। চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিনের গ্রাম ঠাকুর লক্ষীকূল। চেয়ারম্যানের ভাষ্যমতে ১৫০ জনকে পাট বীজ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে ৫০ জনই ঠাকুর লক্ষীকূল গ্রামের। মাষ্টাররোলে যাদের নাম , মুঠোফোন নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে তারা কেউ চেয়ারম্যান মেম্বারদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি হয়নি। তবে তারা সকলেই নারদ বার্তার কাছে তাদের এ বিষয়ে সকল তথ্য দিয়েছেন।

জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা অজিত কুমার রায় নাটোরের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। এবিষয়ে তিনি নারদ বার্তাকে জানান, চেয়ারম্যানদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিয়নে পাট বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। এরপর তারা যদি এটি নিয়ে দূর্নীতি করে থাকেন তাহলে বিষয়টি খুব দুঃখজনক। তদন্ত করে অনিয়ম পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাট উপ-সহকারী নাটোর, রুবিনা খাতুন পাট বীজ ও সার বিতরণ কমিটির সদস্য সচিব। তিনি জানান, তালিকা অনুযায়ী প্রত্যক ইউনিয়নে বীজ ও সার ভাগ করে দিয়েছি। তবে করোনার কারণে নিজে উপস্থিত থেকে দেখতে পারিনি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এমনটি করে থাকতে পারে। এরপর থেকে আমি নিজে উপস্থিত থেকে তালিকায় নাম থাকা কৃষকদের মাঝে সঠিকভাবে বিতরণ করব।

পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে কোন রকম অনিয়ম হয়নি। কেউ হয়ত উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে এমন অভিযোগ করেছে। সাক্ষ্য প্রমাণের কথা বললে চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি যারা বলেছে তাদের সঙ্গে উনি যোগযোগ করে দেখবেন এর সত্যতা কতটুকু।

নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পাট বীজ ও সার বিতরণ কমিটির প্রধান ওজাহাঙ্গীর আলম জানান, এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রমাণ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, এ বিষয়টি আমার জানা নেই তবে অবশ্যই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঠাকুর লক্ষীকূল এলাকার মেম্বার মজিবর রহমান অসুস্থ হয়ে রাজশাহী মেডিকলে কলেজ হাসপাতালে ভর্ত্তি থাকায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরও দেখুন

পুঠিয়ায় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে রাতের আঁধারে চলছে পুকুর খনন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর পুঠিয়ায় রাতের আঁধারে ফসলি জমিতে পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, পুকুর …