শুক্রবার , এপ্রিল ২৬ ২০২৪
নীড় পাতা / টপ স্টোরিজ / নাটোরে বন্ধ হবেকি পুকুর কাটা?

নাটোরে বন্ধ হবেকি পুকুর কাটা?

পরিতোষ অধিকারী

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ কালে সবাই ব্যস্ত রোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণে। কি জেলা প্রশাসন কি পুলিশ আর কিবা বেসরকারি সংগঠন খাদ্য সহায়তা বিতরণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপাদান বিতরণসহ চালিয়ে যাচ্ছে নানা কার্যক্রম। আর সেই সুযোগে ভূমি খেকোরা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের পুকুর খনন। দিনের বেলায় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সাধারণ জনগণ বাধা দেয় বলে এখন পুকুর কাটা হচ্ছে রাতের বেলায়। পুকুর কাটায় যেমন ফসলী জমি নষ্ট হচ্ছে তেমনি মাটি টানার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর চলাচলে রাস্তা-ঘাট দ্রুত নষ্ট হচ্ছে,পরিবেশ দুষণ করছে ধুলা আর কালো ধোঁয়ায়। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় পাশের জমির ফসল উৎপাদনও ব্যহত হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে পাকা রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর ধসে পড়ছে পুকুরে। এই পুকুর মালিকরা প্রভাবশালী বলে ক্ষতিগ্রস্ত কেউ মুখ খুলতেও সাহস পাননা।

ফাইল ছবি: লালপুর -নারদ বার্তা

নাটোরে ফসলী জমি নষ্ট করে পুকুর খননের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট। ঢাকায় লইয়ার্স সোসাইটি ফর ‘ল’ নামের একটি সংগঠনের পক্ষে মহাসচিব এড. মেজবাহুল ইসলাম আতিকের জনস্বার্থে দায়ের করা রিটের প্রেক্ষিতে বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ২০১৯ সালের ১২ মে এ নির্দেশ দেন। আদালত নাটোর জেলায় কৃষি জমিতে সব ধরনের পুকুর খননের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এ বিষয়ে তদারকি ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, নাটোরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসি(ল্যান্ড) ও থানার ওসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা উপেক্ষা করে কেউ পুকুর খনন করলে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা যাবে বলে জানান রিটকারীর আইনজীবী এ্যাড. জালাল উদ্দিন উজ্জ্বল।

ফাইল ছবি: বড়াইগ্রাম -নারদ বার্তা

আদালতের আদেশ অগ্রাহ্য করে বেশ কয়েক বছর ধরে নাটোরে বিভিন্ন উপজেলায় মহামারি আকারে চলছে পুকুর খনন। যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করছে। নাটোরের সর্বত্র তিন-ফসলী জমিতে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। মাটি ব্যবসায়ী ও ইঁটভাটা ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে কৃষকরা পুকুর খনন করে মাছ চাষ করে যাচ্ছে। নাটোরের বিভিন্ন উপজেলায় তিন ফসলী জমিতে অসংখ্য পুকুর খনন করা হচ্ছে। সরকারের নীতিমালায় তিন-ফসলী জমিতে পুকুর খননের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা, বিধি-নিষেধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

ফাইল ছবি: গুরুদাসপুর -নারদ বার্তা

জনগণ অনেক সচেতন হয়েও পুকুর খনন বন্ধ করতে পারছেন না। স্বপ্রণোদিত হয়ে জনগণ প্রশাসনকে খবর দিলেও অনেক সময় তা আমলে না নেয়ার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। অবৈধভাবে পুকুর খননের জন্য বড় ধরণের শাস্তি না থাকায় পুকুর খনন বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হলেও কোন কোন ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করা গেছে। গত সপ্তাহে সদর উপজেলার হালসা ইউনিয়নে ৩ ফসলী জমিতে পুকুর খননের খবর পেয়ে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) ঘটনাস্থলে গিয়ে পুকুর কাটা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। সেইসাথে ৩ দিনের মধ্যে খননকৃত অংশ ভরাট করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। তা না হলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন। তাতে কাজও হয়েছে বলে জানা গেছে। জমির মালিক সেই পুকুর ভরাট করে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে সহকারী কমিশনার(ভূমি) অফিসে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

ফাইল ছবি: গুরুদাসপুর -নারদ বার্তা

প্রতিদিন জেলা প্রশাসকের নিয়োজিত ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন উপজেলায় পুকুর কাটা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন জমির মালিককে লক্ষ লক্ষ টাকা জরিমানাও করছেন। জরিমানা দিয়ে সাময়িক পুকুর কাটা বন্ধ রেখে দু’এক সপ্তাহ পর আবারও শুরু করে। আবার অন্য কৌশলও তারা প্রয়োগ করে তারা। এবছরের অর্ধেক কাটা পুকুর পুরাতন দেখিয়ে সংস্কারের কথা বলে পরের বছর খনন করা হয়। এটি খুবই পরিচিত একটা কৌশল। উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তারা বিষয়টি জেনে থাকলেও তাদের ম্যানেজ করেই কাজ হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তাহলে তাদের কি আটকানো যাচ্ছেনা? তাহলে সমস্যাটা কোথায়? কী করলে এই পুকুর কাটার মহোৎসব বন্ধ হবে? কী করে আমাদের প্রকৃতিকে রক্ষা করা যাবে? কিভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঠেকানো যাবে? তা সংশ্লিষ্টরাই বলতে পারবেন।

লেখক: সম্পাদক, নারদ বার্তা বিডি.কম

আরও দেখুন

বৈশাখের খরতাপে চলনবিলে শ্রমিকের মাঝে স্যালাইন-পানি বিতরণ অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশাখের তীব্র তাপদাহে মানুষ ও প্রাণীকুলের জীবন-যাপন হাঁসফাঁস অবস্থা। বিশেষ করে চলনবিলের কৃষি …