নীড় পাতা / উন্নয়ন বার্তা / নাটোরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্যে প্রতীক্ষা

নাটোরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্যে প্রতীক্ষা

ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন

শস্য ভান্ডার খ্যাত নাটোরে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ আলী মিয়ার নামে একটি পাবলিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে সরকার। নাটোর সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রস্তাবনাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে প্রেরণ করেছে। নাটোরের মানুষ তাদের আজন্ম লালিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্যে অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছে।

২৫ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব নীলিমা আফরোজ স্বাক্ষরিত ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে প্রেরিত এক চিঠিতে নাটোর সদরে ড. ওয়াজেদ আলী মিয়া নামে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সরকারের প্রস্তাবনার কথা উল্লেখ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ পরিচালক মৌলি আজাদ জানান, নাটোরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সংক্রান্ত প্রস্তাবনাটি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সভায় আলোচিত হয়েছে। সভায় উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ড. দিল আফরোজা বলেন, এই প্রস্তাবনার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে একটি কমিটি করা হবে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের উপ পরিচালক মৌলি আজাদ বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইন প্রণয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আইন প্রণয়নের পর অবকাঠামো নির্মাণ, নিয়োগ প্রদান শেষে নাটোরবাসীর কাঙ্খিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।

রাজ-রাজণ্যের নাটোর শুধু অর্ধ বঙ্গেশ্বরী রাণী ভবানীর জন্যেই বিখ্যাত নয়। রাজশাহী বিভাগীয় শহর হওয়ার আগে এক সময় নাটোর ছিল বিভাগীয় শহর। নাটোর পৌরসভাও এই উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন পৌরসভা। দেড়শ’ বছরের পুরনো নাটোর পৌরসভায় ঐ সময়ে আধুনিক নাগরিক সব সুযোগ সুবিধার সাথে ছিল শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার অর্জনের পর পর তাঁর প্রিয় শহরে নাটোরে আসেন। ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু দিঘাপতিয়া রাজবাড়িতে স্থাপিত গভর্নর হাউজকে উত্তরা গণভবন হিসেবে নামফলক স্থাপন করেন। নাটোরকে তিনি দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে উত্তরা গণভবনে মন্ত্রী পরিষদের সভায়ও অনুষ্ঠিত হয়।
এসব ঐতিহ্যের পাশাপাশি বর্তমান নাটোর কৃষিতে এক সমৃদ্ধ জনপদ। ধান, রসুন, রকমারী ফল এবং দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদনে নাটোর উদ্বৃত্ত জেলা। দেশের একমাত্র ঔষধি গ্রামের অবস্থানও নাটোর সদর উপজেলায়।

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার নাটোর সারাদেশের সাথে সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অগ্রগামী। ভৌগলিক উচ্চতায় অবস্থানের কারণে যে কোন বন্যার সময়ে নাটোর সদর থাকে নিরাপদ। নাটোর সদরের বাইরে নলডাঙ্গা উপজেলায় স্থাপিত টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার আর লালপুর উপজেলায় স্থাপিত যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে শিক্ষার্থী সংকটে ভুগছে। কিন্তু নাটোর শহরের বাইপাস এলাকাতে স্থাপিত সরকারী টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট শিক্ষার্থীদের পদচারণায় সারাবছর মুখরিত থাকে। বাইপাস এলাকাতে নাটোর ডায়াবেটিক সমিতির একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। বাইপাসের নিকটেই রয়েছে দেশের প্রথম শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার।
একই এলাকাতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলে তা হবে রিসোর্সফুল এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সহজসাধ্য। তাই নাটোর শহর বা শহরতলীতে প্রস্তাবিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবী সচেতন নাটোরবাসীর।

নাটোর এম কে অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সমৃদ্ধ এই জনপদে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সময়ের দাবী। বিশ্ববিদ্যালয়টি শহর বা শহরতলী এলাকাতে হলে তা হবে বাস্তবসম্মত। যুগোপযোগী এই সিদ্ধান্তের জন্যে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এই শিক্ষাবিদ।

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও নাটোর জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় শহর নাটোরে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলে তা হবে আমাদের জন্যে শ্রেষ্ঠ উপহার। অধীর আগ্রহে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্যে প্রতীক্ষায় আছি। আশাকরি দ্রæততার সাথে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সহায়ক কার্যাদি সম্পন্ন হবে।

নাটোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ বলেন, প্রস্তাবিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়টি নাটোর সদরে হওয়াটাই বাঞ্চনীয়। সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহনসহ সবরকমের সহযোগিতা প্রদান করবে।

নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল জানান, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে সিদ্ধান্ত প্রস্তাব ও ৭১ বিধিতে ক্রমাগতভাবে নাটোর সদরে উত্তরবঙ্গের কৃতি সন্তান খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ আলী মিয়ার নামে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব উত্থাপন করে আসছিলাম। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের নিমিত্তে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। এখন প্রতিক্ষিত নাটোরবাসীর সাথে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অপেক্ষার পালা।

আরও দেখুন

নাটোরে ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে জখম

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনৈতিক পূর্ব শত্রুতার জেরে নাটোরে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। …