নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / নাটোরের অবিসংবাদিত নেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরী

নাটোরের অবিসংবাদিত নেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরী

হামিদুর রহমান মিঞা

আজ তার ১৩ ই সেপ্টেম্বর প্রয়াত জননেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর প্রয়াণ দিবস। যার জীবনী নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা যায় কিন্তু সমালোচনা নয়। মুক্তিযুদ্ধের শুধু একজন সংগঠকই ছিলেন না তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহযোদ্ধা। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু যাকে নাটোর জেলা গভর্নরের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে কাকা বাবুর (শংকর গোবিন্দ চৌধুরী) জীবনের উপরে অনেক ঝুঁকি ছিল। তাকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল কিছু চিহ্নিত দুস্কৃতিকারী। তিনি প্রাণে বাঁচলেও একটা হাত নষ্ট হয়ে যায়। এতকিছুর পরও মানব সেবা থেকে এতটুকু পিছপা হন নাই তিনি।

শংকর গোবিন্দ চৌধুরীকে নিয়ে কিছু লেখার যোগ্যতা আমার আছে এটা সাহস করে বলতে ভয় পাই। আমার দেখা এই জননেতার খেদমতের একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ তুলে ধরতে চাই। ১৯৮৫ সালে দেশে প্রবল তাপদহে খালবিল শুকিয়ে পানি শুন্য হয়ে পড়েছে। আমরা হালতিবিলের পুর্ব অংশের ভুষণগাছা ও কালীগঞ্জ গ্রামের কৃষকেরা ললিত পাম্পের সাহাযে ইরি বোরো ধানের চাষ করে থাকি। উজানে নলডাঙ্গা সেতুর পুর্ব অংশে সেখানকার লোকেরা নদীতে বাঁধ দিয়ে নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। তারা তাহেরপুর ও নলডাঙ্গা হাটের মালামাল বহনের জন্য পানি আটকিয়ে রাখে। আমাদের এলাকার শত অনুরোধের পরও তারা সেচের জন্য একফোঁটা পানিও ছাড়েনা। অবশেষে আমাদের এলাকার লোকজন সেখানে নদীর বাঁধ কাটতে যায়। নদীর উত্তর পারে আমাদের লোকজন বাঁধ কেটে পানি নামাতে শুরু করে। কিছুক্ষনের মধ্যে নলডাঙ্গার লোকেরা লাঠিশোঠা নিয়ে আমাদের লোকদের মারতে শুরু করে। মার খেয়ে লোকজন ছুটাছুটি করে পালাতে থাকে। অনেক কয়জনকে তারা আটকিয়ে রেখে বেদম মারধর করে। পরবর্তীতে তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

এদের মধ্যে বেশী মার খেয়ে আহত হয়েছিল, খুজুর আলী মন্ডল, রনজিত দাস, আঃ রহমান, ডাঃ সুশীলের বাবা। বিষয়টা আমাদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ও কার্তিক চন্দ্র শিকদার বাবু শংকর গোবিন্দকে অবগত করেন। বিষয়টা তৎক্ষণাত থানাকে জানিয়ে দিয়ে নলডাঙ্গায় পুলিশ পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন শংকর কাকাবাবু। নলডাঙ্গার ছাইফুল ইসলাম এম পির বড় ভাই কারুসহ কয়কজনকে ধরে আনে পুলিশ বাহিনী। নলডাঙ্গার ডাঃ ওয়াহেদ ও মারফত মিয়া সহ অনেকে কাকাবাবুকে বিষয়টা মিমাংসার অনুরোধ জানান। ধৃত ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে বলার অনুরোধ জানালে মিমাংসার শর্তে ছেড়ে দিতে বললেন।

তখন শংকর কাকা পৌরসভার চেয়ারম্যান। পৌরসভায় বৈঠকের বসার স্থান নির্ধারিত হলো। মিমাংসার তারিখে উভয় পক্ষের আরজি শুনার সময় নলডাঙ্গার লোকজন উত্তেজিত হলে আমাদের পক্ষের কার্তিক শিকদার বলে উঠলেন দাদা আমরা ৬ মাইল দুর থেকে এসেছি ওরাও ৬ মাইল দুর থেকে এসেছে এখন হুকুম দেন দেখে নেই কাদের গায়ে কত জোর। সেদিন তাদের এলাকায় গেছিলাম বলে আমাদের কুকুরের মত মেরেছিল।

শংকর কাকা সেদিন বলেছিল দেখ বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। আর কালীগঞ্জের লোকজন ধান বাঁচানোর জন্যই বাঁধ কাটতে গিয়েছিল।আর তোমরা গোসল ও নৌকা চালানোর জন্য পানি আটকায়ে রেখেছ? তোমাদের উচিত ছিল তাদের সাথে মিলে পানির ব্যবস্থা করা। শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর নির্দেশে চেয়ারম্যান সিরাজ ভাইসহ পুলিশের উপস্থিতিতে বাঁধ কেটে পানির ব্যবস্থা করে দিলেন। উভয় পক্ষকে কোলাকুলির মাধ্যমে মিমাংসা করে দিয়ে বললেন আজ থেকে নলডাঙ্গায় আর কোন বাঁধ থাকবেনা।

তার নির্দেশ আজও বহাল আছে। আমরা কালীগঞ্জ বাসী আজও কৃতজ্ঞ চিত্তে বাবু শংকর গোবিন্দ চৌধুরীকে স্মরণ করি। কাকাবাবুর মৃত্যু দিবসে আত্মার শান্তি কামনায় শেষ করছি।

লেখক: হামিদুর রহমান মিঞা, রাজনৈতিক কর্মী

আরও দেখুন

সিংড়ায় ক্ষুদ্র -নৃগোষ্ঠির প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:নাটোরের সিংড়ায় প্রাণী সম্পদ উপকরণ হিসেবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বরাদ্দকৃত হাঁস, মুরগী, ভেড়া, ছাগল, গরু …