বৃহস্পতিবার , মে ২ ২০২৪
নীড় পাতা / উত্তরবঙ্গ / নওগাঁর রাণীনগর-আত্রাই উপজেলায় ধানের ফলনে বিপর্যয়-বিক্রিতেও ঠকছেন কৃষক

নওগাঁর রাণীনগর-আত্রাই উপজেলায় ধানের ফলনে বিপর্যয়-বিক্রিতেও ঠকছেন কৃষক

সুদর্শন কর্মকার, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাণীনগর: নওগাঁর আত্রাই এবং রাণীনগর উপজেলা জুরে চলছে আমন ধান কাটা-মাড়াই। চলতি মৌসুমে একদিকে জমি থেকে যেমন ধানের আসানুরুপ ফলন পাচ্ছেননা অন্যদিকে বাজারে ধান বিক্রি করতে সরকার নির্ধারিত দরের চাইতে দেড় থেকে দুইশত টাকা কমে প্রতি মন ধান বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। তারা বলছেন,গত আমন মৌসুমে ধানের যে দর ছিল এবার সেই ধান জাত ও রকম ভেদে ৪০০ থেকে ৭০০টাকা পর্যন্ত কম দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে উ’পাদন খরচ বাড়লেও চলতি মৌসুমে ফলন বিপর্যয় ও ধানের ন্যায্য দর না পাওয়ায় লোকসানের কবলে পরেছেন কৃষকরা। আত্রাই উপজেলা কৃষি দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে উপজেলায় ব্রি ধান ৩৪,৭৫,৮৭,৯০,জিরাশাইল, টিয়া, এ্যারাইজ গোল্ডসহ বিভিন্ন জাতের ধান সাত হাজার ৬৭০হেক্টর জমিতে রোপন করা হয়েছে। এর মধ্যে বন্যায় প্রায় এক হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। উ’পাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২হাজার ৪৩ মেট্রিক টনধান। কিন্তু বন্যা এবং নানা কারনে ধানের ফলন অনেকটায় কম হচ্ছে। ইতি মধ্যে উপজেলায় রোপনকৃত জমির প্রায় ৬০ শতাংশ ধান কর্তন করা হয়েছে। তবে উ’পাদন লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা করছেন কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার রায়।এদিকে রাণীনগর উপজেলা কৃষি দপ্তর সুত্র জানায়, উপজেলায় আমন মৌসুমে ১৯হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে ধান রোপন করা হয়েছে। এর মধ্যে বন্যায় প্রায় ১৭৭হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এই উপজেলায় উ’পাদন লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ৯৬হাজার ৮২৫ মেট্রিকটন ধান। ইতি মধ্যে প্রায় ৮০শতাংশ জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। তবে এই উপজেলায়ও ধানের ফলন বিপর্যয়ে উ’পাদন লক্ষমাত্রা অনেকটায় হ্রাস পাবে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা হক।আত্রাই এবং রাণীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,একদিকে বন্যা আরেক দিকে নানা রোগ-বালাইয়ের কারনে ধানের ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। যেখানে ধানের জাত ভেদে বিঘাপ্রতি ২০-২২মন ধান পাওয়ার কথা সেখানে ১০থেকে সর্বোচ্চ ১৮মন পর্যন্ত ধান পাওয়া যাচ্ছে। আবার বন্যা প্লাবিত এলাকায় প্রতি বিঘা জমিতে মাত্র ৫/৬মন হারে ধানের ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা।কৃষকদের মতে,দুই উপজেলার এলাকা ভেদে ধান চাষ করতে রোপন থেকে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত বিঘা প্রতি ১০ হাজার থেকেসাড়ে ১২ হাজার এবং বর্গাচাষীদের ক্ষেত্রে প্রায় ১৮/১৯হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। কিন্তু ধানের ফলন কমে যাওয়ায় প্রতি বিঘা জমিতে বিশেষ করে বর্গাচাষীদের ৬/৭ হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে।আত্রাই উপজেলার তিলাবদুরি গ্রামের কৃষক আলাউদ্দীন বলেন,এবার তিনি ১০বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছেন। কিন্তু বন্যা এবং পোকা-মাকড়ের কারনে বিঘাপ্রতি ৪/৫মন হারে ফলন হতে পারে।একই উপজেলার গোন্ডগোহালিয়া গ্রামের কৃষক, ফজেল হোসেন জানান,তিনি এবার প্রায় ৬বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছেন। ধান পাকার আগে ব্লাস্ট রোগে ধান চিটা হয়ে গেছে। ফলে ২০/২২মন ফলনের পরিবর্তে ১০/১২ মন হারে প্রতি বিঘায় ফলন হচ্ছে। এতে অনেক লোকসান হবে।রাণীনগর উপজেলার কুজাইল গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন,আমন মৌসুমে প্রায় ১২ বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছেন। এর মধ্যে কিছুটা বন্যায় এবং রোগ-বালাইয়ে চরম ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে বিঘা প্রতি মাত্র ৫/৭মন হারে ধানের ফলন পাওয়া যাচ্ছে। একই উপজেলার কালীগ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন,চলতি মৌসুমে প্রায় ২২বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছেন। এর মধ্যে ব্রি ৯০জাতের ধান প্রায় ৮বিঘা জমিতে রোপন করেছেন। ধান কেটে ১০/১২মন হারে ফলন পেয়েছেন। এছাড়া মোটা জাতের ধান গড় ১৬/১৮মন হারে ফলন পেয়েছেন। তিনি জানান,গত আমন মৌসুমে ব্রি ধান ৯০ বিঘাপ্রতি প্রায় ১৬/১৮মন এবং স্বর্ণা-৫,ব্রি ৫১ এই জাতের মোটা ধান বিঘাপ্রতি ২০/২২মন হারে ফলন হয়েছে। ওই সময় বাজারে ব্রি ধান ৯০ প্রতি মন ১৮শত থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া স্বর্ণা-৫,ব্রি-৫১ এই জাতের মোটা ধান রকম ভেদে ১৪শ‘থেকে সাড়ে ১৫শত টাকা পর্যন্ত প্রতিমন ধান বিক্রি হয়েছে। অথচ সরকার চলতি মৌসুমে প্রতি মন ধান ১২শত টাকা দর বেধে দিলেও বাজারে মোটা জাতের ধান এক হাজার ৭০/৮০ টাকা এবং ব্রি ধান৯০ সর্বোচ্চ ১২শত ৬০/৭০টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, রাসায়নিক সার,কিটনাশক,শ্রমের মজুরিসহ ধান উ’পাদিত পন্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উ’পাদন খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু গত আমন মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে একই জাতের প্রতি মন ধান ৪০০ থেকে ৭০০টাকা পর্যন্ত কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।এতে কৃষকরা ধান উ’পাদন করে লোকসানের কবলে পরে ক্ষতি ও 

ঋনগ্রস্থ হচ্ছেন। 

আরও দেখুন

হিলি দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক:মহান আর্ন্তজাতিক পহেলা মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে এক দিন দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *