নীড় পাতা / উত্তরবঙ্গ / নওগাঁ / নওগাঁর রাণীনগরে জমে উঠেছে খলশানির হাট

নওগাঁর রাণীনগরে জমে উঠেছে খলশানির হাট

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাণীনগর:
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বৈরি আবহাওয়ার কারণে আষাঢ় মাসের দফায় দফায় রিমঝিম বৃষ্টিতে খাল-বিলের পানি বৃদ্ধি পাওয়া সহ নিম্ম অঞ্চল প্লাবিত হওয়ায়। বিভিন্ন জাতের মাছ ধরা পড়ায় হাট-বাজারে দেশী প্রজাতির ছোট মাছ ধরার গ্রাম বাংলার সহজ লভ্য প্রাচীনতম বাঁশের তৈরি উপকরন খলশানি বিক্রির ধুম পড়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার গুলোতে প্রতিদিন শত শত খলশানি বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার ঐতিহ্যবাহি আবাদপুকুর ও ত্রিমোহনী হাটের খলশানি পট্টিতে বেচা কেনার জন্য সকাল থেকেই গ্রামীন জনপদ থেকে আসা জনসাধারণের উপস্থিতি বলে দিচ্ছে জমজমাট খলশানির হাট। সাধ্য অনুযায়ী সাধারণ, কৃষক শ্রেণীর বেকার লোকজন ও মৌসুমী মৎস্য ব্যবসায়ীরা খলশানি ক্রয়ের বিশেষ ক্রেতা। গত সপ্তাহ জুরে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাতের কারণে নতুন নতুন এলাকা হাটু পানিতে তলিয়ে যাওয়ার অবসরের মানুষ গুলো এখন খলশানি দিয়ে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত সময় কাটিয়ে কিছুটা নতুন উর্পাজনেরও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

জানাগেছে, উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের হরিপুর কাশিমপুর ইউনিয়নের নিজামপুর, নগর বালুর ঠিকি এলাকা, গোনা ইউপি’র ঝিনা, কৃষ্ণপুর কালিগ্রামের হরিপুর, সদর ইউপি’র পার্শ্ববর্তী গ্রাম রামরায়পুর সহ বিভিন্ন গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ পরিবারের সকল সদস্যরা মিলে এই অবসর মৌসুমে তাদের নিপুণ হাতে বাঁশ ও তালের উপকরন দ্বারা তৈরি খলশানি বাড়ি থেকে পাইকারি বিক্রি সহ উপজেলার আবাদপুকুর, ত্রিমোহনী, পারইল, ভান্ডারগ্রাম বেতগাড়ী, কাটরাশাইন, লোহাচূড়া সহ বিভিন্ন হাটে বিক্রির জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকে।

বাঁশ, কট সুতা এবং তাল গাছের সাঁশ দিয়ে তৈরি এসব খলশানি মানের দিক দিয়ে ভালো হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অঞ্চল ভেদে বিশেষ করে হাওর ও বন্যা প্রবন এলাকার মাছ ব্যবসায়ীরা বর্তমান মৌসুমের শুরু থেকেই পাইকারি মূল্যে কিনে ট্রাক যোগে খলশানি গাইবান্দা, জয়পুরহাট রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে এখানকার খলশানি তৈরির সাথে জড়িত পরিবারগুলো বর্ষা মৌসুমে এর কদর বেশি ও যথাযথ মূল্য পাওয়ায় মাত্র দুই তিন মাসেই খলশানি বিক্রি করেই তারা প্রায় বছরের খোরাক ঘরে তুলে নেয়।

লাভ খুব বেশি না হলেও বর্ষা মৌসুমে এর চাহিদা থাকায় রাত-দিন পরিশ্রমের মাধ্যমে খলশানি তৈরি করে তারা বেজাই খুশি। এক দিকে যেমন সময় কাটে অন্য দিকে লাভের আশায় বাড়ির সকল সদস্যরা মিলে খলশানি তৈরির কাজ করে অভাব অনঠনের কবল থেকে একটু সুখের নিশ্বাস ফেলে। মাপ আকারে খলশানি প্রকার ভেদে প্রতিটির খরচ হয় ১৪০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রি হয় ১৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা।

এতে করে খুব বেশি লাভ না হলেও বাপ-দাদার পৈত্রিক এই পেশা ছাড়তে নারাজ এই পেশার সাথে জড়িতরা। আধুনিকতার উৎকর্ষের তৈরি ছোট জাতের মাছ ধরার সূতি, ভাদাই, ও কারেন্ট জালের দাপটের কারণে দেশি প্রযুক্তির বাঁশের তৈরি খলশানি এমনিতেই টিকে থাকতে পারছে না। কিন্তু জীবন জীবিকার তাগিদে তারা একেবারে কর্মহীন থাকতেও চায় না। রাণীনগর উপজেলার নিজামপুর গ্রামের খলশানি ব্যবসায়ী ভক্ত জানান, এই পেশার সাথে জড়িতরা প্রায় অন্য পেশায় গেলেও এখন পর্যন্ত হাজারের বেশি পরিবার রয়েছে বলে জানান।

আরও দেখুন

নাটোরে ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে জখম

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনৈতিক পূর্ব শত্রুতার জেরে নাটোরে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। …