নীড় পাতা / উত্তরবঙ্গ / চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত, জনজীবন বিপর্যস্ত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত, জনজীবন বিপর্যস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত সপ্তাহ থেকে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। ঠান্ডা বৃদ্ধি পাওয়ায় ছিন্নমূল মানুষসহ বয়স্ক ও শিশুরা কষ্টে রয়েছে। গত তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলেনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। হঠাৎ সূর্যের দেখা মিললেও কনকনে ঠান্ডা রয়েছে সকাল-সন্ধ্যা। অতিরিক্ত কুয়াশায় মাঠে কাজ করতে পারেনা সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষকরা। হঠাৎ ঠান্ডা বেশি ও তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শিশু ও বৃদ্ধদের দেখা দিচ্ছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগ। বর্তমানে শীতের প্রকোপে নিন্ম আয়ের মানুষরা পড়েছে বেশ দুর্ভোগে। অভাবী ও ছিন্নমূল মানষেরা শীতের গরম কাপড়ের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

২৫০ শয্যা আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মমিনুল হক জানান, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। এ অবস্থায় সরচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শিশু ও বয়স্করা। তারপরেও আছে মহামারী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। তিনি আরো জানান, পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত ১ সপ্তাহে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে প্রায় ৩ শতাধিক রোগী ভর্তি ও বহিঃর্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে।

খবির আলী জানান, তীব্র শীতের জন্য গরম পোশাকে শীত নিবারণ করতে না পারাই আমরা আগুন জালিয়ে হাত-পায়ে তাপ দিচ্ছি। যাতে শীত কম লাগে।

গৃহিনী সুমাইয়া আক্তার তুলী জানান, তীব্র শীতে বৃদ্ধ ও শিশুরা মোটেও ঠান্ডা সর্হ্য করতে পারেনা। এর ফলে লেগে আছে ঠান্ডা জনিত রোগ। চলতি সপ্তাহে পরপর দুদিন দেখা মেলেনি সূর্যের। আজকে সূর্যের দেখা মিললেও কমেনি শিতের তীব্রতা। বেলা ফুরাবার আগেই শুরু হয় হাড় জাঁকানো ঠান্ডা।

দুঃখের কথা জানালেন শিবগঞ্জ উপজেলার দূর্লভপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম, শীতের তীব্রতার কারনে মাঠে কৃষক পাওয়া যাচ্ছেনা এতে করে একা একা শীতকালীন সবজি লাগানো ও দেখাশোনা করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। যদিও কৃষক পাওয়া যায় এতে করে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিমানে মুজরী লাগছে।

রহিমা বেগম জানান, এতো শীতে কিভাবে বাঁচবো বুঝে উঠতে পারছি না। কারণ একটাও শীতের গরম কাপড় নাই। একটা চাদর শরীরিরে দিয়ে শীত কাটাছি। আমাদের দেখার কেউ নাই। আমি সরকারের কাছে একটা হলেও শীতের পোশাক চাই।

বাসের ড্রাইভার মতি জানান, আমরা প্রতিদিন বাস চালিয়ে রহনপুর নাচোল ও ভোলাহাট যাতে হয়। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে সামনে দিকে দশ হাত দুর দেখা যায় না। এজন্য দিনের বেলাও গাড়ির হেডলাইট জালিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। তা না হলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে যাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানায়, গত কয়েকদিন থেকে তাপমাত্রা রেকর্ড ৯-১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস উঠা নামা করছে। এছাড়াও তিনি আরোও বলেন অতিরিক্ত কুয়াশার কারনে শীতকালীন শাক-সবজির চাষীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ঘন কুয়াশাতে বর্তমানে ধানের বীজতলা নিয়ে আশংকায় আছে কৃষকরা। কিন্তু কৃষকদের শীতকালীন শাক-সবজি ও ধানের বীজতলা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

জেলার বিভিন্ন গার্মেন্টস ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে গরম কাপড় কেনার হিড়িক চলছে। যার যার সামর্থ অনুযায়ী লোকজন লেপ-কম্বল এবং শীতের গরম কাপড় কিনছে। আবার কেউ হস্তশিল্পির নিকট থেকে বানিয়ে নিচ্ছে পোশাক। এতে লাভ হয়েছে বিভিন্ন লেপ তোষকের দোকানীদের।

শীতকালকে ঘিরে জমজমাট ব্যবসা করছেন বিভিন্ন কসমেটিক্স বিক্রেতারা। শরীররে স্বাভাবিক রাখতে কিনছে হরেক রকমের ক্রীম লোশানসহ বিভিন্ন কসমেটিক্স পণ্য।

নিউমার্কেটের এক দোকানী জানায়, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে যখন বিশ্বব্যাপী লক-ডাউন তখন সবাই বাড়িতে ছিলো। এখন শীতের কারনে সবাই শপিং করতে আসছে। বিশেষ করে শীতকালীন পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ, কে, এম, তাজকির-উজ-জামান জানায়, শীত নিবারণের জন্য ৫টি উপজেলায় প্রায় ২২ হাজার কম্বল ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে এবং আগামীতে আরো ৩০ লাখ টাকার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।

এদিকে জেলা বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট কম্বল বিতরণ নিয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, এখনো কম্বল বিতরণ শুরু করেননি।

আরও দেখুন

লালপুরে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, লালপুর: আসন্ন উপজেলা পরিষদের ২য় ধাপ নির্বাচনে নাটোরের লালপুরে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ …