নীড় পাতা / টপ স্টোরিজ / করোনার মত ভয়াবহ সংকটেও যে দেশের মানুষ এতটা গোঁয়ার, মূর্খ, কূপমণ্ডুপ, সে জাতির ভবিষ্যৎ ভাগ্যের হাতেই তুলে দিয়ে দেশ সচল করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি – এম আসলাম লিটন

করোনার মত ভয়াবহ সংকটেও যে দেশের মানুষ এতটা গোঁয়ার, মূর্খ, কূপমণ্ডুপ, সে জাতির ভবিষ্যৎ ভাগ্যের হাতেই তুলে দিয়ে দেশ সচল করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি – এম আসলাম লিটন

এম আসলাম লিটন

শুধু গার্মেন্টস নয়। আমার তো মনে হয় সকল ছুটি বাতিল করে সব কিছু খুলে দেয়াই ভাল। সব কাজকর্ম চলুক। আধা আধা জিনিস কোনই কাজে আসছে না। যে জাতিকে সর্বোচ্চ বাহিনী নামিয়েও ঘরে ঢোকানো যাচ্ছে না, সে জাতির যা হবার তাই হবে। ঘর থেকে বের হয়েও যদি দূরত্ব বজায় রেখে চলতো, তাও হতো। হাত ধরাধরি করে মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে, এক বাইকে তিনজন করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এক ভ্যানে ৬জন করে যাতায়াত করছে। চায়ের দোকান বন্ধ করা হয়েছে, বাড়ির উঠানে চায়ের দোকান এনে বসাচ্ছে। জনদরদিরা জনসমাগম করে ত্রাণ বিতরণ করছে। শত শত লোক গাদাগাদি করে টিসিবির চাল কিনছে। কাঁচাবাজারে ভিড় কমছেই না। গ্রামে গ্রামে হাট চলছে। মসজিদে প্রতি ওয়াক্তে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে শতশত মানুষ কাতারে কাতারে নামাজ পড়ছে। মহল্লার নারীরা গায়ে গা ঘেঁষে খোস গল্পে মশগুল। বাচ্চারা দল বেঁধে খেলছে। যখন তখন একজন আরেকজনের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছে। দুপুরে রান্না করা তরকারির বাটি চালান হচ্ছে এবাড়ি-ওবাড়ি।

স্বাস্থ্য সচেতনতার বিন্দুমাত্র লেশ নাই। শুধু সানগ্লাসের মত করে কপালের উপর একটা শত নোঙরা মাস্ক তুলে রাখছে, প্রশাসনের লোক দেখলেই নাকের উপর নামিয়ে নিচ্ছে। যারা ঘরে থাকছে তারাই বা কতটুকু বিধি মেনে চলছে, আল্লাহ মালুম!! সব কিছুই তো চলছে। তাহলে শুধু গণপরিবহন, অফিস আদালত বন্ধ রেখে কি লাভ? সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাই যখন হচ্ছে না, তখন শুধু শুধু পেশাজীবীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে লাভ কী? শুধু শুধু জনগণের টাকার তেল পুড়িয়ে প্রশাসনের এত দৌড়াদৌড়ি করে কী হবে? বেচারা পুলিশ, আর্মি, প্রশাসন এই চৈত্রের দাবদাহের মধ্যে সারাদিন-রাত রাস্তায় টহল দিয়ে কষ্টই বা করছে কেন?

সবচে মজার ব্যাপার, যে ব্যক্তি গার্মেন্টস খুলে দেয়ার জন্য গালাগাল করছে, সে ব্যক্তি বন্ধুর সাথে গলা ধরাধরি করে হেঁটে বেড়াচ্ছে। যে জনসমাগম ঘটিয়ে ত্রাণ বিতরণের সমালোচনা করছে সে বাজারে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। সবাই অন্যের সমালোচনা করছে, কিন্তু নিজে নিয়ম অমান্য করছে। মানুষকে ঘরে ঢুকানোর প্রসঙ্গ উঠলেই এক শ্রেণির মানুষ ‘গরীবের খাবার কে দেবে’ প্রশ্ন তুলে তত্ব ফেঁদে বসছে। যেন সবাই গরীবের কত্ত প্রিয় বন্ধু!! সদা সর্বদা গরীবের চিন্তায় মরে যায় তারা। অথচ সুযোগ পেলেই গরীবের পাছায় বাঁশ দিতে ছাড়ে না।

রমজান এলেই ডাবল দাম। সংকট হলেই দাম বাড়ায়। স্টক করে। ঘুষ ছাড়া এ জাতি নড়ে না। গরীবের রক্ত চোষার সকল যন্ত্র চালু আছে এ দেশে। এনজিও গুলো ঋণের নামে শুধু রক্ত নয়, গরীবের গায়ের চামড়া, ঘরের চাল খুলে নিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিবিদরা গরীবের রক্ত চুষে একেকজন থলবলে হাতি বনে গেছে। অথচ গরীবের বন্ধুরা তখন চুপ!!

অবরোধের নামে বিএনপি-জামাত মাসের পর মাস যখন সারা দেশ অচল করে রাখলো, প্রত্যন্ত গ্রামের চায়ের দোকান পর্যন্ত খুলতে দিল না, রিক্সা, অটো বের করলে পুড়িয়ে দিল, তখন কি কেউ এরকম দাবি তুলেছিল? ক’জন বলেছিল, গরীবের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দাও? ক’জন দাবি তুলেছিল বিএনপি-জামাত দেশ অচল করে রাখার আগে গরীবের ঘরে খাবার পৌঁছে দাও?

ঘরে আগুন লাগলে আগে কোনটা বাঁচাবেন? ঘরের মানুষ? নাকি ঐ ঘরের মানুষের খাবার? আমরা কি বুঝতে পারছি না, ‘করোনা’ আগুনের চাইতেও ভয়াবহ। আগে মানুষকে ঘরে ঢুকতে হবে, তারপর খাবারের জন্য চিৎকার করতে হবে। শুধু কি খাবার সংকটের কথা ভেবে মানুষ ঘরে ঢুকছে না? মোটেও না।। যারা গোঁয়ারের মত দলে দলে মসজিদে যাচ্ছে, তারা কি খাবার অন্বেষণে যাচ্ছে?

একদল লোক গায়েই মাখছে না। “দেখি না ব্যাটা কী করে!” একদল লোক ধর্মের অপবয়ান দিয়ে মানুষকে নিরুৎসাহিত করছে- “মোসলমানের ঈমান ঠিক থাকলে করোনা কিচ্ছু করতে পারবে না”। একদল লোক নিজেকে করোনার চাইতে বলবান মনে করছে!- “আরে করোনা আমার কিছু করতে পারবে না!!”

করোনার মত ভয়াবহ সংকটেও যে দেশের মানুষ এতটা গোঁয়ার, মূর্খ, কূপমণ্ডুপ, সে জাতির ভবিষ্যৎ ভাগ্যের হাতেই তুলে দিয়ে দেশ সচল করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। করোনায় মরলে মরুক, না খেয়ে তো মরবে না!!

লেখকঃ সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠক

আরও দেখুন

পুঠিয়ায় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে রাতের আঁধারে চলছে পুকুর খনন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর পুঠিয়ায় রাতের আঁধারে ফসলি জমিতে পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, পুকুর …