বৃহস্পতিবার , মে ২ ২০২৪
নীড় পাতা / সাহিত্য ও সংস্কৃতি / কবিতা / কবি নাজনীন নাহারে’র কবিতা“হে প্রিয় নেতা”

কবি নাজনীন নাহারে’র কবিতা“হে প্রিয় নেতা”

হে প্রিয় নেতা

হে প্রিয় নেতা!
আপনি এভাবে ঘুমিয়ে থাকবেন না।
আপনি আর একবার জেগে উঠুন।
আপনার তর্জনী উঁচু করে আর একবার গর্জে উঠুন।
গর্জে উঠুন স্বাধীনতার এই মাসে,
এই বর্ষপূর্তীর সন্ধিক্ষণে।
হে প্রিয় মহামান্য।
আপনার স্বপ্ন দেখা সোনার বাংলায়,
আপনার ছবিখানি লাম্পট্যের শ্রদ্ধামাল্যে দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখে,
আপনার উত্তরসূরীরা যখন দুর্নীতির শীতল পাটিতে ঘুমায়।
আপনার তখন কষ্ট হয় না?
আপনার সন্তান হয়ে আমরা যখন,
মাতৃভূমির রক্ত শুষে মা’কে ভিখারি বানাই।
অস্তিত্বের কঙ্কালসার জরাজীর্ণ বাধ্য অবয়বে বন্দি করে,
যখন বিবস্ত্র করি মায়ের শরীর।
আপনার তখন রাগ হয় না মাহামান্য!
হে পিতা!
আপনার নামের নিলাম করে যখন,
দেশটাকে টুকরো টুকরো করে বেঁচে খায়,
কতিপয় বুভুক্ষু শেয়াল কুকুর।
আপনার হৃদপিণ্ডে তখন রক্ত ক্ষরণের নোনা নহর,
সত্যিই কি কুঁড়ে খায় না আপনার নিদ্রা প্রহর?
জেগে উঠুন, চেয়ে দেখুন হে পিতা!
আপনার স্বপ্নের মানচিত্রে এখন কেবল,
স্বার্থান্বেষী দালালদের আধিপত্য।
যারা নির্দিধায় আপনার বুকের উপর বসে,
রাজনীতিকে ধর্ষন করে পরিতৃপ্তির ঢেকুর তুলে।
এখানে এখন মীর জাফরের চারিত্রিক সনদ বিক্রি হয়,
বেশ চড়া দামে।
হে মহান রাষ্ট্রনায়ক!
একবার আপনার দৃষ্টি প্রসারিত করুন।
আর দেখুন, আপনার দেশে আজকাল যখন তখন,
মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে ঢুকে পড়ে,
ব্যাংক শূন্যের রাজনীতি।
কতিপয় ক্ষমতাসীন মহলের নেতৃত্বে,
যত্র তত্র মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে বিকলাঙ্গ অর্থনীতি।
লাওয়ারিশ বানিজ্য চক্রে ফেলে,
পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের ঘনীভূত সংকটের মারপ্যাচে,
পিষ্ট হয় আপনার প্রিয় সাধারণ জনগন।
শেয়ার বাজারের ফুসফুসে কার্বনডাই-
অক্সাইড ঢুকে পড়ে শ্বাসরোধ করে দেয়,
আপনার তথাকথিত প্রিয়জনেরা।
যাদের চেহারায় নামি-দামি ব্যাক্তিবর্গের,
বেনামী নেকাবে ভুলণ্ঠিত হয়,
আপনার আত্মতুষ্টির দেশপ্রেম।
ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্ম বিসর্জনের ইতিহাস,
তখন হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে যায়,
বিরিয়ানির উৎসবে।
আপনার কি তখন আমার মতো খুউব কান্না পায়?
হে মহান পিতা। হে আপোষহীন নেতা!
আপনি কি বুঝতে পারেন?
আপনার বুনে যাওয়া গনতান্ত্রিক সংবিধানে,
আজকাল ফ্যাসিবাদের ঝলমলে পোশাকের অলিখিত মহড়ায়,
তথাকথিত নেতা নামধারী নর্তকীরা ক্যাসিনো সাজায়।
কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা পাচার হয়ে যায়,
শুভংকরের নিলজ্জ কারসাজিতে।
রাতের অন্ধকারে আপনার আমার অস্তিত্ব বিদীর্ণ করে যখন,
হায়েনারা পকেটে পুড়ে নেয়,
আপনারই বিজয়ের প্রতিক।
আর মদের নেশায় টালমাটাল হয়ে চিবিয়ে খায়,
আপনার অর্জিত স্বাধীন দেশের মেরুদণ্ড।
আপনি কি তখনও ঘুমাতে পারেন?
আপনি কি তখন ঠিক আমার মতো,
সাধারণ জনতার নিরর্থক আস্ফালনে শামিল হন?
আর অঝোর ধারায় কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েন,
হৃদপিণ্ডে ক্যানসারের ব্যথা চেপে নিয়ে।
হে পিতা আপনার বুকে পিঠে লেপ্টে দেয়া বেইমানির চিহ্নগুলো পুঁজি করে,
আজ যারা রঙিন বোতলে গনতন্ত্র গুলে খেয়ে নেশায় ডোবে প্রতিরাতে।
আর সাধারণ মানুষের ঘামে ভেজা
রক্ত পানি করা উপার্জনের সুখেন্দু ছিনিয়ে নিয়ে,
পরবাসে স্বর্গ সাজায়।
আপনি কি তাদের বীভৎসতা ঠেকাতে,
আর কখনও হুঙ্কার দিয়ে উঠবেন না মহামান্য।
এখনও যারা মৌন বিশ্বাসে ভর করে,
আপনার রেখে যাওয়া আদর্শের মিথ্যে ব্যাবহারকে পেছনে ফেলে,
বাঁচতে চায় আপনার প্রতিষ্ঠিত সত্যাদর্শে।
শুধু তাদের জন্য।
আপনাকে আর একবার জেগে উঠতে হবে,
জেগে উঠতে হবে আপনার এই শতবর্ষের আয়োজনে।
আর একবার নেতৃত্ব দিতে হবে আপনাকে।
কোলে তুলে নিতে হবে বাংলা মায়ের বিবস্ত্র শরীর।
তাড়িত করতে হবে, মহাশ্মশানের ভয়ঙ্কর সব মহা কীট।
আপনার সত্যাদর্শে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, আবারও প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
পৃথিবীর মানচিত্রে, সম্মানে,
গৌরবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।

লেখিকা: নাজনীণ নাহার

আরও দেখুন

কবি নাজনীন নাহার এর কবিতা “আমি মানুষ’’

আমি মানুষ! নাজনীন নাহারআমি মানুষ!হ্যাঁ আমি মানুষ।আমি অমানুষের করি নাশ,মানচিত্র থেকে মুছে দেবো আমি অমানুষদের …