নীড় পাতা / জাতীয় / এক ঐতিহাসিক দিনের সাক্ষী বাংলাদেশ

এক ঐতিহাসিক দিনের সাক্ষী বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালের সেবিকা রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন প্রদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলো করোনাভাইরাস টিকাদান কর্মসূচি। বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের জন্য একটা, আমি বলব এটা একটা ঐতিহাসিক দিন হলো। কারণ বিশ্বের অনেক দেশ এখনো শুরু করতে পারেনি। সেখানে আমাদের মতো একটি দেশ, ঘনবসতিপূর্ণ দেশ সীমিত অর্থনৈতিক শক্তি নিয়েই আমরা কিন্তু মানুষের কল্যাণে যে আমরা কাজ করি সেটাই আজকে প্রমাণ হলো।’

বুধবার বিকাল ৪টার কিছু পর কুর্মিটোলা হাসপাতালের সিনিয়র নার্স মিজ কস্তাকে টিকা প্রদানের মধ্যে দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালপ্রান্তে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকা গ্রহণকারীদের সাহস জোগালেন, উৎসাহ দিলেন নানা কথায়। বললেন, আগে সবাই টিকা পাক, তারপর নেবেন তিনি। প্রথম টিকা নেওয়া নার্স কস্তার সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন। এ সময় নানা ধরনের উদ্দীপনামূলক কথায় তাকে সাহস দেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা কস্তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘ভয় পাচ্ছ না তো।’ জবাবে কস্তা বলেন, ‘জি না’। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব সাহসী তুমি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি সুস্থ হয়ে আরও বেশি করে রোগীদের সেবা কর।’ দ্বিতীয় টিকাটি নেন, এই হাসপাতালেরই চিকিৎসক ডাক্তার লুৎফুল মোবেন। তৃতীয় টিকা নেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা বেগম। একইভাবে তাকেও সাহস যোগান শেখ হাসিনা। চতুর্থ টিকাটি নেন, মতিঝিল বিভাগের ট্রাফিক পুলিশ, মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম। এ সময় প্রধানমন্ত্রী করোনাকালে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। পঞ্চম টিকাটি নেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ। হাসপাতালে ওই পাঁচজনসহ মোট ২৬ জনকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সময়মতো ভ্যাকসিন আনতে পেরেছি, এখন তা মানুষের মধ্যে সফলভাবে

প্রয়োগ করতে পারব। আমি সে সঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে, আলস্নাহর কাছে এইটুকু শুকরিয়া আদায় করি যে, আমরা সময়মতো এই ভ্যাকসিনটা ক্রয় করতে পেরেছি, আনতে পেরেছি এবং তা প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের দেশের মানুষকে আমরা সুরক্ষা দিতে সক্ষম হব। তিনি বলেন, এরপর সারাদেশে টিকা দেওয়া শুরু করা হবে, যাতে দেশের মানুষ তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্য সুরক্ষা পায়। মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণ করা আমাদের কর্তব্য। আমরা চেষ্টা করি মানুষের সেবা করে যেতে।’ উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশ্চর্যজনক এই করোনাভাইরাস সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে গেল। মানুষের কাজকর্ম করার সবকিছুতে একটা সীমাবদ্ধতা চলে এলো। অর্থনীতিতে একটা স্থবিরতা চলে এলো। আমরা জনগণের সেবক হিসেবে যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। এ করোনার সময় মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কীভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে পারি সেই চিন্তা করছিলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অল্প সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনেক কাজ করে গেছেন। আমরা গ্রামের মানুষের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি। ২০০১ সালে ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘এমন একটা ভাইরাস সারা পৃথিবীতে দেখা দিল যার ভ্যাকসিন কোথাও নেই। সারা পৃথিবীতে গবেষণা চলছিল। আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলেছিলাম, যারা ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা করছে সব জায়গায় যেন আমরা চিঠি লিখে বলে রাখি যাতে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে আমরা পাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল টাকা দেওয়া। আমি ইতোমধ্যেই এক হাজার কোটি টাকা আলাদা করে রেখেছিলাম। অর্থ মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাই, আমি বলার সঙ্গে সঙ্গেই তারা অর্থটা ছাড় দিয়েছিল। করোনাভাইরাস এমন একটি রোগ শুরুর দিকে বাবা-মা মারা যাওয়ার পরও সন্তানরা কাজে যেতে ভয় পেত। আমরা সারাদেশে প্রস্তুতি নিয়েছি। আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠন, সামাজিক সংগঠনগুলোকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছি। ২১ জাতীয় কারিগরি কমিটি গঠন করি। টাকা খরচ করতে দ্বিধা করিনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, কিছু মানুষ থাকে যারা সবকিছুতেই নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। তারা মানুষকে সাহায্য করে না, উল্টো ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা। তারা ‘কিছু ভালো লাগে না রোগে ভোগে’। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন আসবে কী আসবে না? দাম বেশি হলো কেন? দিলে কী হবে- তারা এসব কথা বলে। তাদের ধন্যবাদ, তারা যত সমালোচনা করেছে আমরা তত দ্রম্নত কাজ করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি চাই, তারাও সাহস করে আসবেন। আমরা তাদেরকেও ভ্যাকসিন দেব, যাতে তারাও সুরক্ষিত থাকেন। তাদের কিছু হলে আমাদের সমালোচনা করবে কে?’

টিকার সমস্যা হবে না বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডোজ কিনেছি তার মধ্যে ৫০ লাখ এসে গেছে। এরপর আরও আসতে থাকবে। কাজেই এই ব্যাপারে কোনো সমস্যা হবে না।’ টিকা সংগ্রহ ও টিকাদান সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন। কর্মসূচির উদ্বোধনী দিনে কুর্মিটোলা হাসপাতালে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আরো মোট ২৭ জন মানুষকে টিকা প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিক এবং আরও কয়েকটি পেশার মানুষ রয়েছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ এখনো করোনার ভ্যাকসিন না পেলেও বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পেয়েছে। এজন্য তিনি বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সেরামের ৭০ লাখ ভ্যাকসিন আমাদের আছে যা পর্যায়ক্রমে সারাদেশে মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। প্রাথমিকভাবে জুনের মধ্যে সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কোভিশিল্ড নামের যে টিকাটি বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে, এ পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে নিরাপদ ভ্যাকসিন। মন্ত্রী, এমপি, সচিবসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই করোনা ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফেব্রম্নয়ারির ৭ তারিখে আমরা একটি অনুষ্ঠান করে দেশব্যাপী টিকাদান শুরু করব। আপনারা কবে টিকা নেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন আমরা সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে পারব। ডাক্তার, নার্স, সাংবাদিক, পুলিশদের দেওয়ার পর আমরা নেব। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বেসরকারি হাসপাতালে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। নীতিমালা তৈরি হলে সে অনুযায়ী যোগ্য হাসপাতালে ভ্যাকসিন দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে তো টিকাদানে আসতেই হবে। তিনি আরও বলেন, ভ্যাকসিনের অভাব হবে না। ভ্যাকসিন আসতে থাকবে।

আরও দেখুন

নন্দীগ্রামে এক ব্যবসায়ীর জরিমানা 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ার নন্দীগ্রামে এক ব্যবসায়ীর জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার (১৩ মে) বিকেলে নন্দীগ্রাম …