নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / গুরুদাসপুর / আশুতোষের দইয়ে শুভঙ্করের ফাঁকি

আশুতোষের দইয়ে শুভঙ্করের ফাঁকি

সুরজিত সরকার:
দই পছন্দ করেন না এমন লোক কমই পাওয়া যায়। বেশ কয়েক বছর ধরে নাটোর জেলায় নাজিরপুরের আশুতোষ ঘোষের দই একচেটিয়া প্রাধান্য পাচ্ছে। সকলের পছন্দ তালিকার শীর্ষে রয়েছে আশুতোষ ঘোষের দই। দইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা সত্যই বোকামী। সকলের মত আমার কাছেও আশুতোষের দই অনন্য।

তবে শুভঙ্করের ফাঁকিটা কোথায়। যারা নিয়মিত দই কিনে থাকেন তারা জানেন দই কেনার সময় সম্পূর্ণ ওজন থেকে নির্দিষ্ট ওজন বাদ দেয়া হয় দইয়ের হাঁড়ির জন্য। সাধারণত দইয়ের হাঁড়ির জন্য একশ বা দুইশো গ্রাম ওজন বাদ দিয়ে থাকেন দোকানীরা। এক্ষেত্রে আশুতোষ ঘোষ হাঁড়ি বাবদ বাদ দেন চার’শ গ্রাম।

গুণগত মানে এবং ব্যবহারে সকলের থেকে আলাদা আশুতোষ ঘোষ আরও একটি ক্ষেত্রে আলাদা, অন্য দোকানে যেখানে দইয়ের হাঁড়ির ওজন বড় জোর পাঁচ’শ গ্রাম সেখানে আশুতোষ ঘোষের দইয়ের হাঁড়ির ওজন এক কেজি বা তারচেয়েও বেশি। দই থেকে হাঁড়ির ওজন বাদ দেন চার’শ গ্রাম। সে ক্ষেত্রে একজন ক্রেতা দুই কেজি ওজনের দই কিনে ঠকছেন ছয়’শ গ্রাম। প্রতি কেজি ১৩০ টাকা হিসেবে দুই কেজি দইয়ের দাম ২৬০ টাকা। আর ছয়’শ গ্রাম দইয়ের দাম ৭৮ টাকা। এই ৭৮ টাকা তিনি অতিরিক্ত নিচ্ছেন ক্রেতাদের ঠকিয়ে। বিক্রেতা তার ব্যবসায় লাভ করবেন এটিই স্বাভাবিক।

তবে সেটি কি পরিমাণ লাভ করবেন এব্যাপারে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর নাটোর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক পরিতোষ অধিকারী বলেন, একজন বিক্রেতার তার ব্যবসা থেকে অবশ্যই লাভ করার অধিকার আছে তবে সেটি নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। নির্দিষ্ট পরিমান লাভ করতে পারেন একজন বিক্রেতা কিন্তু অতিরিক্ত নয়। এক্ষেত্রে আশুতোষ ঘোষ যেটি করছেন সেটি অন্যায়। ক্রেতারদের সঙ্গে প্রবঞ্চনার সামিল।

এবারে একটি ঘটনার উদাহরণ দেখা যাক। গতমাসের শেষের দিকে বাড়ির অনুষ্ঠানের একজন ক্রেতা আশুতোষ ঘোষের কাছে চল্লিশ কেজি দই নিতে চান। কারণ একটিই আশুতোষের দইয়ের মান ভালো। সে মোতাবেক দরদাম ঠিক হয় এক’শ ত্রিশ টাকা কেজি হিসেবে এক মণ দইয়ের দাম পাঁচ হাজার দুইশত টাকা। অনুষ্ঠানের দিন যথারীতি দই পৌঁছে যায়। বিপত্তি ঘটে অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে। আমন্ত্রিত অতিথির তুলনায় দইয়ের পরিমাণ কমতে থাকে। সন্দেহ থেকে খালি হাড়ি গুলো ওজন করান ক্রেতা। সেখানে দেখা যায় এক একটি খালি হাঁড়ির ওজন এক কেজি বা তারচেয়েও বেশি। হিসেব করে দেখা যায় এক মণ দইয়ে প্রায় দশ কেজি দই কম। যার দাম ১৩’শ টাকা।

পাঁচ হাজার দুইশত টাকায় দই বিক্রি করে এখানে অতিরিক্ত ১৩’শ টাকা আয় করেছেন আশুতোষ ঘোষ। ক্রেতা বারবার যোগাযোগ করলেও এড়িযে যান। প্রায় পনের দিন পর আশুতোষ ঘোষ জানান, ত্রুটিই তাদের নিয়ম। হাঁড়ির দাম বাদ দিতে হলে আমরা দুই’শ থেকে দুইশত বিশ টাকা কেজি নেই। অথচ শুরুতে ক্রেতাকে এমন কোন তথ্যই দেননি বিক্রেতা। পণ্যের মানের সুনাম সৃষ্টি করে ক্রেতাদের ঠকানো এই সমস্ত ব্যবসায়ীরা সবসময় ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থেকে যান। শুধু ভালো মান থাকার জন্য প্রতিদিন হাজারো ক্রেতা কিনছেন এবং নিজেদের অজান্তেই ঠকছেন।

নাটোরে নাজিরপুরের দইয়ের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে আর এই সুনামকে পুঁজি করেই প্রতিদিন ঠকিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতাদের। আশুতোষ ঘোষ হয়ত বলতেই পারেন জিনিস যেটি ভালো দাম তার একটু বেশি। তবে বেশি দাম নেওয়া আর ঠকানোর মধ্যে যে অনেক ফারাক সেটি এই সকল অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তারা হয়ত বুঝবে না। তবে প্রতারিত ক্রেতারা আশা করেন প্রশাসন এই সমস্ত ঠগবাজ ব্যসায়ীর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আরও দেখুন

নাটোরে ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে জখম

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনৈতিক পূর্ব শত্রুতার জেরে নাটোরে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। …