নীড় পাতা / জাতীয় / আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থিদের ওপর বাড়ছে নজরদারি

আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থিদের ওপর বাড়ছে নজরদারি

আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থিদের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। যাতে তারা আবার সন্ত্রাসের পথে পা না বাড়ায়। সেই সঙ্গে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে কেউ আত্মসমর্পণ করছেন বা করেছেন কিনা- সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। আত্মসমর্পণকারীদের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুনের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য এই উদ্যোগ বলে জানা গেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, আত্মসমর্পণ করা চরমপন্থি দলের সদস্যদের কোনো কৌশল হলে তা দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য ঝুঁকি হতে পারে। এজন্য আত্মসমর্পণকারীদের ওপর নিয়মিত মনিটরিং করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে আত্মসমর্পণকারীদের সংশ্লিষ্ট থানায় প্রতি সপ্তাহে বা মাসে এক বার রিপোর্ট করার নিয়ম চালু করতে হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে,র্ যাবের সার্বিক সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধায়নে টাঙ্গাইল, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, মেহেরপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় দুই শতাধিক অস্ত্রসহ তিন শতাধিক চরমপন্থি আত্মসমর্পণ করছেন। এর আগে ২০১৯ সালের ৯ মে ‘সন্ত্রাসী পেশা ছাড়ি, আলোকিত জীবন গড়ি’ এই স্স্নোগানকে সামনে রেখে ৫৯৫ জন চরমপন্থি সদস্য পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে পাবনার আশপাশের ১৪টি জেলার বিস্ফোরক, হত্যা, মাদক মামলার অনেক আসামিও ছিলেন। আত্মসমর্পণকারীরা ছিলেন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল লাল পতাকা), সর্বহারা, নিউ বিপস্নবী ও কাঁদামাটি গ্রম্নপের সদস্য। তার আগে ১৯৯৯ সালে ২ হাজার চরমপন্থি আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৯৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাবনাসহ আশপাশের অঞ্চলে চরমপন্থিদের হাতে ২৮৭ নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশজুড়ে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, জলদসু্য ও ডাকাতদের হাতে হতাহত ও সম্পদ লুণ্ঠিত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেক।

চরমপন্থিদের আত্মসমর্পণের বিষয়ে বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ যায়যায়দিনকে বলেন, যারা সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে আত্মসমর্পণ করছেন, তাদেরকে আর সন্ত্রাসী

বলার সুযোগ নেই। তাদের পথভ্রষ্ট বলাই উচিত। আত্মসমর্পণকারীরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন, এটি দেশ ও জাতির জন্য সত্যিই খুব আনন্দের। পাশাপাশি সরকারের জন্য বড় ধরনের সফলতা। এমন সফলতার কারিগরর্ যাবকে দীর্ঘসময় ধরে চরমপন্থিদের কাছে আস্থা অর্জন করতে হয়েছে। এটি অনেক কষ্টসাধ্য ও চরম ধৈর্য্যের বিষয়। অতীতেওর্ যাব চরমপন্থি ছাড়াও সুন্দরবনের বনদসু্য ও জলদসু্য এবং জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করিয়ে ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, একটি বড় ধরনের গ্যাং বা দলকে আত্মসমর্পণ করানো খুবই কঠিন কাজ। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা কমে আসে। যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। একই সঙ্গে জনগণের মধ্যেও আতঙ্ক কমে গিয়ে আস্থা ফিরে। তিন শতাধিক চরমপন্থির আত্মসমর্পণ করা একটি বড় বিষয়। একই সঙ্গে তারা দুই শতাধিক অস্ত্র জমা দিচ্ছেন। বলতে গেলে, দুই শতাধিক অস্ত্র কোনো ধরনের অভিযান ছাড়াই উদ্ধার হচ্ছে। দুই শতাধিক অস্ত্র হাজার হাজার মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারত। হাজার হাজার অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। সেই সম্ভাবনা আর থাকছে না।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বলেন, আত্মসমর্পণের কারণে স্বাভাবিকভাবেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি কমবে। একই সঙ্গে যেসব এলাকার চরমপন্থিরা আত্মসর্মপণ করছেন, ওইসব এলাকা আরও বেশি নিরাপদ হচ্ছে। ওইসব এলাকার জনগণ অনেকটাই নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন। আর ওইসব এলাকার দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে আরও বেশি কাজ করার সুযোগ পাবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলছেন, অনেক সময় দেখা যায় আত্মসমর্পণ করার পরও অনেকেই আবার বিপথগামী হয়েছেন। আবার কারও কারও বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আত্মসমর্পণের ক্ষেত্রে এসব ঝুঁকি থাকবেই। এই ঝুঁকি মেনে নিয়েই এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়। তবে আত্মসমর্পণ করার পর বিপথগামী হওয়ার সংখ্যা খুবই কম। যা উলেস্নখ করার মতো নয়। এছাড়া আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে কেউ কেউ বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে বা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য আত্মসমর্পণ করছেন কিনা সে বিষয়টির ওপর গোয়েন্দা নজরদারি থাকতে হবে। এজন্য আত্মসমর্পণকারীদের সম্পর্কে একটি বিস্তারিত তালিকা তৈরি করা হয়। সেই তালিকায় আত্মসমর্পণকারী ও তাদের পরিবার পরিজন ও আত্মীয় স্বজন সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় নানা তথ্য রাখা হয়।

তিনি আরও বলেন, আত্মসমর্পণকারীরা আর যাতে বিপথগামী হতে না পারে, এজন্য তাদের ওপর মনিটরিং করতে হবে। একটি স্থায়ী মনিটরিং সেল গঠন করা জরুরি। আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার মধ্যেই এসব বিষয় থাকে। এছাড়া আত্মসমর্পণকারীদের প্রতি সপ্তাহে বা মাসে সংশ্লিষ্ট থানায় রিপোর্ট করার কথা থাকে। তাদের গতিবিধির ওপর গোয়েন্দারা নজরদারি করে থাকেন। আত্মসমর্পণকারীদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এটি নিশ্চিত করতে পারলে আত্মসমর্পণকারীদের নতুন করে বিপথগামী হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা থাকে না। পাশাপাশি তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারিও জোরদার করা প্রয়োজন। কারণ তারা সন্ত্রাসী গ্রম্নপ থেকে আত্মসমর্পণ করায় তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি থাকে। এ বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত করতে পারলে আত্মসমর্পণের প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হয়। যা দেশের সার্বিক নিরাপত্তায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আরও দেখুন

বান্দরবানে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার

নিউজ ডেস্ক: বান্দরবানে হামলা ও ব্যাংক লুটকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বলে হুঁশিয়ারি …