শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / সাংবাদিক নির্যাতনের জবাব দিতে হবে

সাংবাদিক নির্যাতনের জবাব দিতে হবে

নিউজ ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশের নামে ২৮ অক্টোবর সাংবাদিক নির্যাতন ও পুলিশ হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিএনপির আসল চেহারা তুলে ধরার জন্য সাংবাদিক-সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকদের মাটিতে ফেলে পেটানোর মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। এর জবাব বিএনপিকে দিতে হবে। আমি বলব, আপনারা ওদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরুন।’

সেদিন প্রেস লেখা জ্যাকেট পরে যুবদলকর্মীর সন্ত্রাস ও অগ্নিসংযোগে অংশ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রকাশ্যে যারা এ ধরনের অপকর্ম করেছে, তারা ধরা পড়ে গেছে। সাংবাদিক নির্যাতন ও পুলিশ হত্যার শাস্তি ওদের পেতেই হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কোনো পত্রিকা এটাকে কাভার করার চেষ্টা করেছে। তাদের ধিক্কার জানাই।’ এ সময় তিনি নির্যাতিত ও ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। অনেক মিডিয়ায় নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন না হওয়াকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জন্য নতুন দশম ওয়েজবোর্ড ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান। 

বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ। সভা সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দীপ আজাদ। শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন সহসভাপতি মধুসূদন মণ্ডল। সাম্মেলনে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ও মহাসচিবদের সম্মাননা দেওয়া হয়। প্রবীণ সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, মনজুরুল আহসান বুলবুল, আব্দুল জলিল ভুঁইয়া, শাবান মাহমুদ ও ওমর ফারুক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন।

১৩টি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এবং একটির সাধারণ সম্পাদক সভায় বক্তৃতা করেন। তারা হলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম খোকন, ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আতাউল কবির খোকন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আবু তাহের, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহমেদ, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনতোষ বসু, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আমজাদ হোসেন শেখ মিন্টু, দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওয়াহিদুল ইসলাম, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি স্বপন খন্দকার, গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আতাউর রহমান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি দীপক চৌধুরী বাপ্পী।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রাম আমরাও করেছি। আন্দোলনের নামে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অত্যন্ত দুঃখজনক। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি এবং আরও কয়েটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল, আমরা বাধা দিইনি। তারা কথা দিয়েছিল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। দেখা গেল তারা সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে। সাংবাদিকদের টার্গেট করে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, এটা অমানবিক। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুলিশের ওপর অত্যাচার হলো, যা এর আগেও আমরা দেখেছি। ওইদিন পুলিশকে মাটিতে ফেলে পেটানো হয়, অচেতন হয়ে যাওয়ার পরও মারা হয়। তাদেরকে কোপানো হয় এবং ঢিল মারা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে-তারা শান্তি সমাবেশ করতে এসে এই ইট পাথর, অস্ত্র কোথায় পেল? তারা যে কোপাল, সেটা (ধারালো অস্ত্র) কোথায় পেল? 

এর মানে, তাদের উদ্দেশ্যটাই আগাগোড়া খুব খারাপ ছিল। অগ্নিসন্ত্রাস এবং জ্বালাও-পোড়াও-এটাই ওদের চরিত্র। নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এরকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং অগ্নিসন্ত্রাস তারা করেছিল। নির্বাচন তারা ঠেকাতে পারেনি। নিজেরাও অংশগ্রহণ করেনি। হত্যা, খুন, গুম এগুলোই তারা খুব ভালো পারে।’

পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে হামলা, অত্যাচার-নির্যাতন, অ্যাম্বুলেন্স পোড়ানো, রোগিবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে ধাওয়া ও হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতটা অমানবিক আচরণ কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারে না। এ সময় তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপি আমলে পুলিশ দিয়ে সাংবাদিকদের ওপর বর্বর নির্যাতনের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো সামান্য কিছু হলেই বিবৃতি দেয়। তারা এখন কোথায়? আমাদের সুশীল বাবুরা কোথায়? শুধু আওয়ামী লীগে কিছু হলেই বড় করে দেখায়? মানবাধিকার সংগঠনগুলো চুপ কেন? এদের বিবেক বলে কিছু নেই?’ 

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পান থেকে চুন খসলেই তাদের কণ্ঠে অনেক জোর দেখা যায়। এখন বিড়ালের মতো মিউ মিউ করলেও তো দেখতাম। তাও তো দেখা যাচ্ছে না। ফিলিস্তিনে যেভাবে হাসপাতালে হামলা হয়েছে, এখানে সেভাবেই হাসপাতালে হামলা হয়েছে। জানি না তারা এই শিক্ষাটা ইহুদিদের থেকে পেয়েছে কি না।’

ওয়েজবোর্ড গঠনে ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি লক্ষ রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি সাংবাদিকদের সরকার ঘোষিত জাতীয় পেনশন স্কিমের চারটি ধাপের যে কোনোটি বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন, যাতে চাকরি শেষে বা দুর্যোগদুর্বিপাকে নিজের ও পরিবারের কাজে লাগে। 

তিনি বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে যেখানে আবাসন সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে, সেখানে সাংবাদিকদেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেখান থেকে বিধি মোতাবেক এককালীন একটা টাকা দিয়ে এবং মাসিক, দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে সাংবাদিকরা কোনো ফ্ল্যাট চাইলে নিতে পারেন।’ 

আর সাংবাদিকদের জমি বরাদ্দের বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে যে আবেদন করা হয়েছে তার জন্য বিধিমোতাবেক যথাযথভাবে জমি প্রদানের ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি। এর সঙ্গে জেলায় জেলায় সাংবাদিকদের জন্য আলাদা প্লটের ব্যবস্থা করে দেওয়াও সরকারের চিন্তাভাবনার মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি জেলাভিত্তিক আবাসন প্রকল্প তৈরি করে দেব। যেন প্রত্যেক জেলায় আপনারা নিতে পারেন, সে ব্যবস্থাটাও আমরা করব।’

নিজের সিডমানি দিয়ে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট করে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে সেখানে আরও ১০ কোটি টাকা অনুদান প্রদানের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি গণমাধ্যমের মালিক এবং সাংবাদিকদেরও কিছু কিছু করে সেখানে অনুদান দেওয়ার অনুরোধ জানান। ওয়েজবোর্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নবম ওয়েজবোর্ড করা হয়েছে এবং দশম ওয়েজবোর্ডের প্রস্তুতি চলছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদেরও এর আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা নিজেও সাংবাদিক ছিলেন। যে কারণে আপনাদের মাঝে এলে আমি দাবি করি, আমি আপনাদেরই পরিবারের একজন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। এই একটা জিনিসই বিশ্বে আমাদের সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া আমরা এই সেতুতে রেলসংযোগও দিয়েছি।’ 

এ সময় তিনি মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণসহ আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে এ ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে ‘নৌকা’য় ভোট দেওয়ার জন্য ও সবার প্রতি আহ্বান জানান।

আরও দেখুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ………..চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদান সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার …