নিউজ ডেস্ক:
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন ১২ নভেম্বর। সেই সঙ্গে খুলবে স্বপ্নের দুয়ার। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি সরু। আবার এ সড়কেই বসে বাজার। সৃষ্টি হয় যানজট। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী। এসব সমস্যার অবসান হবে রেল চলাচলে। স্বস্তিতে পৌঁছানো যাবে কক্সবাজারে। আগামী ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের আগে কাজের সামগ্রিক উন্নয়ন ও প্রস্তুতি পরিদর্শন করতে আজ সোমবার আসছেন রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন। পরিদর্শন শেষে রেলপথ মন্ত্রী পরীক্ষামূলক রেল চলাচলের কর্মসূচিও ঘোষণা করার কথা। ইতোমধ্যে কক্সবাজার-দোহাজারী রেললাইন নির্মাণের সামগ্রিক কাজ শেষ হয়েছে ৯১ শতাংশ। তবে বাণিজ্যিকভাবে চলবে আরও পরে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সবুক্তগীন বলেন, রেললাইন নির্মাণের পুরো প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৯১ শতাংশ এবং রেললাইন নির্মাণের অগ্রগতি ৯৮ শতাংশের বেশি। এখন শেষ মুহূর্তের কিছু কাজ চলছে। ১২ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করবেন। আজ রেলপথ মন্ত্রী কাজের সার্বিক অগ্রগতি ও প্রস্তুতি পরিদর্শন করবেন। তবে উদ্বোধনের আগে একবার পরীক্ষামূলক চলাচল করবে। প্রথমে কালুরঘাট সেতু ও দোহাজারী স্টেশন পরিদর্শন করবেন। এরপর তিনি দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন পরিদর্শন এবং কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন পরিদর্শন করবেন। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনটি ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুনধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার ও রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিমি রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে কক্সবাজারে নির্মিত হয়েছে ঝিনুকের আদলে দেশের প্রথম অত্যাধুনিক আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। এর মাধ্যমে দেশের পর্যটন খাত এগিয়ে যাবে আরেক ধাপ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হবে। এ ছাড়া সহজ ও কম খরচে মাছ, লবণ, কাগজের কাঁচামাল, বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন করা যাবে। একই সঙ্গে প্রকল্প নির্মাণে হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর নির্বিঘ্নে চলাচল করার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এ রেলপথে হাতি চলাচলে একটি ৫০ মিটার দীর্ঘ ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, দেশের ৪৫তম জেলায় যুক্ত হবে রেল। ঢাকা থেকে সাড়ে সাত ঘণ্টায় এবং চট্টগ্রাম থেকে আড়াই ঘণ্টায় রেল পৌঁছাবে কক্সাবাজার। দৈনিক যাতায়াত করতে পারবে প্রায় ১ লাখ মানুষ। এ ছাড়া মাছ, লবণ, শুঁটকিসহ নানা পণ্য কক্সবাজার থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে পরিবহনের জন্য থাকবে বিশেষ রেফ্রিজারেটেড ওয়াগন সার্ভিস। জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন আছে। এ কারণে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন-পাহাড় নদী পাড়ি দিয়ে রেলপথটি যাচ্ছে কক্সবাজারে। দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজারে হচ্ছে নয়টি স্টেশন। এসব স্টেশনে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ হচ্ছে তিনটি বড় সেতু। এ ছাড়া পুরো রেলপথে নির্মিত হচ্ছে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং।