সিলেটে ১১তম বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ঘাটতির বিষয়ে আলোকপাত করে তা কমিয়ে আনার ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, এক্ষেত্রে নানা উপায় ও সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরকে সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়ে দুই দেশের বিরাজমান ঘাটতি কমিয়ে আনা যেতে পারে।’ সম্প্রতি ভিসা নিয়ে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা নিরসনের পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে ভারত-বাংলাদেশে ভিসামুক্ত যোগাযোগ করার বিষয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ট সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী ১১তম বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংলাপের উদ্বোধক ও অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন বলেন, ‘দুই প্রতিবেশী দেশের ভাগ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং উভয় দেশের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।’ তিনি জি-২০ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানান এবং পি২০ পার্লামেন্টারি স্পিকার্স সামিট আয়োজনের জন্য ভারতের প্রশংসা করেন।
তিনি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দুই দেশের সংসদের আরো সম্পৃক্ততা, নারী আইন প্রণেতাদের সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা এবং আইসিটি সেক্টরে সহযোগিতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। স্পিকার শিরীন শারমিন বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিরাজমান বাণিজ্যিক ঘাটতি নিরসনে ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিট ভূমিকা রাখবে।
এক্ষেত্রে মোংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের বর্তমান বিরাজমান ঘাটতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করা যেতে পারে।’
ভারত বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে ভারতের দীর্ঘ এবং পুরনো ঐতিহ্য রয়েছে। বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারাকে অব্যাহত রাখতে এবং এগিয়ে নিতে এক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানার ও শেখার সুযোগ আছে। কারণ তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনেক পুরনো এবং কার্যকরভাবে তারা গণতন্ত্রের চর্চা করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ভারতের সাবেক মন্ত্রী শ্রী এম জে আকবর ও ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল স্টাডি ফর স্টাডিজের (বিএফআরএস) সভাপতি, ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের কোর্ডিনেটর এ এস এম শামসুল আরিফিন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যের পাশাপাশি পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় তিনি বলেন, দুই দেশের কোথায় কোথায় প্রতিবন্ধকতা আছে সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করব। আমরা স্টেটমেন্টে বিশ্বাস করি না। আমরা ফোনকলে বেশি বিশ্বাস করি।
কাজগুলা আমরা ফোন কল করে শেষ করতে চাই।’
সম্প্রতি ভারতীয় ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা (ভারত) প্রতিদিন পাঁচ থেকে নয় হাজার ভিসা ইস্যু করে। আমাদের হাজার হাজার লোক আবেদন করেন। তাদের এত জনবল নাই। তারা চিন্তা করছে এই সক্ষমতা বাড়ানোর। আর আমি বলেছি অদূর ভবিষ্যতে আমি চাই, ভিসা মুক্ত ভারত-বাংলাদেশ।’
ভারতের সাবেক মন্ত্রী শ্রী এম জে আকবর বলেন, ‘কিভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেওয়া যায়, সম্পর্কন্নোয়ন করা যায় এগুলোই এই আয়োজনে আমাদের মূল লক্ষ্য। সম্প্রতি দুই দেশ নানা ইস্যুতে ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকতে পারে এগুলো কিভাবে পুষিয়ে নেওয়া যায় তা খতিয়ে দেখতে হবে। সমস্যা থাকলে এর উত্তরণ ঘটাতে হবে।’
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আশা করি, তিন দিনব্যাপী এই সংলাপের মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু জানতে পারব। যা দু’দেশের আগামী দিনের পথচলা আরো মসৃণ করবে।’