নিউজ ডেস্ক:
অনলাইনে দেদারছে চলছে জুয়া, গেমিং, বেটিং ও ক্রিপ্টো ট্রেডিং। এর মাধ্যমে এক দিকে যেমন কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হচ্ছে, অপর দিকে সামাজিক অবক্ষয় ও যুবসমাজ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে অনলাইনের মাধ্যমে মুদ্রাপাচার প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। অপরাধীদের শনাক্ত করতে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার (বিএফআইইউ) নেতৃত্বে মাঠে নামছে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসহ (বিটিআরসি) বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানিসহ এনএফআই সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
এ বিষয়ে বিএফআইইউ প্রধান মো: মাসুদ বিশ্বাস গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, অনলাইনের মাধ্যমে মুদ্রাপাচার প্রতিরোধে বিএফআইইউ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে অনলাইন গ্যাম্বলিং, গেমিং, বেটিং, ফরেক্স এবং ক্রিপ্টো ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অপরাধী যেই হোক না কেন তাদেরকে শনাক্ত করে কঠোর শাস্তি দিতে কোনো প্রকার কার্পণ্য করা হবে না। তিনি বলেন, অপরাধীদের শনাক্ত করতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে কাজ করবে। তাদের সহযোগিতা করবে বিটিআরসিসহ বিভিন্ন মোবাইল সংস্থা, এনএফআই সংস্থা। এ বিষয়ে কর্মকৌশল ঠিক করতে গতকাল অংশীজনদের নিয়ে সমন্বিত বৈঠক হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে লেনদেন করতে আর্থিক সেক্টরে ডিজিটাল পেমেন্ট এবং স্মার্ট পেমেন্টের প্রয়োগ বাড়ানো হয়েছে। এর সুফলের পাশাপাশি অপব্যবহারও বেড়েছে। ডিজিটাল ব্যাংকিং/ পেমেন্টের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন আর্থিক অপরাধ বিস্তার লাভ করেছে। এর মধ্যে অবৈধ অনলাইন গ্যাম্বলিং, গেমিং, বেটিং, ফরেক্স এবং ক্রিপ্টো ট্রেডিং অন্যতম। সাম্প্রতিক সময়ে এসব অপরাধের মাধ্যমে সংঘটিত অবৈধ লেনদেন মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে এসব অপরাধ হুন্ডি প্রক্রিয়াকে সহজ ও ত্বরান্বিত করছে। এর ফলে মুদ্রা পাচার বেড়ে যাচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশ প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে। পাশাপাশি নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে যুব সমাজের।
এমনি পরিস্থিতিতে বিএফআইইউ থেকে ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে বিএফআইইউ অন্যান্য সংস্থাসমূহের সাথে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এর পরেও এসব অপরাধ বন্ধ হচ্ছে না বরং দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
অনলাইনের মাধ্যমে মুদ্রাপাচার প্রতিরোধে গতকাল বিএফআইইউ-এর নেতৃত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। বিএফআইইউ প্রধান কর্মকর্তা মো: মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশের ট্রান্সন্যাশনাল অ্যান্ড সাইবার ক্রাইম বিভাগ এবং গোয়েন্দা ও প্রাইভেট সেক্টরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় মাসুদ বিশ্বাস অবৈধ হুন্ডি, অনলাইন গ্যাম্বলিং, গেমিং, বেটিং, ফরেক্স এবং ক্রিপ্টো ট্রেডিং-এর বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে সব সংস্থার একযোগে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এ সংক্রান্ত সংস্থাসমূহের কাজের সমন্বয় সাধন ও জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। এ বিষয়ে বিএফআইইউ তথ্য ও ইন্টেলিজেন্স দিয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া সভায় একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরা হয় কিভাবে অবৈধ হুন্ডি, অনলাইন গ্যাম্বলিং, গেমিং, বেটিং, ফরেক্স এবং ক্রিপ্টো ট্রেডিং-এর মাধ্যমে মুদ্রা পাচার, সামাজিক অবক্ষয় ও যুবসমাজ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সভায় সব সংস্থা আগামী দিনগুলোতে একযোগে কাজ করে অবৈধ হুন্ডি, অনলাইন গ্যাম্বলিং, গেমিং, বেটিং, ফরেক্স এবং ক্রিপ্টো ট্রেডিং প্রতিরোধের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।