নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। জাতীকরণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রীর এমন ঘোষণায় আন্দোলন চালিয়া যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা, একই সাথে স্কুলে তালা না খোলার ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা।
বুধবার (১৯ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীকরণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী। এরপর বৈঠক করেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) নেতৃত্বাধীন জাতীয়করণ প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
আন্দোলন চালিয়া যাওয়ার বিষয়টি শিক্ষাবার্তা’কে নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া। তিনি বলেন, আমরা আশ্বাস নয় ঘোষণা চাই। শিক্ষামন্ত্রী যেভাবে বলেছেন, তা নিয়ে শিক্ষকরা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে জাতীয়করণের ঘোষণা চাই।
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, নির্বাচনের আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিটি পূরণ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়া বিশেষভাবে এই মুহূর্তে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক এই অবস্থার মধ্যে আর্থিক বিরাট একটি বোঝা কাঁধে নেয়া কোন সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। নির্বাচন, আর্থিক সমস্যা মাথায় রেখে কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে সম্ভব এবং কিভাবে করলে আমাদের শিক্ষা এবং শিক্ষকের মানোন্নয়ন সম্ভব; কিভাবে এই বিষয়টি করতে পারবো এবং তার আর্থিক সংশ্লিষ্টতা কতটুকু এগুলো বিষয় দেখার জন্য দুটি কমিটি আমরা করে দিচ্ছি।
শিক্ষামন্ত্রীর এ বক্তব্যে বিটিএ সভাপতি বলেন, দেশের যে বড় বড় মেগা প্রজেক্ট চলছে তাঁর এক অংশও জাতীয়করণের জন্য ব্যয় হবে না। আমরা হিসেব করে দেখিয়েছিলাম এমপিওর অনুদান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয়ে কিভাবে জাতীয়করণ সম্ভব। শিক্ষামন্ত্রীর এমন বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি বলেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে জাতীয়করণ ঘোষণা না শোনা পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করেছে তবে স্কুলের তালা খুলবে না। যতসময় পর্যন্ত জাতীয়করণের সুর্নিষ্ট ঘোষণা আমরা পাব না এই তালা খুলবে না।
এ দিকে বৈঠকে উপস্থিত থাকা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ জানান, শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনায় কোন সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ছিল না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জাতীয়করণের ঘোষণা চাই। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা কাছ থেকে ঘোষণা আসা না পর্যন্ত আমরা প্রেসক্লাবের সামনে এই আন্দোলন চালিয়ে যাব। স্কুলের তালা খুলবে না বলেই এই শিক্ষক নেতা জানান।
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন , শিক্ষকরা যে জীবন মানোন্ননের লক্ষ্য জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন, এখানে যাতে কোন বৈষম্য না থাকে সেটি গবেষণার বিষ,— এজন্য একটি কমিটি করে গবেষণা করে দেখার জন্য তাদের দায়িত্ব দেয়া হবে। আর এর সাথে সংশ্লিষ্ট আর্থিক বিষয়টি গবেষণা করে দেখার জন্য আরেকটি কমিটি গঠন করে দেয়া হবে; তারা দেখবে এতে আমাদের আর্থিক সক্ষমতা অনুযায়ী কতদূর আগানো সম্ভব বা কতদ্রুত এটি আমরা দিতে পারব।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতনসহ বিভিন্ন খরচ বাবদ অনেক খরচই সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানসমূহে দেয়া হয়, কিন্ত সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের আয় থেকে কোন অর্থ নেয় না; এই পুরো ব্যাপারটি গবেষণা করে দেখারও বিষয় আছে।
এদিকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে টানা ৯ম দিনের মতো আন্দোলন করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন তারা। এর আগে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের আশ্বাস দিলেও আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা। তাঁরা দাবি করেন, আশ্বাস নয়, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।