জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। ঐতিহাসিক প্রস্তাবটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে।
গতকাল বুধবার জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এ তথ্য জানায়।
গত মঙ্গলবার রাতে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ‘কমিউনিটিভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা : সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবদুল মুহিত। কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন হিসেবে জাতিসংঘের ৭০টি সদস্য রাষ্ট্র এই প্রস্তাবে সহপৃষ্ঠপোষক ছিল।
প্রস্তাবটি গ্রহণের মাধ্যমে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল উদ্ভাবনী উদ্যোগের স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা এই উদ্যোগকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে উল্লেখ করে। এটি জনগণের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবায় সাম্য আনতে বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
রাষ্ট্রদূত মুহিত তাঁর বক্তব্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনে এই প্রস্তাবের ইতিবাচক প্রভাব তুলে ধরেন। তিনি জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর এই প্রস্তাব অনুমোদনকে ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, প্রস্তাবটির সফল বাস্তবায়ন কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরো বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এই প্রস্তাবের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। কারণ এটি সদস্য দেশগুলো, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, এই কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রবর্তন ও বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বহুপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক ও দাতাদের যথাযথ কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা দিতে আমন্ত্রণ জানায়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সব মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে এই অনন্য কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। এটি সারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দোরগোড়ায় সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সুফল সরবরাহে বিপ্লব ঘটিয়েছে। মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার এ পর্যন্ত সারা দেশে পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিতে ১৪ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অদম্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করবে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের পক্ষে প্রস্তাবটি নিয়ে সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করেন উপস্থায়ী প্রতিনিধি মো. মনোয়ার হোসেন। মিশন গত কয়েক বছর ধরে স্বাস্থ্য কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় এই প্রস্তাব এ বছরের শুরুর দিকে মিশন জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বিবেচনার জন্য আনে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে গত চার মাস নিবিড় আলোচনার পর প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিচ্ছেন মানুষ