সাম্প্রতিক সময়ে চীন বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। দিন দিন বাংলাদেশে বাড়ছে চীনা বিনিয়োগ। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি চীনের কাছে বাংলাদেশকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং’র আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের সরকারি সফরে চীনে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার রাতে তিনি চীনে পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত চীন সফর করবেন। তাঁর এই তাৎপর্যপূর্ণ সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতসহ বিভিন্ন খাতে দুই দেশের মধ্যে মোট আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে মোট যে আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা রয়েছে সেগুলো হলো,ঢাকা বিদ্যুত্ বিতরণ কোম্পানি এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও সম্প্রসারণে কাঠামো চুক্তি, ডিপিডিসি এলাকা প্রকল্পে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও সম্প্রসারণে সরকারি পর্যায়ে কনসেশনাল ঋণ চুক্তি, ডিপিডিসি এলাকা প্রকল্পে বিদ্যুত্ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও সম্প্রসারণে প্রেফারেনশিয়াল বায়ার’স ঋণ চুক্তি, পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণে কাঠামো চুক্তি, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কারগরি সহায়তা চুক্তি, বিনিয়োগ সহযোগিতা ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা বিষয়ে এমওইউ, ব্রহ্মপুত্র/ ইয়ালু ঝাংবো নদের পানি প্রবাহ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন বিষয়ে এমওইউ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন কর্মসূচির বিষয়ে এমওইউ।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু বিশেষ গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চীনের সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ। প্রসঙ্গত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়ে প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা অধিবাসী। নানা সময় মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত নেওয়ার কথা বললেও তা বাস্তবায়ন করছে না।
প্রধানমন্ত্রী তার চীন সফরের কর্মসূচির অংশ হিসেবে এরই মধ্যে গতকাল ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)-এর বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণ করেছেন, সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকসই বিশ্ব গড়ে তুলতে এবং ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী অথবা অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনীতির মূল উদ্বেগ নিরসনের লক্ষ্যে পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।
এগুলো হচ্ছে-
১. দেশগুলোর মধ্যে পারস্পারিক শান্তি-সম্প্রীতি স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি।
২. টেকসই উন্নয়নের সব দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
৩. দেশগুলোর পারস্পারিক স্বার্থে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
৪. সবার জন্য সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে সার্বিক উন্নয়ন করতে হবে।
৫. প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয় সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা মাঝেমধ্যে শুধু কয়েকটি বৃহৎ অর্থনীতির সক্ষমতা অথবা তাদের প্রয়োজনের আঙ্গিকেই সবকিছু দেখি। কিন্তু টেকসই বিশ্বের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীসমূহের অথবা অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনীতিগুলোর মূল উদ্বেগ নিরসনের উপায়ও বের করতে হবে।’
সফরসূচী অনুযায়ী ৪ জুলাই সকালে শেখ হাসিনা স্বাগত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপলে বীরদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত এক ভোজসভায় অংশ নেবেন। একই দিন বিকালে শেখ হাসিনার সিসিপিআইটিতে চীনা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একটি বিজনেস গোল টেবিল বৈঠকে অংশ নেবে। পরবর্তীতে ৫ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রীর চাইনিজ থিংক ট্যাংক ‘পাঙ্গোয়াল ইনস্টিটিউশন’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ব্যক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্য দিয়ে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বন্ধুর মতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে চীন এমনটাই প্রত্যাশা দেশবাসীর।