নিউজ ডেস্ক:
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন। এরই মধ্যে এই অর্থনৈতিক জোনে ৩৭১টি শিল্প-কারখানা স্থাপন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এসব কারখানায় কর্মসংস্থান হবে ৫০ হাজার মানুষের। পাশাপাশি সম্প্রসারিত হবে এ অঞ্চলের স্থানীয়দের ব্যবসা। বাড়বে আর্থিক সক্ষমতা।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন গণমাধ্যমে বলেন, ‘আগের ডেভেলপার পরিবর্তন করে চীনা সরকার নতুন ডেভেলপার নিয়োগ করেছে। এর ফলে গতি পেয়েছে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণ প্রক্রিয়া। ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের দুটি নেগোসিয়েশন মিটিং হয়েছে। এখন ডেভেলপার অ্যাগ্রিমেন্ট এবং জয়েন্ট ভেনচার অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলমান।’ তিনি বলেন, ‘সিআরবিসির সঙ্গে মিটিংয়ে মোটামুটি আমাদের মতপার্থক্য নিরসন করতে পেরেছি। আমরা অন্যান্য ইকোনমিক জোনের সঙ্গে তুলনা করে নেগোসিয়েশন করছি। দু-একটি বিষয় আমাদের এখনো নেগোসিয়েশন চলছে। আমরা চাই যত দ্রুত নেগোসিয়েশন সম্পন্ন হবে, তত তাড়াতাড়ি চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হবে। আর দ্রুত কাজ শুরু হবে।’ চায়না ইকোনমিক জোনে দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিনয় বাড়ৈ বলেন, নানা জটিলতার কারণে ২০১৯ সালের পর থেকে ইকোনমিক জোনের কাজ মোটামুটি বন্ধ ছিল। প্রায় নয় বছর আগে এ নিয়ে চূড়ান্ত পরিকল্পনা করার পর উদ্যোগটিতে হঠাৎ ভাটা পড়ে। দীর্ঘদিন থমকে থাকার পর চীনা সরকার নতুন করে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ডেভেলপার নিয়োগ করেছে চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন (সিআরবিসি)-কে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন টানেল থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে চায়না ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার জন্য ইতোমধ্যে ৭৮৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২০০ একর ভূমি উন্নয়ন করা হয়েছে। চীনের তৈরি এই অর্থনৈতিক জোনে স্থাপন করা হবে ৩৭১টি শিল্প-কারখানা। এর মধ্যে ওষুধ, তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, রাসায়নিক, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, প্লাস্টিক পণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, ফার্নেস ও সিমেন্ট কারখানা স্থাপিত হবে। চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন এলাকায় প্রবেশের জন্য আনোয়ারার পিএবি প্রধান সড়কের কালাবিবির দীঘি থেকে ইকোনমিক জোন পর্যন্ত এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের এবং বৈরাগ থেকে ইকোনমিক জোন পর্যন্ত চার লেনের এক কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হয়েছে। নির্মিত হয়েছে বৈরাগ অংশে প্রায় এক কিলোমিটার সীমানাপ্রাচীর। এরই মধ্যে প্রকল্প এলাকার ২০০ একর পাহাড়ি টিলা কারখানা স্থাপনের জন্য উপযোগী করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা ভূমিও চিহ্নিত করা আছে। বিশেষ এই অর্থনৈতিক জোনে ২৫০টি ডক জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে।
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনোয়ারা উপজেলায় চায়না ইকোনমিক জোনের কাজ উদ্বোধন করেন। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২৯১ একর খাসজমির দলিল ইতোমধ্যে সম্পাদন করেছে। পরিপূর্ণভাবে এ অর্থনৈতিক জোন বাস্তবায়ন হলে কর্মসংস্থান হবে প্রায় অর্ধলক্ষ বেকার জনগোষ্ঠীর। তবে করোনাকালে বন্ধ হয়ে যাওয়া এ প্রকল্পের কাজ এখনো স্থবির রয়েছে। তবে দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু হবে বলে আশাব্যক্ত করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণে আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলাকে ‘ওয়ান সিটি ফর টু টাউন’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। টানেলের কাজ দৃশ্যমান হওয়ার পর পর পাল্টে যেতে থাকে এ অঞ্চলের জনপদ। বঙ্গবন্ধু টানেলের সড়কের কিছু অংশ পড়েছে চায়না ইকোনমিক জোনে। টানেল সড়কের কাজ শেষ হওয়ার পরপরই পুরোদমে বিশেষ এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হবে। এ অর্থনৈতিক জোনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে দেশের অর্থনীতির জন্য। ভৌগোলিকভাবে শিল্প জোনটি ইতিবাচক স্থানে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯ কিলোমিটার, নগর থেকে ২৮ কিলোমিটার, শাহআমানত বিমানবন্দর থেকে শহর হয়ে ৪৬ কিলোমিটার, বহুল কাক্সিক্ষত কর্ণফুলী টানেলের পূর্ব পাড় থেকে সাত কিলোমিটার ও সিইউএফএল জেটি-সংলগ্ন ১৫ নম্বর ঘাট থেকে ৬ কিলোমিটার দূরত্বে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল অবস্থিত। ফলে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এ শিল্প জোনের গুরুত্ব বাড়ছে।
বঙ্গবন্ধু টানেল ও চায়না ইকোনমিক জোন ঘিরে আনোয়ারার চাতরী চৌমুহনী, কালাবিবির দীঘির মোড় ও বৈরাগ সেন্টার এলাকায় বেড়েছে ফসলি জমির দাম। ইতোমধ্যে কালাবিবির দীঘির মোড়ে গড়ে উঠেছে বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন। বাণিজ্যিক ভবন ঘিরে কয়েকটি ব্যাংকও শাখা খুলেছে। বেসরকারি বিভিন্ন প্রাইভেট ব্যাংকের পাঁচ-ছয়টি উপশাখা খোলা হয়েছে। অর্থনৈতিক জোন ও বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে প্রাণসঞ্চার হয়েছে এ এলাকায়।