রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪
নীড় পাতা / অর্থনীতি / ঈদের অর্থনীতি ॥ বড় হচ্ছে, দুই লাখ কোটি টাকার বাণিজ্যের আশা

ঈদের অর্থনীতি ॥ বড় হচ্ছে, দুই লাখ কোটি টাকার বাণিজ্যের আশা

করোনাভাইরাসের প্রকোপ না থাকায় প্রায় তিন বছর পর এবার প্রাণ খুলে ঈদ উৎসব পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ। শবেবরাতের পর থেকে শুরু হয়েছে ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা। ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে মার্কেট, শপিংমল, ফ্যাশন হাউস এবং বিভিন্ন পণ্যের শোরুমগুলোতে। এর আগে আগামী ১৪ এপ্রিল বাঙালির সার্বজনীন উৎসব ‘পহেলা বৈশাখ’ বাংলা নববর্ষ পালিত হবে সারাদেশে। একদিকে রোজার ঈদ, অন্যদিকে পহেলা বৈশাখের কেনাকাটা। মূলত এই দুই উৎসব ঘিরে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবাতাস বইছে। অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা এবং বাজার সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এবারের ঈদ ও পহেলা বৈশাখে অন্তত ২ লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে ঈদের অর্থনীতি। তাদের মতে, উৎসবকেন্দ্রিক এই বাণিজ্য দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চাপে থাকা ব্যবসা-বাণিজ্যে আবার গতি ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

উৎসবকেন্দ্রিক অর্থনীতির আকার কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। বিশেষ করে মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনমান উন্নত হচ্ছে। বাড়ছে তাদের ভোগ্যব্যয় ও কেনাকাটা। ফলে বাজার অর্থনীতির আকারও বড় হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-বোনাস, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং ব্যক্তিগত তহবিলের অর্থ ঈদের কেনাকাটায় সাধারণত ব্যবহার করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের এক বিশাল বাজার। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও বিপুল পরিমাণ পণ্যসামগ্রী আমদানি করা হচ্ছে। ঈদের অর্থনীতিতে পোশাক, জুতা, ভোগ্যপণ্য ও ইলেক্ট্রনিক্সের মতো শীর্ষ ১০ পণ্যের কেনাকাটায় বাণিজ্য হবে দেড় লাখ কোটি টাকার ওপরে। এর বাইরে আরও অনেক রকম পণ্যের কেনাকাটা ও লেনদেন হবে ঈদকে ঘিরে। যার পরিমাণ হবে প্রায় আরও ৫০ হাজার কোটি টাকা। করোনার প্রকোপ না থাকায় এবার অনেকেই বাড়তি কেনাকাটা করবেন। এছাড়া প্রতিবছর ঈদে রেমিটেন্সের পরিমাণ আরও বাড়ছে।  এভাবেই বড় হচ্ছে ঈদের অর্থনীতি।

সবমিলিয়ে ঈদে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার ব্যবসায়-বাণিজ্য হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিসহ ব্যবসায়ীদের অন্যান্য সংগঠন। ঈদের অর্থনীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদকেন্দ্রিক বেচাবিক্রি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু করোনার কারণে গত তিন বছরে ঈদের অর্থনীতিতে অস্বস্তি ছিল। তবে এ বছর প্রেক্ষাপট পুরোপুরি ভিন্ন। এখন করোনা নেই। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঈদের কেনাকাটা করবেন। বৈশ্বিক সংকটের কারণে এবার সব ধরনের পণ্যের দাম একটু বাড়বে। এরপরও মানুষ কেনাকাটা করবেন বলে আশা করছি। এর ফলে অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসবে।

বড় হচ্ছে ঈদের অর্থনীতি ॥ প্রতিবছর নতুন নতুন চাহিদা বাড়ায় বড় হচ্ছে ঈদের অর্থনীতি। ঈদকে সামনে রেখে সেজে উঠেছে রাজধানীসহ দেশের ছোট-বড় সব বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলো। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী  এখন কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে বাড়ছে ঈদের অর্থনীতির আকার। টাকার অঙ্কে যা প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার বেশি।

এর মধ্যে থাকবে সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বোনাস। এক কোটি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আরও প্রায় দেড় কোটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বোনাস। এ পরিমাণ টাকার সবই ঈদ অর্থনীতিতে যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি মার্চ মাসের প্রথম ১৭ দিনে রেমিটেন্স এসেছে ১১৬ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু মার্চ মাসে ২০ হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স আসতে পারে। ঈদ সামনে রেখে রেমিটেন্স আরও বেশি আসবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত প্রবাসীরা আপনজনদের কাছে ঈদ উৎসব পালনে বাড়তি টাকা পাঠাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, আগামী তিন মাস পর্যন্ত রেমিটেন্সের এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। রোজার ঈদের পরই শুরু হবে কোরবানি ঈদের প্রস্তুতি। সেই সময়ও প্রবাসীরা বিপুল অঙ্কের রেমিটেন্স পাঠাবেন। এর ফলে ডলার সংকট কেটে বাড়বে রিজার্ভ। দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাড়াতে হলে এখন ডলারের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ঈদকে ঘিরে সেই ডলার সংকট কাটবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্যবসায়ীরা সারাবছর এই সময়ের জন্য মুখিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে ঈদকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন বিনিয়োগ করছেন। করোনার কারণে বিধিনিষেধের মুখে গত তিন বছর ব্যবসায়ীরা সেভাবে মুনাফা করতে না পারলেও এবার তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছি। ইতোমধ্যে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে পাইকারি মার্কেটের পর এখন খুচরা পর্যায় থেকে ভোক্তারা সাধ্যমতো কেনাকাটা করছেন। তিনি বলেন, ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ অনেক বাড়াচ্ছেন। ফলে রিজার্ভ শক্তিশালী হচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য যখন চাপের মুখে তখন ঈদের কারণে আমরা ডলার পাচ্ছি। এটা সবচেয়ে ভালো দিক। 

পাইকারি মার্কেটগুলোতে শবেবরাতের আগে থেকে বেচাকেনা শুরু হয়। ওই সময়ে বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল, ফ্যাশন হাউস ও শোরুমগুলোর খুচরা বিক্রেতারা পাইকারদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করেন। তবে এবার শবেবরাতের পর থেকে ভোক্তারা ঈদের কেনাকাটা শুরু করেছেন। বিশেষ করে দর্জিপাড়া খ্যাত রমনা ভবন, গাউছিয়া মার্কেটের দোতলা, নিউমার্কেটের দ্বিতীয় তলাসহ ঢাকার অন্যান্য এলাকায় কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোক্তাদের অর্ডার মতো নতুন নতুন পোশাক-আশাক বানাচ্ছেন দর্জিরা। এছাড়া রোজার প্রথমদিন থেকেই মার্কেটগুলোতে ভিড় বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। অনেকে ঈদের বড় ভিড় এড়াতে রোজার প্রথম সপ্তায় কেনাকাটা করবেন। অনেকে আবার নিজের পছন্দের পোশাকটি আগেভাগে কিনে সংগ্রহ করে রাখছেন। প্রবাসী ভাইবোনদের জন্য আগে-ভাগে পোশাক-আশাক কিনে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে।

দেশের ২৫ লাখ দোকানে হবে ঈদের কেনাকাটা ॥ বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, ঈদে সারাদেশের ২৫ লাখ দোকানে কেনাকাটা শুরু হবে। মুদি থেকে শুরু করে এসব দোকানের মধ্যে কাপড়ের দোকান, শোরুম ও ফ্যাশন হাউসগুলোও রয়েছে। এসব দোকানে বছরের অন্য সময় প্রতিদিন ৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হলেও রোজার মাসে সেটি তিনগুণ বেড়ে হয় ৯ হাজার কোটি টাকা। ওই হিসাবে রোজার এক মাসে এই ২৫ লাখ দোকানে ঈদ পোশাক থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্য বিক্রি হবে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকারও বেশি। ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় পোশাকের বাজারে। পোশাকের দোকানেই ঈদের কেনাকাটা এবার ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ কোটি কোটি টাকার বেশি। শুধু তাই নয়, ঈদ ঘিরে অর্থনীতির সব খাতেই গতি ফিরে আসে।

ঈদের মাসে যেমন সারাদেশের শপিংমল বা মার্কেটগুলো গতিশীল হয়- তেমনি সারাদেশের কুটিরশিল্প, তাঁতশিল্প, দেশীয় বুটিক হাউসগুলোয় বাড়ে কর্মচাঞ্চল্য ও আর্থিক লেনদেন। বিপুল অর্থ ব্যয়ের কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের গতিশীলতা আসে। ব্যাংকিং খাতে লেনদেন বাড়ে ব্যাপক হারে। ঈদ উপলক্ষে রেকর্ড গতিতে দেশের অর্থনীতিতে জমা হচ্ছে প্রবাসীদের রেমিটেন্স। এদিকে মানুষের চাহিদা পূরণে বাজারে অতিরিক্ত নতুন নোট ছাড়বে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা ও যানজটের ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশের অনলাইন বাজার। রোজার আগে অর্থনীতিতে এক ধরনের প্রভাব থাকে। আর রোজা শুরুর পর থাকে আরেক ধরনের।

রোজার আগে অর্থনীতি সচল থাকে ভোগ্যপণ্যকেন্দ্রিক। এ মাসে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। রোজা শুরুর প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই মূলত শুরু হয় রোজাকেন্দ্রিক অর্থনীতি। কেননা রোজার জন্য পণ্য আমদানি কার্যক্রম অনেক আগেই শুরু করতে হয় ব্যবসায়ীদের। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, মার্কেটগুলো ঈদের বেচাকেনার জন্য এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বেচাকেনাও শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ উৎসব পৌষ-পার্বণে কেনাকাটা করে থাকেন। বিশেষ করে ঈদের সবারই নতুন কিছু চাই। ফলে সেভাবেই ব্যবসায়ীরা পণ্যের উৎপাদন ও আমদানি করে থাকেন। করোনার প্রকোপ না থাকায় এবার ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি যথেষ্ট ভালো। ইতোমধ্যে পাইকারি বাজারে ভালো বেচাকেনা হয়েছে। আশা করছি, এবার খুচরা পর্যায়ে রেকর্ড বেচাবিক্রি হবে। তিনি বলেন, নানা সংকটের কারণে অর্থনীতি এখন চাপের মুখে রয়েছে। তবে ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনায় সেই চাপ সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়াবেন ব্যবসায়ীরা।

শীর্ষে দশ পণ্য ॥ এবারের ঈদে শীর্ষ ১০ পণ্যের কেনাকাটায় দেড় লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঈদ কেনাকাটার সবার শীর্ষে থাকবে পোশাক। এর পরই জুতা-স্যান্ডেল, লুঙ্গি-গেঞ্জি-গামছা। খাদ্যপণ্যের মধ্যে সেমাই-চিনি, মাংস, মিষ্টি, গ্রসারি পণ্য রয়েছে। প্রসাধনী, ইলেক্ট্রনিক্স টিভি, মোবাইলসহ নানা ধরনের পণ্যও কেনা হয় ঈদ উপলক্ষে।

অনেকে আবার সোনার গয়না, ঘরের আসবাবপত্র কেনেন বলে ঈদে এসব পণ্যের বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক গুণ   বেড়ে যায়। এর বাইরে ঈদের ছুটিতে পর্যটন খাতেও মানুষ অর্থ ব্যয় করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি পরিবার ন্যূনতম থেকে ১০-১৫ হাজার টাকা ব্যয় করে ঈদকে ঘিরে। সামর্থ্য অনুযায়ী এই অঙ্ক আরও বাড়ে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঈদে পোশাকসহ পরিধেয় খাতে থেকে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ কোটি, জুতা-কসমেটিকস তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি, ভোগ্য পণ্য সাত হাজার কোটি, জাকাত-ফিতরা ও দান-খয়রাত ৩৮ হাজার কোটি, যাতায়াত বা যোগাযোগ খাতে ১০ হাজার কোটি, সোনা-ডায়মন্ড পাঁচ হাজার কোটি, ভ্রমণ খাতে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি, ইলেকট্রনিক্স চার হাজার কোটি, স্থায়ী সম্পদ ক্রয় এক হাজার কোটি, পবিত্র ওমরাহ পালন তিন হাজার কোটি, আইনশৃঙ্খলাসহ অন্যান্য খাতে লেনদেন হয় আরও এক হাজার কোটি টাকা। তবে এফবিসিসিআইয়ের পাশাপাশি আরও কয়েকটি সংগঠন থেকে ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির আকার ঘোষণা করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির আকার প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। এছাড়া করোনা না থাকায় এবার রাজনৈতিক দলসহ নানা ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইফতার পার্টির আয়োজন করছে। এটিও অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দিক। ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্যপণ্য, পোশাক, বিনোদন ও পরিবহন খাতে বাড়তি এই অর্থ যোগ হবে। এবার ঈদ বাজারকে ঘিরে দেশের অর্থনীতি আরও চাঙ্গা ও গতিশীল হচ্ছে।

এদিকে ঈদ অর্থনীতির একটি বড় চালিকাশক্তি হচ্ছে পোশাকের বাজার। এ সময় দোকানগুলোতে পোশাকের বেচাকেনা তিন থেকে চারগুণ বেড়ে যায়। অভ্যন্তরীণ পোশাকের সবচেয়ে বড় জোগান আসে পুরান ঢাকার উর্দু রোডের পোশাক মার্কেট থেকে। ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটসহ দেশের বিভাগ ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের মার্কেটগুলোতে দেশী পোশাক সরবরাহ হয় পুরান ঢাকার এই মোকাম থেকে। এর বাইরে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড এবং চীন থেকেও প্রচুর তৈরি পোশাক আমদানি করা হয়। ঈদ বাজারে এসব দেশ থেকে পোশাক আমদানি আরও বেড়ে যায়। সব মিলে এবারের ঈদে পোশাক বাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হওয়ার আশা ব্যবসায়ীদের। এছাড়া ঈদে সব ধরনের নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো  ভোজ্যতেল, মাংস, চিনি, ডাল, সেমাই ও পেঁয়াজ। ফলে এসব পণ্যের আমদানিও বাড়ে। রোজা ও ঈদে  ভোজ্যতেলের চাহিদা হচ্ছে প্রায় আড়াই লাখ টন, চিনি সোয়া ২ লাখ টন থেকে পৌনে তিন লাখ টন, ডাল ৬০ হাজার টন, ছোলা ৫০ হাজার টন, খেজুর ১৩ হাজার টন, পেঁয়াজ ৩ লাখ ২৫ হাজার থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন এবং রসুনের চাহিদা প্রায় ৮০ হাজার টন। এসব পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব টাকার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকার জোগান দেওয়া হয়।

মার্কেট-শপিংমলে ভিড় বাড়ছে ॥ শবেবরাতের পর থেকে মার্কেট, শপিংমল এবং ফ্যাশন হাউসগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। রোজার প্রথমদিন শুক্রবার থেকেই মার্কেটগুলো জমবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, ইস্টার্ন প্লাজা, মৌচাক মার্কেট, আনারকলি মার্কেট, কর্ণফুলি গার্ডেন সিটি মার্কেট, নিউ মার্কেট, চাঁদনী চক, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, গাউসিয়া, ধানমন্ডি হকার্স, গাউসল আজম মার্কেট, রাইফেলস স্কয়ার, ক্যাপিটাল মার্কেট, ধানমন্ডি প্লাজা, মেট্রো শপিং মল, প্রিন্স প্লাজা, রাপা প্লাজায় দেখা গেছে থরে থরে সাজানো হয়েছে নতুন পোশাকে। থ্রি পিস, পাঞ্জাবি ও বাচ্চাদের পোশাক কেনায় আগ্রহী বেশি ক্রেতারা।

এছাড়া বেইলি রোড থেকে আগেভাগে পছন্দের শাড়ি কিনছেন ক্রেতারা। এছাড়া তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেট, ওয়ারী র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিট, বেইলি রোড এবং মিরপুর রোডের ফ্যাশন হাউসগুলো এখন ভরপুর নতুন নতুন পোশাকে। বেচাবিক্রিও হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এছাড়া আড়ং, বাংলার মেলা, ক্যাটস আই, মেনজ ক্লাবসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে বাহারি ডিজাইন ও রঙের পোশাক আনা হচ্ছে। রোজার শুরু থেকে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। 

আরও দেখুন

সুইজ কন্ট্রাক্ট প্রতিনিধিদের সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের মতবিনিময় সভা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:সুইজ কন্ট্রাক্ট প্রতিনিধিদের সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার  অফ কমার্সের মতবিনিময় সভা  অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার বিকেল …