মঙ্গলবার , নভেম্বর ৫ ২০২৪
নীড় পাতা / উত্তরবঙ্গ / রাজশাহীতে অর্থের বিনিময়ে বিএনপির কমিটি! কেন্দ্রে তৃণমূল নেতাকর্মীর অভিযোগ

রাজশাহীতে অর্থের বিনিময়ে বিএনপির কমিটি! কেন্দ্রে তৃণমূল নেতাকর্মীর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক,পুঠিয়া: নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি গুলোতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে করে ঘরে বসে রাজাকার ও যুদ্ধপরাধী, অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে টাকার বিনিময়ে উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর একাধিক অভিযোগ ওঠেছে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও চারঘাট বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু সাইদ চাদঁ ও সদস্য-সচিব বিশ্বনাথ সককার এর বিরুদ্ধে।

রাজশাহী জেলা বিএনপির চারটি ইউনিটের নতুন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে কেন্দ্রে নালিশ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। পুঠিয়া উপজেলা ও পৌরসভা এবং দুর্গাপুর উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির কমিটি নিয়ে জেলার আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে এ নালিশ করা হয়। মঙ্গলবার দলের মহাসচিবকে দেয়া লিখিত অভিযোগে স্থানীয় নেতাকর্মীরা সম্প্রতি গঠণ করে দেয়া এসব আহবায়ক কমিটি বাতিল তরে পুণর্গঠনের দাবি তুলেছেন। তারা বলেছেন, চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বিএনপির আহবায়ক কমিটিগুলো। তবে ইতোমধ্যে একটি কমিটির আহবায়ক পদত্যাগও করেছেন বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ অক্টোবর পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলার ইউনিটের ৫৩ সদস্য করে আহ্বায়ক কমিটি দেয়া হয় ও পুঠিয়া ও দুর্গাপুর পৌর বিএনপি ইউনিটের । ৩১ সদস্য দিয়ে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ এসব কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটিগুলোতে চাঁদের অনুসারিদেরই স্থান দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এতে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) সংসদীয় আসনের বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ এবং অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ফলে তারাই এসব কমিটির বিরুদ্ধে সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে।

এন্তাজুল বাবুকে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক যাকে করা হয়েছে তিনি জাতীয়পার্টির নেতা মোল্লা আবদুল ওয়াহেদ একজন রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে তার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে দুর্গাপুর থানায় মামলা হয়েছে। তার বয়স এখন ৯৫ বছর, এখন চলাচলে অক্ষম। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। ২০০১ সালে হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী । তার পুরো পরিবারই জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে জড়িত। ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাবেক সাংসদ কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছেন। কাজ করেছেন তার উপদেষ্টা হিসেবে। দারার আধা-সরকারি (ডিও) লেটারে মোল্লা আবদুল ওয়াহেদ উপজেলার মাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হন। আর তাকেই করা হয়েছে বিএনপির আহ্বায়ক।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, মোল্লা আবদুল ওয়াহেদ তার বাসার কাজের লোক সেকেন্দার আলীকে দিয়ে বিএনপির সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা সহ ১৯ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছিলেন। ২০০৭ সালে সেই মামলায় নাদিমসহ সকলের সাত বছর করে কারাদন্ড হয়। ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ্যাড. নাদিম মোস্তফা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। আর সদস্য সচিব অধ্যাপক জোবায়ের হোসেন বিএনপির দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে তিনি জামানত হারান। পরের নির্বাচনেই তিনি অংশ নেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। অধ্যাপক জোবায়ের কখনোই বিএনপির রাজনীতি করেননি। দুর্গাপুর পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আয়নাল হক ও সদস্য সচিব রেজাউল ইসলাম স্বপন ইতিপূর্বে দলের কোনো শাখার সদস্য ছিলেন না। ৫১ সদস্যের এই কমিটিতে পাঁচ জনের নাম লেখা হয়েছে দুইবার করে। দুর্গাপুরের হাজার হাজার নেতাকর্মী যখন রাজনৈতিক মামলায় জর্জরিত তখন পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক হাসানুজ্জামান লাল্টুর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। অথচ তাকেই আনা হয়েছে নেতৃত্বে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পুঠিয়ার বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিকের উপজেলা বিএনপির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অতীতেও ছিলো না। তিনি ঢাকায় একটি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আর সদস্য সচিব এন্তাজুল হক বাবুও পুঠিয়ায় বসবাস করেন না। অংশ নেন না দলীয় কর্মকান্ডে। এন্তাজুল বাবু রাজশাহী মহানগর এলাকার ব্যবসায়ী ইসফা খায়রুল হক শিমুলের বড় ভাই। শিমুল নগর আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতার ব্যবসায়ীক অংশ্বীদার। তবে এন্তাজুল বাবু সম্পর্কে আবু সাঈদ চাঁদের জামাতা ।এর জন্যই তাকে সদস্য-সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আবু বক্কর ছিদ্দিককে আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব হিসেবে এন্তাজুল বাবুকে দায়িত্ব দেয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশ।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ৫১ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির ৩৯ নম্বর সদস্য আবদুর রউফ রাজশাহীতে শিমুলের দোকানের কর্মচারী। রউফ আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাবেক এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারার আঅœীয়। ৭ নম্বর সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম জুম্মার দায়ের করা মিথ্যা মাছ চুরির মামলায় বিএনপির স্থানীয় সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফাসহ ২৭ জন নেতাকর্মী জেল খেটেছেন। আওয়ামীলীগের দারা এমপি থাকা অবস্থায় জুম্মা তার সঙ্গে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিতেন তার প্রমানও রয়েছে সাধারণ নেতাকর্মীদের কাছে।

এদিকে পুঠিয়া পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল হামিদ দীর্ঘ দিন ধরেই শর্য্যাশায়ী। তার পক্ষে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়। সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেন জুয়েল কোনো দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন না বা দলীয় তার কোন পরিচয়ও অতীতে ছিলনা। দলের নেতাকর্মীরাই হামিদ এবং জুয়েলকে চেনেন না। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। বিএনপির সাবেক এমপি নেতা নাদিম মোস্তফাকে এলাকায় কোণঠাসা করতে এসব কমিটি দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা বলেন, সাজানো-গোছানো বিএনপিকে আওয়ামী লীগের হাতে তুলে দিতে এসব কমিটি দেয়া হয়েছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ ও সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার কমিটি করার জন্য বিভিন্ন উপজেলায় সভা করেছেন। কিন্তু কমিটি দিয়েছেন ঘরে বসে। তাদের মূল উদ্দেশ্যে নাদিম মোস্তফাকে পুঠিয়া-দুর্গাপুর থেকে উচ্ছেদ করা। কিন্তু এতে দলের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে, নেতাকর্মীরা হতাশায় ভুগছে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি দীর্ঘদিন হলে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার বলেন, আহ্বায়ক কমিটি করতে আমরা সভা করেছি। যাদের পক্ষে উপস্থিতি এবং সমর্থন বেশি পেয়েছি তাদের আহ্বায়ক কমিটিতে দায়িত্ব দিয়েছি। এই কমিটি তো বেশি দিনের জন্য নয়। এক-দুই মাস দায়িত্ব পালন করবে। সুতরাং এই কমিটি নিয়ে এতো বিতর্ক কিংবা অভিযোগ করার কিছু নেই। #

আরও দেখুন

সিংড়ায় যৌথবাহিনীর ব্যাপক তল্লাশি

নিজস্ব প্রতিবেদক,,,,,,, সিংড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালায় যৌথবাহিনী। এসময় তাদের মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, কাভার্ড …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *