চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে চারটি, বেনাপোল ও ভোমরা কাস্টম হাউসে একটি করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি স্ক্যানার স্থাপন করা হবে। স্ক্যানারগুলো কনটেইনারে থাকা প্রতিটি পণ্য শনাক্তকরণে সক্ষম। এতে অবৈধ পণ্য আনা বন্ধ হবে। কমবে শুল্ক ফাঁকি। পণ্য খালাসে সময় কমে আসবে উল্লেখযোগ্য হারে।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনে তিন কাস্টম হাউসে বসছে ছয়টি অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী স্ক্যানার। নাচট্যাক নামের একটি প্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এই যন্ত্রগুলো সরবরাহ করবে। এ বিষয়ে বুধবার চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
অত্যাধুনিক এসব স্ক্যানার চালু হলে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও সহজ ও গতিশীল হবে। পণ্য দ্রুত খালাস হবে। ব্যবসার খরচও কমবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কাস্টমস নতুন যুগে প্রবেশের ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবন মিলনায়তনে চুক্তিতে সই করেন এনবিআরের পক্ষে সদস্য (শুল্ক: অডিট, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) ড. আব্দুল মান্নান শিকদার এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কেম্পানীর প্রতিনিধি হাও ওনেইয়ে।
এনবিআর সূত্র বলেছে, বাংলাদেশ কাস্টম বিভাগকে আধুনিকায়ন করতে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে অত্যাধুনিক স্ক্যানার মেশিন স্থাপন তারই অংশ। এতে সরকারের ব্যয় হবে ৩২৭ কোটি টাকা।
বর্তমানে এনবিআরের অধীনে চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে ১০টি স্ক্যানার মেশিন রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ৬টি স্ক্যানার।
অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য ড. আব্দুল মান্নান সিকদার বলেন, ‘কাস্টমসে থাকা আগের স্ক্যানারগুলো পুরনো এবং সক্ষমতা কম। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন হওয়ায় নতুন স্ক্যানারগুলোর সক্ষমতা বেশি। এগুলোর বহুমুখী ব্যবহার সম্ভব।
‘অত্যাধুনিক এসব স্ক্যানারের সুবাদে দেশের আমদানি-রপ্তানী বাণিজ্যে সক্ষমতা বাড়বে। কমবে চোরাচালান। কমে আসবে দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকিও। আগামী ৮ মাসের মধ্যে নতুন স্ক্যানার মেশিনগুলো স্থাপন করা হবে।’
জানা যায়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে চারটি, সবচেয়ে বড় স্থল বন্দর বেনাপোল কাস্টম হাউসে একটি ও সাতক্ষীরার ভোমরা কাস্টম হাউসে একটি নতুন স্ক্যানার স্থাপন করা হবে।
মোট আমদানি শুল্ক আদায়ের ৮০ শতাংশ সংগৃহীত হয় এই তিন কাস্টম হাউসের মাধ্যমে। এর মধ্যে সিংহভাগ আদায় হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে।
ড. মান্নান সিকদার জানান, নতুন স্ক্যানারগুলো বসানোর কাজ শেষ হলে সেন্ট্রাল ইমেজিং সিস্টেম চালু করা হবে। এর মাধ্যমে এনবিআর ঢাকায় বসে পণ্য খালাস সরাসরি মনিটর করতে পারবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্ক্যানার ব্যবহারের ফলে কন্টেইনারের কায়িক পরীক্ষার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।
সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন কাস্টম হাউসে বর্তমানে ১০টি স্ক্যনার মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে চারটি অনেক পুরনো। সাধারণত একটি স্ক্যানার মেশিনের ব্যবহারযোগ্য মেয়াদ ১০ বছর। এসব মেশিনের আয়ুষ্কাল প্রায় শেষ পর্যায়ে। ফলে সেগুলো ভালোভাবে কাজ করছে না।
এনবিআরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেসব স্ক্যানার বসানো হচ্ছে সেগুলো খুবই আধুনিক। স্ক্যানারগুলো বসানো হলে কনটেইনারের ভেতরে যা থাকবে সবই ধরা পড়বে। এতে অস্ত্র, মাদক, গোলাবারুদসহ অবৈধ পণ্য আনা বন্ধ হবে। পণ্য আামদনিতে মিথ্যা ঘোষণাও নিয়ন্ত্রিত হবে। ফলে কমবে শুল্ক ফাঁকি।’
এনবিআরের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা যায়, যেসব কারণে বন্দরে পণ্য খালাসে বিলম্ব হয় তার মধ্যে অন্যতম কারণ সরেজমিন পরীক্ষা বা ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন।
এনবিআরের সদস্য মান্নান সিকদার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আধুনিক স্ক্যানার বসলে কায়িক পরীক্ষা কমে আসবে। কেননা তখন কনটেইনারের ভেতরের সব পণ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শনাক্ত করা যাবে। এতে পণ্য খালাসে সময় কমে আসবে।’
এনবিআরের সাম্প্রতিক করা টাইম রিলিজ স্টাডিতে দেখা যায়, বন্দরে জাহাজ ভেড়ার পর কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পণ্য খালাস করতে সময় লাগে গড়ে ১১ দিন। এটি বিশ্বের আধুনিক বন্দরগুলোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এ প্রেক্ষাপটে ব্যবসা সহজ করতে কাস্টম বিভাগ আধুনিকায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে এনবিআর। এজন্য বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়নাধীন।