বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। এটি মৌসুমি ফল। তাই সব মৌসুমে রসালো ফলটির স্বাদ পাওয়া যায় না। এ কারণে কমে গেছে কাঁঠালের অর্থনৈতিক গুরুত্বও। তবে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে বারোমাসি কাঁঠালের জীবনরহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করছেন।
বছর তিনেক আগে খাগড়াছড়ির রামগড়ের চা বাগানে বারো মাস ফলন দেয়, এমন এক জাতের কাঁঠালের সন্ধান পান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা। দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীরা এ জাতের কাঁঠালের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন।
নতুন জাতের এই কাঁঠালের নাম ‘বারি-৩’ দিয়েছে বারি। এই জাতের কাঁঠালগাছ যাতে সারাদেশে হয়, ফল দেয়, সেই লক্ষ্যে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন। গবেষণার ফলাফল চলতি মাসে ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন প্লান্ট সায়েন্স’ নামের একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার পরের ধাপ হিসেবে রপ্তানিযোগ্য ও সহজে সংরক্ষণ করা সম্ভব এমন জাতের কাঁঠাল উদ্ভাবনে গবেষকরা কাজ করছেন।
বারোমাসি এই কাঁঠালের জীবনরহস্য উন্মোচনের (জিনোম সিকোয়েন্সিং) কাজটি যৌথভাবে করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইজিবিই), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, কানাডার গেল্গাবাল ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটি, ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল, কানাডা ও ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বিজ্ঞানীরা।
গবেষণায় নেতৃত্বে থাকা বশেমুরকৃবির অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, আমরাই পৃথিবীতে প্রথম বারোমাসি কাঁঠালের একটি জাতের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছি। এর মধ্য দিয়ে রামগড়ের পাহাড়ে জন্মানো একটি কাঁঠালকে নিবন্ধনের মাধ্যমে নতুন জাত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বারোমাসি কাঁঠালের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচিত হওয়ায় জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে নানা স্বাদের ও বৈশিষ্ট্যের নতুন নতুন কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। বারো মাস ফল উৎপাদনকারী জিন ও ডিএনএ সিকোয়েন্সের স্বাতন্ত্র্য খুঁজে পাওয়া গেছে। এটি কাঁঠালের জিন প্রকৌশল বা মলিকুলার ব্রিডিংয়ে সহায়ক হবে।