নিউজ ডেস্ক:
নভেম্বর মাসে বিশ্বের অনেক বড় দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে এসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হয়তো এখনই নীতি সুদহার কমানোর পথে যাবে না, যদিও নীতি সুদ বৃদ্ধির হার কমে আসবে, এমনটাই ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করবে।
দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক প্রান্তিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমবে। মূলত জ্বালানি ও খাদ্যের দাম কমার কারণে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে। বাস্তবতা হচ্ছে, জ্বালানি ও খাদ্যের দাম এক বছর আগের পর্যায়ে ফিরে গেছে। একই সঙ্গে শিল্পের কাঁচামালের দামও কমতির দিকে।
আজ মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হিসাব প্রকাশিত হওয়ার কথা। ধারণা করা হচ্ছে, নভেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৩, যা গত অক্টোবরে ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। গত জুনে দেশটির মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ১০ দশমিক ৯ শতাংশে ওঠে। আগামীকাল বুধবার যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির হিসাব প্রকাশিত হওয়ার কথা। ধারণা করা হচ্ছে, নভেম্বরে দেশটির মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসবে, গত অক্টোবরে যা ছিল ১১ দশমিক ১ শতাংশ। এদিকে ইউরো অঞ্চলের কোর মূল্যস্ফীতি (খাদ্য ও জ্বালানি ছাড়া) নভেম্বরে সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে—৫ শতাংশ। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি নভেম্বর মাসে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে বলেই জানা গেছে। ভারতেও নভেম্বরে খুচরা মূল্যস্ফীতি কমে ৬ শতাংশের নিচে নেমেছে।
তবে আগামী বছর অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে—এমনটা মনে করছেন না মার্কিন ব্যাংক সিটির প্রধান অর্থনীতিবিদ নাথান শিটস। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে তিনি বলেছেন, সেবা খাতের ধারাবাহিক মূল্যস্ফীতি এবং তার সঙ্গে নিম্ন হারে হলেও ধারাবাহিকভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধি, ধীর লয়ে আসা মন্দা—এসব কিছুই আগামী বছরের জন্য খারাপ সংবাদ।
এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা অর্থনীতিকে জোর করে সংকুচিত রাখার বিষয়ে আরও সচেতন হয়ে উঠছেন। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন, ‘মূল্যস্ফীতি আমরা ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য যা করা দরকার করব, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকার হিসেবে আমরা চাই না, অর্থনীতিতে চাহিদা কমে যাক বা মার্কিন অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়ুক। আমরা অর্থনীতিকে বেশি টাইট দিতে চাই না। কিন্তু মূল্যস্ফীতির হার প্রত্যাশামতো না কমলে ফেডারেল রিজার্ভ এখনই নীতি সুদহার হ্রাসের দিকে যাবে না। ফলে যাঁরা আশা করছিলেন, ২০২৩ সালে ফেড নীতি সুদহার অনেকটাই কমাবে, তাঁদের সেই আশায় গুঁড়েবালি।’ তারা ইতিমধ্যে বলেছে, ২০২৩ সালে নীতি সুদহার বেশি থাকবে। তবে বৃদ্ধির হার কমবে।
এদিকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নীতি সুদ বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনবে বলে জানা গেছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তারা এখনো ঐকান্তিক। তারা উভয়েই বলেছে, আগামী দিনে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করা হবে।
তবে সামগ্রিকভাবে মন্দাভাব থাকার কারণে আগামী বছর জ্বালানি ও খাদ্যের দাম আর তেমন একটা বাড়বে না বলেই ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমলে এবং ফেড নীতি সুদ বৃদ্ধির হার হ্রাস করলে বিদেশি বিনিয়োগের ধারা বাড়বে। অর্থের প্রবাহ বাড়তে শুরু করলে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটলে বিশ্ব অর্থনীতি আবারও স্বাভাবিক হবে, এমনটাই প্রত্যাশা।