শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ বিনিয়োগে আনার উদ্যোগ

সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ বিনিয়োগে আনার উদ্যোগ

নিউজ ডেস্ক:
যদি আইনি জটিলতা না থাকে, তাহলে এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। এটা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো হবে। এতে করে ডিভিডেন্ডের পুরো টাকা না আসলেও একটা সিগনিফিক্যান্ট অ্যামাউন্ট পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে। কারণ, বিওতে টাকা থাকলে আজ হোক, কাল হোক কিছু লেনদেন হবেই: ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর যেসব ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে তার পরিমাণ সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিপুল পরিমাণ এই অর্থের পুরোটা না হলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পুঁজিবাজারে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

লভ্যাংশের অর্থ সাধারণত বিনিয়োগকারীর ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চায় লভ্যাংশের অর্থ গ্রাহকের বিও হিসাবে জমা হোক। এ লক্ষ্যে কাজ করছে কমিশন।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়টা নিয়ে সম্প্রতি কমিশন মিটিংয়ে আলোচনা করেছি। আমরা এটার সুবিধা, অসুবিধা দুটোই দেখব। তারপর এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

আইনি জটিলতা না থাকলে এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা পড়লে অনেকেই তা আর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন না। বিও হিসাবে নগদ অর্থ জমা পড়লে এর পুরোটা না হলেও বড় একটা অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে। এতে বাজারের সংকট উত্তরণে সহায়ক হবে।

এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ‘যদি আইনি জটিলতা না থাকে, তাহলে এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। এটা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো হবে। এতে করে ডিভিডেন্ডের পুরো টাকা না আসলেও একটা সিগনিফিক্যান্ট অ্যামাউন্ট পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে। কারণ, বিওতে টাকা থাকলে আজ হোক, কাল হোক কিছু লেনদেন হবেই।’

নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পূর্বে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করার ওপর জোর দেন তিনি। বলেন, ‘কোনো আইনি জটিলতা আছে কি-না তা যাচাই করে নিতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো দেশ করেছে কি-না, করলে কী ধরনের অসুবিধায় পড়েছে বা রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে অবগত ও সমাধান বের করে তবেই বাস্তবায়ন করতে হবে। তা ছাড়া হুট করে বাস্তবায়ন করা যাবে না।’

গত ১ জুলাই থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে জুন ক্লোজিং, কয়েকটি অন্তর্বর্তীকালীন ও দুই-একটি ২১ সালের ডিসেম্বর ক্লোজিং বিমা কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ পর্যন্ত ২১৫ কোম্পানির পর্ষদ ৮ হাজার ৫৬৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

এর আগে চলতি বছরের ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ সভা করা (জানুয়ারি-মে ২০২২) ৯০ কোম্পনির মধ্যে ৮২ কোম্পানির পর্ষদ অন্তর্বর্তীসহ ৯ হাজার ৩০১ কোটি ৭২ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।

অপরদিকে আগের বছরে জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে (১ জুলাই-২৬ নভেম্বর ২০২১) পর্যন্ত সময়ে ২১৩ কোম্পানির পর্ষদ ৮ হাজার ৫৯৫ কোটি ৮ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক হিসাবে লভ্যাংশ দেয়ার ফলে তা বেশিরভাগই পুঁজিবাজারে ফিরে আসে না। ব্যাংকে হিসাবে লভ্যাংশ চলে গেলে সেটা আবার ব্রোকারেজ হাউজে জমা দিতে ঝামেলা মনে করেন অনেকেই। অলসতা করেও অনেক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বিওতে দিতে চান না।

এ ছাড়া দেশের পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বেশি এবং তারা লভ্যাংশও পান ছোট আকারের। যে কারণে তারা ওই স্বল্প লভ্যাংশ তুলে বিওতে জমা দেয়াকে পরিশ্রমের তুলনায় ফলপ্রসু মনে করে না। এ কারণে নগদ লভ্যাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয় না।

এই পরিস্থিতিতে নগদ লভ্যাংশকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আনার জন্য ব্যাংক হিসাবের পরিবর্তে বিও হিসাবে দিতে হবে। এতে করে হাজার হাজার কোটি টাকার তারল্য বাড়বে। যা বর্তমান সময়ে করতে পারলে পুঁজিবাজারের জন্য খুবই সহায়ক হবে।

ডিবিএর সাবেক সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অনেকেই বিনিয়োগ করে ৫০০, ১০০০ হাজার, ২০০০ হাজার টাকার মতো ছোট অঙ্কের ডিভিডেন্ড পান। তিনি ওই টাকা ব্যাংক থেকে তুলে আবার বিও অ্যাকাউন্টে জমা করার ঝামেলা পোহাতে চান না। যদি বিওতে টাকা আসে, তাহলে হয়তো ওই টাকাগুলো পুনরায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হবে।’

এই বিপুল পরিমাণ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার পেছনে বর্তমান কমিশনের সক্রিয় ভূমিকা। এ ছাড়া বাজেটে কমপক্ষে বোনাস শেয়ারের সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, অন্যথায় পুরো বোনাস শেয়ারের ওপরে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে করারোপের শাস্তির বিধানের পাশাপাশি কমিশনের জেরার মুখে পড়তে হয়।

বর্তমান কমিশনের অধীনে ব্যবসা সম্প্রসারণ ছাড়া বোনাস শেয়ার দেয়া প্রায় অসম্ভব। এই বোনাস শেয়ার দিতে গেলে কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া নামমাত্র লভ্যাংশ দেয়া বা একেবারেই দেয় না এমন কোম্পানিগুলোকে ব্যাখ্যার জন্য কমিশনে তলব করা হয়। এসব কারণেই বোনাস শেয়ার দেয়ার প্রবণতা কমে এসেছে, বেড়েছে নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘কমিশনের শক্ত অবস্থানের কারণে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার পরিমাণ বেড়েছে। নগদ লভ্যাংশ বাজারের জন্য খুবই ইতিবাচক খবর। ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলে, আগামীতে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে। নগদ লভ্যাংশে বাজারে গতি সঞ্চার করে।’


আরও দেখুন

তারেক রহমানের ইতিবাচক রাজনীতি আশার সঞ্চার করছে:দুলু

নিজস্ব প্রতিবেদক,,,,,,,বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন,গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে তারেক …