নিউজ ডেস্ক:
কড়াকড়ির কারণে আমদানি নিয়ন্ত্রণের সুফল হিসেবে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে নভেম্বর শেষে ৮৯ কোটি ডলারে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, গত সেপ্টেম্বরে চলতি হিসাবের ঘাটতি ছিল ৫ বিলিয়ন ডলার। সেটা কমতে কমতে নভেম্বের শেষে ৮৯ কোটি ডলারে নেমেছে।
এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া ‘অ্যাকশনের’ দৃশ্যমান ফল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং দূর করতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় এলসি (ঋণপত্র) খোলা সংযত হয়েছে।
হুণ্ডি কমিয়ে আনতেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে জানিয়ে মেজবাউল বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক মূলত হুণ্ডি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। যদি হুণ্ডি বন্ধ করা যায়, তাহলে আমদানি-রপ্তানিতে ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং হবে না। কারণ হচ্ছে, হুণ্ডি করতে পারে বলেই ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং করার চেষ্টা করা হয়।’’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক
রোববার বিকালে বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের ‘ব্যাংকার্স সভা’ শেষে বৈঠকের বিষয়ে জানাতে গিয়ে মেজবাউল এসব কথা বলেন।
প্রতি তিন মাস পরপর অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে ব্যাংকারদের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘‘আমাদের মূল কনসার্ন হচ্ছে চলতি হিসাবের ঘাটতি। বিভিন্ন রকমের উদ্যোগের অংশ হিসেবে আমরা অপ্রয়োজনীয় এলসি খুলতে নিরুৎসাহিত করেছি। যার ফলাফল হিসেবে নভেম্বর শেষে চলতি হিসাবের ঘাটতি ১ বিলিয়নের নিচে নামিয়ে আনতে পেরেছি।
“আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি সমান সমান হয়ে যাবে।’’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) গত সেপ্টেম্বর শেষে ঘাটতি ছিল ৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন (৩৬১ কোটি) ডলার। গত আগস্টে যা ছিল দেড় বিলিয়ন ডলার।
এদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে নতুন এলসি খোলা হয়েছে ২৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ কম (টাকার অঙ্কে ৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার)। গত অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা হয়েছিল ২৮ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারের।
একক মাস হিসেবে অক্টোবরেও আগের তিন মাসের চেয়ে এলসি খোলার পরিমাণ কমে ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আগের অর্থবছরের অক্টোবরের চেয়ে কমেছে ৩৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০২১ সালের অক্টোবরে এলসি খোলা হয়েছিল ৭ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের।
অপরদিকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের আলোচিত সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার বা ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার।
নভেম্বরে এলসি খোলার হার আরও কম ছিল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র।
তিনি জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনার দিকেও নজর রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডলার বিক্রির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে যে তারল্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে আসছে, সে বিষয়টি তদারকিতে আছে।
বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশসহ কয়েকটিতে ঋণ কেলেঙ্কারির বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, ‘‘ঋণ তদারকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নিয়মিত কাজ। কয়েকটি ব্যাংকের বিষয়ে গণমাধ্যমে যে খবর এসেছে তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শন কার্যক্রম চালাচেছ। তা শেষ হলে আমরা এ বিষয়ে পরবর্তীতে জানাতে পারব।’’
এসময় তিনি আমানতকারীদের ‘আতঙ্কিত’ না হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
ব্যক্তি ঋণে ব্যাংকের সুদের হার ৯ শতাংশের উপরে নেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে মৌখিকভাবে সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে সংবাদ মাধ্যমের খবর।
এ নিয়ে ব্যাংকার্স সভায় আলোচনার বিষয়ে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, গৃহঋণ ছাড়া সব ধরনের ব্যক্তি ঋণের সুদহার ৯ থেকে উঠিয়ে ১২ শতাংশ নিতে পারবে ব্যাংক বলে তাদের জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক লিখিত কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদের সীমা বেঁধে দিয়ে ২০২০ সালের এপ্রিলে সার্কুলার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নির্দেশনা এখনও বহাল রয়েছে।
এ বিষয়ে মুখপাত্র মেজবাউল বলেন, এ নিয়ে ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনেক ব্যাংকই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে।
“যখন প্রয়োজন হবে তখন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। যখন সার্কুলার জারি করব, তখন কার্যকর হবে।“
তবে সেলিম আরএফ হোসেন জানিয়েছেন, অনেক ব্যাংকই নতুন ঋণে ১২ শতাংশ সুদে ব্যক্তি খাতে ঋণ দিতে শুরু করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ব্যক্তি ভোক্তা ঋণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ৪ থেকে ৯ শতাংশ, বেসরকারি খাতের ব্যাংক ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ এবং বিদেশি শাখার ব্যাংকগুলো ৬ থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ নিচ্ছে।
ব্যাংকার্স সভায় ১০ লাখ পর্যন্ত টাকা জমা প্রশ্ন ছাড়াই গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।