নিউজ ডেস্ক:
সরকারি হাট-বাজারের ইজারার আয়ের অর্থ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জটিল রোগের চিকিৎসায় অতিরিক্ত সহায়তার পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হলো। আগে এক্ষেত্রে সহায়তার পরিমাণ সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা ছিল, এখন তা বেড়ে হলো দুই লাখ টাকা।
তবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আগের মতোই সরকারি হাসপাতালে জটিল ও সাধারণ চিকিৎসার জন্য সাধারণভাবে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা সহায়তা পাবেন। আগে জীবদ্দশায় একবার এ সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হলেও এখন এ সহায়তা প্রতি বছরের জন্য দেওয়া হবে।
অন্যদিকে আগে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বা স্বামী চিকিৎসা সহায়তা পেলেও এখন সেই সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
নতুন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকারি হাট-বাজারের ইজারার আয়ের ৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় নীতিমালা, ২০২১’ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ২০২১ সালের নীতিমালা বাতিল করে গত ১৬ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ করা সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বিদ্যমান নীতিমালা বাতিল করে অধিকতর যুগোপযোগী করে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন নীতিমালায় মূলত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে জটিল রোগের চিকিৎসায় স্বাভাবিক বরাদ্দের বাইরে অতিরিক্ত এক লাখ টাকা দেওয়া হতো, সেখানে এখন দুই লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হবে। এছাড়া পদ্ধতিগত কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাছাড়া মোটামুটি আগের নীতিমালা বহাল আছে।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০১১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সরকারি হাট-বাজারের ব্যবস্থাপনা ইজারা পদ্ধতি ও এ থেকে প্রাপ্ত আয় বণ্টন সম্পর্কিত নীতিমালা এবং একই বিভাগের ২০১২ সালের ৭ মে এর পরিপত্র অনুযায়ী দেশের সরকারি হাট-বাজারের ইজারার আয়ের ৪ শতাংশ অর্থ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা করার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।
চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে যা বলা হয়েছে নতুন নীতিমালায়
নতুন নীতিমালায় বলা হয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতাল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়, সময় সময়, জটিল ও সাধারণ চিকিৎসার জন্য বছরে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকার চিকিৎসা সুবিধা দিতে পারবে।
একইসঙ্গে বলা হয়েছে, বিশেষায়িত হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জটিল রোগের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই পরিমাণের (৭৫ হাজার) চেয়ে বেশি টাকার প্রয়োজন হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সুপারিশে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করা যাবে।
মুমূর্ষু রোগীর জরুরি অপারেশন ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিবেচনা অনুযায়ী দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করা যাবে। তবে এ বিষয়ে পরবর্তীসময়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভূতাপেক্ষ অনুমোদন নিতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক হাসপাতালের অনুকূলে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার ব্যয়, চিকিৎসা সেবার মান, আয়ন-ব্যয়ন এবং ব্যয় যাচাইকরণসহ সার্বিকভাবে চিকিৎসা বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হওয়ার বিষয়টি পদ্ধতিগতভাবে সুনির্দিষ্ট আদেশ বা পরিপত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে বলে নীতিমালায় জানানো হয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বা স্বামী, সন্তান বা অন্য কেউ চিকিৎসা সুবিধা পাবেন না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে নীতিমালায়।
এতে আরও বলা হয়, বীর মুক্তিযোদ্ধদেরকে কোনোভাবেই নগদ বা চেকের মাধ্যমে অর্থ দেওয়া যাবে না।
সরকারি ও বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা নিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কোনো আবেদন করতে হবে না। তবে চিকিৎসা সুবিধা পেতে মুক্তিযোদ্ধার সপক্ষে প্রয়োজনীয় প্রমাণ বা মন্ত্রণালয়ের ইস্যু করা পরিচয়পত্র দাখিল করতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচিতিমূলক দলিলপত্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এমআইএস তালিকা বা শহীদ গেজেট বা খেতাবপ্রাপ্ত বা যুদ্ধাহত গেজেটের সঙ্গে যাচাই করবে বলে নীতিমালায় জানানো হয়।
আগে জটিল রোগের চিকিৎসা অনুদানবিষয়ক জেলা বাছাই কমিটি ও অনুদানবিষয়ক কেন্দ্রীয় মঞ্জুরি কমিটি থাকলেও নতুন নীতিমালায় তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
যা ছিল আগের নীতিমালায়
নীতিমালায় বলা হয়েছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তার স্ত্রী বা স্বামীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকার আর্থিক চিকিৎসা অনুদান দিতে পারবে।
মন্ত্রণালয় বরাদ্দ করা অর্থ দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার ব্যয়, চিকিৎসাসেবার মান, আয়ন-ব্যয়ন এবং ব্যয় যাচাইসহ সার্বিকভাবে চিকিৎসা বাবদ বরাদ্দ অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হওয়ার বিষয়টি পদ্ধতিগতভাবে সুনির্দিষ্ট আদেশের মাধ্যমে নিশ্চিত করবে। সরকারি হাসপাতালের প্রধান বা তত্ত্বাবধায়ক এবং বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক বা অধ্যক্ষ, আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধার একাধিক স্ত্রী থাকলে চিকিৎসায় সব স্ত্রী একত্রে মোট সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা পাবেন।
কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তার স্ত্রী বা স্বামী কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হলে এবং ওই রোগের চিকিৎসায় দেশে বা বিদেশে সীমার বেশি অর্থ ব্যয় হলে অতিরিক্ত হিসাবে সরকারের কাছ থেকে এককালীন সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার আর্থিক অনুদান পাবেন বলেও আগের নীতিমালায় উল্লেখ ছিল।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তার স্ত্রী বা স্বামী বিশেষ চিকিৎসা অনুদান জীবদ্দশায় একবারের বেশি পাবেন না।
জটিল রোগের চিকিৎসা অনুদানবিষয়ক জেলা বাছাই কমিটি থাকবে। সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন হবেন এ কমিটির সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন) নেতৃত্বে হবে জটিল রোগের চিকিৎসা অনুদানবিষয়ক কেন্দ্রীয় মঞ্জুরি কমিটি।
বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর নাম
দেশের ২৪টি বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। নীতিমালায় হাসপাতালগুলোর তালিকা দেওয়া হয়েছে। আগে এ হাসপাতালের সংখ্যা ছিল ২২টি।
হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, জাতীয় হৃদরোগ ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এবং গবেষণা ইনস্টিটিউট।