নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে আমাদের ব্যবস্থাটা আমাদের নিজেদেরই করে নিতে হবে। এ জন্য আজ আপনাদের সবাইকে বলব, আজ এখানে যারা উপস্থিত, আসলে বৃক্ষরোপণ, সবুজায়ন বা উপকূলকে আপনারা যত বেশি এ রকম বৃক্ষ আচ্ছাদিত করতে পারবেন, তত বেশি কিন্তু আমরা দেশকে বাঁচাতে পারব।’
কার্বন নিঃসরণে দায়ী না হয়েও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। প্যারিস ঘোষণা অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোর ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা থাকলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি। এমন বাস্তবতায় ক্ষতিপূরণের আশায় বসে না থেকে দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদের করে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ জন্য বৃক্ষরোপণের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় জানান তিনি।
ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২২’ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় ৫০টি মুজিব কিল্লা, ৮০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও ২৫টি জেলা ত্রাণগুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনো রকম অ্যামিশন (কার্বন নিঃসরণ) করে না। বাংলাদেশ ক্ষতিকারক না। কিন্তু বাংলাদেশ সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। উন্নত দেশগুলো, তারা উন্নয়ন করে ফেলেছে। তার ফলে আজকে আমরা ভুক্তভোগী।’
ভুক্তভোগী দেশগুলোর ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবি তোলার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আমরা অনেক প্রতিশ্রুতি পাই, কিন্তু বাস্তবে কতটুকু সহযোগিতা পাওয়া যায়? তার পরও আমি বলব যে, প্যারিস চুক্তি হওয়ার ফলে একটা আশার প্রদীপ জ্বলে আছে। পাশাপাশি গ্লাসগোতেও কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে কী হয়…
‘কিন্তু আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে আমাদের ব্যবস্থাটা আমাদের নিজেদেরই করে নিতে হবে। এ জন্য আজ আপনাদের সবাইকে বলব, আজ এখানে যারা উপস্থিত, আসলে বৃক্ষরোপণ, সবুজায়ন বা উপকূলকে আপনারা যত বেশি এ রকম বৃক্ষ আচ্ছাদিত করতে পারবেন, তত বেশি কিন্তু আমরা দেশকে বাঁচাতে পারব।’
জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে সমৃদ্ধ করার পথ বের করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই পথেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে অবশ্যই আমাদের যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছি, তা আমরা সফল করব।’
করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যুদ্ধ ঘিরে দেয়া নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ আমরা এগিয়ে যেতে পারব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙালি জাতিকে কেউ আর দাবায়ে রাখতে পারবে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মনুষ্য দুর্যোগ, সব মোকাবিলা করে বাংলাদেশ তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে।’
বন্যা ক্ষতি করলেও তা প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তুলে ধরেন তার ব্যাখ্যা।
তিনি বলেন, ‘ভূমি ক্ষয় হয় বৃষ্টিতে। আমাদের ব-দ্বীপ, বন্যা আসে, বন্যা আমাদের প্রয়োজন। সারা বছর বৃষ্টিতে ভূমির যে ক্ষয় হয়, বন্যায় পলি এসে তা আবার পুনরোদ্ধার হয়। কিন্তু বন্যায় মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে আমরা সতর্ক। সে জন্য বন্যাপ্রবণ এলাকায় বন্যা সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ করে দিচ্ছি।’
বাংলাদেশ নামের এই ব-দ্বীপ রক্ষায় ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি পরিকল্পনার সঙ্গে আমাদের দেশটাকে যেকোনো দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমরা সব সময় সচেতন। রাস্তাঘাট, পুল ও ব্রিজ করার সময় আমরা লক্ষ্য রাখি আমাদের দেশে যখন অতিবৃষ্টি হবে, বন্যা হবে তখন পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাটা যেন থাকে।’
দুর্যোগ সহনশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ একটা স্থান পেয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘যতই দুর্যোগ আসুক আমরা সেটা মোকাবিলা করতে সক্ষম। এটা আমরা প্রমাণ করেছি। কিন্তু এটা অব্যাহত রাখতে হবে। আবার ওই রকম কেউ যেন না আসে ক্ষমতায়। যত মানুষ মরে যাওয়ার কথা ছিল, তত মানুষ মরেনি- এই কথা বলে দায়-দায়িত্বহীনতার পরিচয় যেন কেউ না দেয়, ভবিষ্যতে সেদিকেও দেশবাসীকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘বাংলাদেশ একটা অদ্ভূত দেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগও যেমন মোকাবিলা করতে হয় আবার অগ্নিসন্ত্রাসের মতো দুর্যোগও আমাদের মোকাবিলা করতে হয়। যেটা মানুষ দ্বারা সৃষ্ট। চলন্ত গাড়িতে আগুন, বাসে আগুন, লঞ্চে আগুন। এটাই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য।’
বাংলাদেশে নানা ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় গবেষণার ওপর জোর দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আজ সেই গবেষণার মাধ্যমে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, লবণাক্ত সহিষ্ণু ধান, জলমগ্ন বা ক্ষরা সহিষ্ণু ধান, সেই বীজ ইতোমধ্যে উদ্ভাবন করা হয়েছে। কিছু আমরা বাজারজাত করতেও সক্ষম হয়েছি। সেদিক থেকে খাদ্য নিরাপত্তাটাও এর সঙ্গে সম্পর্কিত। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও কিন্তু আমরা আমাদের গবেষণা অব্যাহত রেখেছি। যার ফলে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিরাপত্তাটা আমরা করতে পারি, সে ব্যবস্থাটাও আমরা নিয়েছি।’
ভূমিকম্প সহনীয় করে বাড়ি ও বহুতল ভবন নির্মাণে আবারও নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করার জন্য যখনই যে ঘরবাড়ি করবেন, বিশেষ করে শহরে যে উঁচু দালান বা বহুতলবিশিষ্ট দালান করা হয়, এই ভূমিকম্প যাতে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার জন্য আমি অনুরোধ করছি। বিশেষ করে এই বিল্ডিংগুলো যারা বানান, যখনই প্ল্যান করেন তখনই এই বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া দরকার।’